Gold Merchant Death

নকল সোনা বেচার অভিযোগে বেধড়ক মারধর, মৃত ব্যবসায়ী

শনিবার গভীর রাতে গুরুতর আহত দু’জনকে বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। চিকিৎসকেরা মহেন্দ্রকে মৃত বলে জানান।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২৫ ০৮:৪৬
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

নকল সোনা বন্ধক দিয়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল ভিন্ রাজ্যের দুই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। সেই আক্রোশে দু’জনকে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠল এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে। মারধরে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গুরুতর আহত তাঁর সঙ্গী। শনিবার রাতে এই ঘটনাটি ঘটেছে পর্ণশ্রী থানা এলাকার ধর্মরাজতলায়। ঘটনার তদন্তে নেমে আট জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, মৃত ব্যবসায়ীর নাম মহেন্দ্র সিংহ (৫৫)। আহত ব্যবসায়ী দীপক সিংহ। দু’জনেই রাজস্থানের বাসিন্দা। শনিবার গভীর রাতে গুরুতর আহত দু’জনকে বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। চিকিৎসকেরা মহেন্দ্রকে মৃত বলে জানান। চিকিৎসা চলছে দীপকের। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে আট জনকে রাতেই গ্রেফতার করে পর্ণশ্রী থানা।

ধৃতদের রবিবার আলিপুরের মুখ্য বিচার বিভাগীয় আদালতে পেশ করা হয়। বিচারক আট জনকেই ৩ জুলাই পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। সরকারি আইনজীবী সৌরীন ঘোষাল বলেন, ‘‘আহত ব্যবসায়ী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর বয়ান নথিভুক্ত করা হয়েছে। ওই দু’জনকে অস্ত্র দিয়ে মারধর এবং এক জনকে খুন করা হয়। ওই অস্ত্র উদ্ধার করতে এবং ঘটনার পুনর্নির্মাণের জন্য ধৃতদের পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছিল।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার রাত আড়াইটে নাগাদ পর্ণশ্রী থানার পুলিশ রুটিন টহলদারির সময়ে ধর্মরাজতলায় রাস্তার পাশে দীপককে পড়ে থাকতে দেখে। তাঁর শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল। রক্তাক্ত ওই যুবক পুলিশকে জানান, তাঁকে এবং তাঁর এক ব্যবসায়ী-আত্মীয়কে ডেকে এনে কয়েক জন মিলে মারধর করেছে। শুরু হয় অন্য জন, অর্থাৎ মহেন্দ্রর খোঁজ। এন জি সাহা রোডের রাস্তার পাশ থেকে উদ্ধার করা হয় মহেন্দ্রকে। দ্রুত তাঁদের হাসপাতালে পাঠানো হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দীপক পুলিশকে জানান, সঞ্জীব কর্মকার, বিশ্বজিৎ বিশ্বাস, চন্দন ঘোষের নাম। অভিযুক্তেরা তাঁদের দু’জনকে ডেকে একটি নির্মীয়মাণ বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর করে। তদন্তে জানা যায়, মহেন্দ্র এবং দীপক রাজস্থানের বাসিন্দা। কলকাতায় চাদর, কম্বলের ব্যবসা করতেন তাঁরা।

ধৃতেরা আবার পুলিশকে জানিয়েছে, কম্বল-চাদরের ব্যবসার আড়ালে নকল সোনা বিক্রি করতেন মহেন্দ্র ও দীপক। সোনার ব্যবসায়ী চন্দনের অভিযোগ, দিন কয়েক আগে তাদের দোকানে এসে নকল সোনা বিক্রি এবং বন্ধক রেখে কয়েক হাজার টাকা নিয়ে গিয়েছিলেন রাজস্থানের দুই ব্যবসায়ী। পরে সে সব পরীক্ষা করে নকল বুঝতে পেরে সোনা কেনার নামে দীপক এবং মহেন্দ্রকে ডেকে আনে তারা।

সোনা কিনতে চেয়ে শনিবার রাতে দুই ব্যবসায়ীকে চন্দন এবং বিশ্বজিৎ পর্ণশ্রীতে ডেকে পাঠায়। সেই মতো দুই ব্যবসায়ী রাতে দোকানে এলে একটি নির্মীয়মাণ তেতলা ভবনে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। অস্ত্র দিয়েও মারধর করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।

তদন্তে নেমে রাতেই তিন অভিযুক্ত-সহ ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে মোট আট জনকে গ্রেফতার করা হয়। সোনার দোকানটি থেকে বেশ কিছু নকল সোনাও উদ্ধার হয়েছে। অভিযুক্তদের থেকে ২৮টি সোনার মঙ্গলসূত্র মিলেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, দীপকের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আঘাতের চিহ্ন মিলেছে মহেন্দ্রের দেহেও। তবে প্রশ্ন উঠছে, দু’জনকে একসঙ্গে ডেকে মারধর করা হলেও কী ভাবে আলাদা জায়গা থেকে উদ্ধার করা হল তাঁদের? উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা।

রবিবার ঘটনাস্থলে যান লালবাজারের গোয়েন্দারা। আসেন সায়েন্টিফিক উইংয়ের আধিকারিকেরাও। তাঁরা ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন। তদন্তকারী এক কর্তা বলেন, ‘‘ভিন্ রাজ্যের চিকিৎসাধীন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয়েছে। ঘটনায় আরও কেউ যুক্ত আছে কিনা, দেখা হচ্ছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করা হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন