বিপত্তি: এ ভাবেই রুদ্ধ হয়ে যায় নিকাশি নালা। ফাইল চিত্র
রাতের কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই ফের জলমগ্ন শহরের বহু রাস্তা। কিন্তু জল জমল কেন? কলকাতার মেয়র অবশ্য বল ঠেলে দিয়েছেন প্লাস্টিকের কোর্টে। তাঁর বক্তব্য, প্লাস্টিকের প্যাকেট জমে গালিপিট আটকে যাওয়ার ফলেই জল বেরোতে পারে না। দীর্ঘক্ষণ জমে থাকে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, প্লাস্টিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বও তো পুরসভার। তারা তা হলে কী করে?
বুধবার সারা রাত বৃষ্টির জেরে উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার বেশ কিছু রাস্তা জলের তলায় চলে যায়। বারবার কেন এমন অবস্থা হয়, তা নিয়ে প্রায়ই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় পুর প্রশাসনকে। বৃহস্পতিবার সেই প্রশ্নের উত্তরে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘রাস্তার গালিপিটে প্লাস্টিক আটকে জল বেরোতে পারছে না। রাস্তায় জমে থাকছে।’’ তা হলে প্লাস্টিকের ব্যাগ নিয়ন্ত্রণে পুরসভা সচেষ্ট হয় না কেন?
প্রশ্নটা যে অমূলক নয়, তা মেনে নিয়েছেন পুরকর্তারাও। প্লাস্টিক রুখতে আগে কী ধরনের অভিযান হয়েছে, পুরসভার পরিবেশ দফতরের মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দারের কাছ থেকে তা জেনে নেন মেয়র। পরে মেয়র বলেন, ‘‘প্লাস্টিকের প্যাকেট ৫০ মাইক্রন বা তার বেশি হলে তা বৈধ। কিন্তু মাইক্রনের হিসেবে গরমিল করে অবাধ প্লাস্টিকের ব্যবহার আটকাতে হবে। তার জন্য কঠোরতম পদক্ষেপ করতেও প্রস্তুত পুর প্রশাসন।’’ বর্ষার আগেই এ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে চায় পুরসভা, জানিয়েছেন মেয়র।
এ দিনের বৃষ্টিতে মধ্য কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিট, মুক্তারামবাবু স্ট্রিট থেকে শুরু করে দক্ষিণ কলকাতার সাদার্ন অ্যাভিনিউ, লেক রোড-সহ শহরের গোটা চল্লিশেক ওয়ার্ডের কোনও না কোনও রাস্তায় জল জমে যায়। জমা জল বেশি ক্ষণ না থাকলেও কেন তা রোখা যাচ্ছে না, তা ভাবিয়ে তোলে পুর প্রশাসনকে। পুরসভা সূত্রের খবর, বছর দশেক আগেও বৃষ্টি হলে দু’তিন দিন বা তারও বেশি সময় ধরে জলে ডুবে থাকত রাস্তা। তখন মূলত মাটির নীচে জমে থাকা পলির কারণেই জল বেরোতে পারত না। কয়েক বছর হল, নিকাশি ব্যবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে দাবি পুরসভার। যে কারণে বৃষ্টির জমা জল খুব বেশি ক্ষণ জমে থাকে না। তবে এখনও যে কয়েক ঘণ্টা জল জমে থাকছে, তার জন্য প্লাস্টিকই মূলত দায়ী বলে মনে করছেন নিকাশি দফতরের আধিকারিকেরা।
পুরসভায় দীর্ঘদিন ধরে নিকাশি দফতরের ডিজি-র দায়িত্বে রয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার অমিত রায়। তিনি জানান, নিকাশির উন্নতি হলেও গালিপিটে প্লাস্টিক জমে আটকে যায় জলের প্রবাহ। তখন কী করা হয়? অমিতবাবু বলেন, ‘‘কোথাও জল জমে থাকলে কর্মীরা সেখানে পৌঁছে প্রথমেই দেখেন গালিপিটের অবস্থা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সেখানে প্লাস্টিক জমে আছে। তার ফলেই বেরোতে পারছে না জল।’’ তিনি জানান, কর্মীরা লাঠি দিয়ে গালিপিট পরিষ্কার করতেই হু হু করে জল নেমে যায়। এ দিনও শহরের রাস্তায় সে ভাবেই জল নামানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
কিন্তু প্লাস্টিক নিয়ন্ত্রণ না করলে এই সমস্যা তো চলতেই থাকবে। মেয়র পারিষদ স্বপনবাবু বলেন, ‘‘প্লাস্টিক পরিবেশের বড় শত্রু। আইন করে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করা দরকার।’’ এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন তিনি। স্বপনবাবু জানান, কলকাতা শহরে বেশ কয়েক বার প্লাস্টিকের (৫০ মাইক্রনের কম) ব্যবহার আটকাতে সচেতনতা অভিযান করা হয়েছে। কিন্তু বিশেষ লাভ হয়নি। তাঁর মতে, প্লাস্টিক বন্ধ করতে হলে প্লাস্টিকের কারখানায় অভিযান চালানো প্রয়োজন। কিন্তু পুরসভার লাইসেন্স দফতরের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, শহরে ট্রেড লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোনও প্লাস্টিক কারখানা নেই। তাই কিছু করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে পুলিশ এবং প্রশাসন একযোগে অবৈধ প্লাস্টিক কারখানার বিরুদ্ধে কঠোর হলে কিছু হতে পারে বলে ধারণা পুরকর্মীদের।