সানি পার্ক

আবাসনের মুখে কুলুপ, থমকে পাড়া

অভিজাত তল্লাট বলে এমনিতেই চুপচাপ। তবে শনিবার সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি করতে এসে স্কুলছাত্র আবেশ দাশগুপ্তর রহস্যমৃত্যুর পরে থম মেরে গিয়েছে বালিগঞ্জের সানি পার্ক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৬ ০১:২৫
Share:

দুর্ঘটনার পরে তদন্ত। শনিবার রাতে।

অভিজাত তল্লাট বলে এমনিতেই চুপচাপ। তবে শনিবার সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি করতে এসে স্কুলছাত্র আবেশ দাশগুপ্তর রহস্যমৃত্যুর পরে থম মেরে গিয়েছে বালিগঞ্জের সানি পার্ক।

Advertisement

অনভিপ্রেত ঘটনায় অভিজাত, ১৮০টি ফ্ল্যাটের সানি পার্ক অ্যাপার্টমেন্ট্‌স-এর বাসিন্দাদের অনেকেই যেমন বিহ্বল, তেমনই আতঙ্কিত তাঁদের কেউ কেউ। শনিবারের ঘটনা প্রসঙ্গে মুখ খুলতে চাইছেন না প্রায় কেউই। যেন কোনও শক্তি এক অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তাঁদের কথা বলার উপরে।

আবাসনের নিরাপত্তারক্ষীকে ‘অমিত চৌধুরীর ফ্ল্যাটে যেতে চাই’ বলতেই তাঁর অপ্রাসঙ্গিক উত্তর, ‘‘কাল রাতে কী হয়েছিল, আমি জানি না। আমার তো এখানে ডিউটি ছিল। ও দিকে যাইনি।’’

Advertisement

পাখি পড়ানোর মতো কেউ যে তাঁকে শিখিয়ে রেখেছেন, সেটা বোঝা গেল। তবে পুলিশের মতে, খুন নয়, দুর্ঘটনা। তা হলে এত রাখঢাক, এত গোপনীয়তা কেন? এর উত্তরও নেই কারও কাছে। এক নিরাপত্তারক্ষীর কথায়, ‘‘কী করব? আমাদের উপরে গতকালের বিষয়ে মুখ না খোলার নির্দেশ রয়েছে।’’ কিন্তু কে দিয়েছে ওই নির্দেশ? সেটা অবশ্য বলেননি ওই রক্ষী।

এ সব প্রশ্নেরও যাতে যতটা সম্ভব মুখোমুখি না হতে হয়, সেই জন্য কার্যত মাছি গলতে দেওয়া হচ্ছে না সানি পার্কে। রবিবার সকাল থেকে এতটাই কঠোর নিরাপত্তারক্ষীরা। পুলিশ বাদে বহিরাগত বা কোনও আগন্তুকের প্রবেশ নিষেধ। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের ক্ষেত্রে তো নিয়ম আরও কড়া। পুলিশের কোনও কর্তা ঢোকার আগে মোটরবাইকে চেপে পুলিশকর্মী আবাসনের মূল ফটকে দাঁড়িয়ে থাকা নিরাপত্তা রক্ষীকে জানিয়ে যাচ্ছেন, ‘‘আমাদের একটা গাড়ি ঢুকবে। বড় সাহেব আসবেন।’’

কিছুক্ষণ পরেই এলেন কলকাতা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত গোয়েন্দাপ্রধান বিশাল গর্গ। তার পরে ডিসি (এসইডি) গৌরব শর্মা। সেই সঙ্গে লালবাজারের হোমিসাইড শাখার গোয়েন্দারাও এ দিন ঘটনাস্থলে যান নমুনা সংগ্রহের জন্য।

\

রবিবার গেট আটকে রেখেছেন আবাসনের রক্ষী।— নিজস্ব চিত্র

আসলে নিজেদের পরিচিত সানি পার্কই এ দিন বাসিন্দাদের কাছে অপরিচিত এক মহল্লায় পরিণত হয়েছে। সেটা ফুটে উঠছিল তাঁদের চোখ-মুখেই। লাল রঙের বড় বড় গাড়ি দেখে রীতিমতো থতমত কাঁধে গিটারের ব্যাগ নিয়ে নামা বছর সাতেকের এক বালিকা। ওই আবাসনের আর এক বাসিন্দা এ দিন বলেন, ‘‘কাল আমি যা রক্ত দেখেছি, তা জীবনে কখনও দেখিনি। আমি হতচকিত হয়ে গিয়েছি। কখনও ভাবতেও পারিনি আমার বসতি এলাকায় এ রকম ভয়ঙ্কর কিছু দেখতে হবে।’’ কিছু দিনের জন্য বিদেশ গিয়েছিলেন রাকেশ শর্মা। এ দিনই ফিরেছেন তিনি। বিমানবন্দর থেকে বাড়িতে এসে গাড়ি থেকে নেমেই নিরাপত্তারক্ষীকে প্রশ্ন করেন, ‘‘কী হয়েছে? এত পুলিশ কেন?’’ নিরাপত্তারক্ষী তাঁকে মূল ফটক খুলে বলেন, ‘‘স্যার, তাড়াতাড়ি ভিতরে আসুন। তার পরে সব কিছু বলছি।’’

নাম না প্রকাশের শর্তে এক রক্ষী জানান, শনিবার সন্ধ্যায় প্রথম নয়, সানি পার্কে লেখক অমিত চৌধুরীর ফ্ল্যাটে তাঁর মেয়ের বন্ধুবান্ধবেরা মাঝেমধ্যেই মদ্যপান-সহ হইহুল্লোড় করত। আর সেই মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে কয়েক জন বন্ধুর দেওয়া সারপ্রাইজ পার্টিতে এসেই প্রাণ হারিয়েছে আবেশ। অমিত চৌধুরী অবশ্য এ দিন এক লিখিত বিবৃতিতে জানান, তিনি ও তাঁর স্ত্রী মদ্যপান করেন না।

এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ সানি পার্ক ফ্ল্যাট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কিশোর ভিমানি আবেশের রহস্যমৃত্যুকে দুর্ঘটনা বলেই জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘গতকাল একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। যা শুনে আমরা সকলেই মর্মাহত। আমরা পুলিশকে সব রকম সহযোগিতা করব। লনে সিসিটিভি ফুটেজ না থাকায় তদন্তে অসুবিধে হচ্ছে, বুঝতে পারছি।’’ এ দিন কিশোর ভিমানি যখন সানি পার্কের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা সাংবদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন ভিতর থেকে অমিতবাবু এক বার উঁকি দিয়েই ঢুকে যান। তিনি কোনও কথা বলতে চাননি। সাংবাদিকেরা তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চান, সেটা জানানোর জন্য নিরাপত্তারক্ষীরা ইন্টারকমে তাঁর সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও প্রতি বার তিনি ফোন কেটে দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন