Couple Death

বিয়ের কেনাকাটা করতে গিয়ে যুগলের মৃত্যু ট্রাকের ধাক্কায়, নিউটাউনে

পাড়ার সকলের কাছেই অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন ওই যুবক। এক সময়ে তিনি বরাহনগর স্পোর্টিং ক্লাবের ক্রিকেট দলের অধিনায়কও ছিলেন। প্রথম এবং দ্বিতীয় ডিভিশনে ক্রিকেটও খেলেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:০৮
Share:

দীপায়ন মুখোপাধ্যায় এবং মেধা পাল।

দুই পরিবারের সম্মতিতে স্থির হয়েছিল আগামী বছর চার হাত এক হবে। তাই করোনা পরিস্থিতিতেও ছেলে-মেয়ের বিয়ের প্রস্তুতি সেরে রাখছিল বরাহনগরের মুখোপাধ্যায় ও বিশরপাড়ার পাল পরিবার। কিন্তু শনিবার রাতের দুর্ঘটনা সেই সব কিছুকেই স্তব্ধ করে দিল।

Advertisement

স্কুটারে চেপে বিয়ের কেনাকেটা করতে বেরিয়ে নিউ টাউনে ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু হল ওই তরুণ ও তরুণীর। পুলিশ জানায়, তাঁদের নাম দীপায়ন মুখোপাধ্যায় (২৯) ও মেধা পাল (২৭)। ওই রাতে নিউ টাউনের দিক থেকে বিমানবন্দরের দিকে যাচ্ছিলেন দু’জনে। স্কুটারটি চালাচ্ছিলেন দীপায়ন, পিছনে বসেছিলেন মেধা। নারকেলবাগান মোড়ে নির্মীয়মাণ সাবওয়ের কাছে একটি ট্রাক পিছন থেকে এসে স্কুটারে ধাক্কা মারলে দু’জনেই রাস্তায় ছিটকে পড়েন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁদের উদ্ধার করে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। পলাতক ট্রাকচালকের খোঁজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ফাঁকা রাস্তা পেলে অথবা রাতের দিকে গাড়ি চলাচল কম থাকার সুযোগে লরি, ট্রাক বেপরোয়া ভাবে চলাচল করে নিউ টাউনের রাস্তায়।

বরাহনগরের তাঁতিপাড়ার দেশবন্ধু রোড (ইস্ট)-র বাসিন্দা দীপায়ন পাঁচ নম্বর সেক্টরের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী। বাবা প্রদীপ মুখোপাধ্যায় অনেক দিন আগেই মারা গিয়েছেন। মা মুক্তিদেবীর একমাত্র ভরসা ছিলেন দীপায়ন। আবার বিশরপাড়ার উত্তর নীলাচলের বাসিন্দা নবীনকিশোর পাল এবং সোনালি পালের একমাত্র মেয়ে মেধা। বেঙ্গালুরুতে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী মেধা লকডাউনের সময়ে কলকাতায় বদলি হয়েছিলেন। বিয়ের ঠিকঠাক হয়ে যাওয়ায় মাঝেমধ্যেই দেখা করতেন দীপায়ন ও মেধা। অফিস ছুটির দিন বিয়ের কেনাকেটা করতে ও ঘুরতেও বেরোতেন দু’জনে। তেমনই শনিবারও তাঁরা নিউ টাউনের একটি শপিং মলে গিয়েছিলেন কেনাকাটা করতে।

Advertisement

আরও পড়ুন: রেললাইন ধরে ছুট চোরেদের, দৌড়ে ধরে ফেলল পুলিশও

রবিবার নবীনবাবু জানান, শনিবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ শেষ বারের মতো মেয়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল মা সোনালিদেবীর। সেই সময়ে মেধা জানিয়ে ছিলেন, তিনি ও দীপায়ন রাতের খাবার খেয়ে ফিরবেন। কিন্তু রাত সাড়ে ১০টা বেজে গেলেও মেয়ে কিংবা হবু জামাইয়ের ফোন না পেয়ে চিন্তায় পড়ে যান সোনালিদেবীরা। এর পরেই মেধার ফোন থেকে অন্য এক অপরিচিত ব্যক্তি সোনালিদেবীকে ফোন করে দুর্ঘটনার খবরটি জানান। মেধা ও দীপায়ন দু’জনেই মারা গিয়েছেন শোনার পর থেকেই বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন সোনালিদেবী। নবীনবাবু বলেন, ‘‘একমাত্র মেয়ের বিয়ে, তাই প্রায় সব আয়োজনই সেরে ফেলেছিলাম। খুব আনন্দে ছিলাম। আমাদের সব শেষ হয়ে গেল।’’

রবিবার বিকেলে শববাহী গাড়িতে বরাহনগরে এসে পৌঁছয় দীপায়ন ওরফে গুড্ডুর মৃতদেহ। ঘরের ভিতর শোয়ানো একমাত্র ছেলের মুখ দেখে নিজেকে স্থির রাখতে পারলেন না মা মুক্তিদেবী। বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ে তাঁর আক্ষেপ, ‘‘কেন গেলি তোরা? আর কে আমায় মা বলে ডাকবে? কে আমার খোঁজ নেবে? এক বার মা বলে ডাক!’’

আরও পড়ুন: ‘এসইজ়েড’ অসাম্য কমায়? গবেষণায় এ বার যাদবপুরও

পাড়ার সকলের কাছেই অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন ওই যুবক। এক সময়ে তিনি বরাহনগর স্পোর্টিং ক্লাবের ক্রিকেট দলের অধিনায়কও ছিলেন। প্রথম এবং দ্বিতীয় ডিভিশনে ক্রিকেটও খেলেছেন। শোকস্তব্ধ প্রতিবেশীদের কথায়, ‘‘মা ও ছেলের সুন্দর একটা পরিবার ছিল। সামনেই ছেলের বিয়ে নিয়ে খুব আনন্দে ছিলেন মা। সব যেন কেমন ওলটপালট হয়ে গেল।’’ অন্য দিকে একই রকম ভাবে পাড়ার মেয়ের অকাল মৃত্যুকে মেনে নিতে পারছেন না বিশরপাড়ার বাসিন্দারাও। জানাচ্ছেন, আবৃত্তি, নাটক, গান-সহ একাধিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত থাকতেন মেধা। পুজোর ছুটি বা অন্য কোনও সময়ে বাড়িতে এলেই পাড়ার যে কোনও অনুষ্ঠানে যোগ দিতেন।

এ দিন বাড়ি থেকে দীপায়নের দেহ নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর প্রিয় ক্লাবে। সেখানেও তখন মানুষের ঢল। তাঁদের কয়েক জন জানান, এক সময়ে দীপায়ন যখন ব্যাট হাতে চার-ছয় হাঁকাতেন তখন এমন ভাবেই ভিড় করে তা দেখতেন লোকজন। প্রিয় ছাত্রের মুখ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর এক সময়ের কোচ প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সতীর্থরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন