চোর সন্দেহে ফের গণপিটুনি, হাওড়ার পর এ বার লেক টাউনে

বুধবার ফের খাস কলকাতার লেক টাউনে ভিআইপি রোডের ধারে দেখা গেল, মলিন পোশাক পরা দুই যুবককে রেলিংয়ে বেঁধে পেটাচ্ছেন অন্তত সাত জন ব্যক্তি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৪০
Share:

অমানবিক: রেলিংয়ে হাত-পা বেঁধে, ফ্লেক্সে আগুন ধরিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে যুবককে। বুধবার, ভিআইপি রোডে। নিজস্ব চিত্র

চলতি মাসের প্রথমে হাওড়ায় এক যুবককে পিছমোড়া করে বেঁধে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছিল। সবটাই ছিল স্রেফ সন্দেহের বশে! বাসিন্দাদের বক্তব্য ছিল, এলাকায় পরপর ঘটে যাওয়া কয়েকটি চুরিতে ওই যুবক জড়িত। পরে জানা যায়, ওই যুবক চোর তো ননই, বরং সুস্থ থাকলে মাঝেমধ্যে তিনি হাওড়া সিটি পুলিশের হয়ে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করে থাকেন।

Advertisement

বুধবার ফের খাস কলকাতার লেক টাউনে ভিআইপি রোডের ধারে দেখা গেল, মলিন পোশাক পরা দুই যুবককে রেলিংয়ে বেঁধে পেটাচ্ছেন অন্তত সাত জন ব্যক্তি। এক জনের দু’টি হাত পিছমোড়া করে দড়ি দিয়ে রেলিংয়ের সঙ্গে বাঁধা। বাঁধা আছে পা দু’টিও। পাশেই তাঁর সঙ্গীর বাঁ হাত রেলিংয়ের সঙ্গে বাঁধা। এর পরে লাঠি হাতে চলছে শাসন। এবং এখানেও সেই চোর সন্দেহ!

ভিআইপি রোড দিয়ে যাওয়ার সময়ে এ দিন কয়েক জন ঘটনার ভিডিয়ো করেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, অন্তত সাত জন ব্যক্তি ওই দু’জনকে রেলিংয়ে বেঁধে মারধর করছেন। এক জন ফ্লেক্সের টুকরোয় আগুন ধরিয়ে লাঠির সাহায্যে সেটি তুলে পিছমোড়া করে বাঁধা যুবকের শরীরের কাছে নিয়ে যাচ্ছেন। ভিডিয়োয় তাঁকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘না বললে পুড়িয়ে মারব। তাড়াতাড়ি বল, না হলে পুঁতে দেব।’’ শাস্তিপ্রদানকারীদের মধ্যেই আর এক জন তাঁকে নিরস্ত করেন। অন্য এক ব্যক্তি তখন লাঠি হাতে চাবুক মারার ঢঙে ওই যুবককে পেটাচ্ছেন। প্রতি আঘাতে চিৎকার করে উঠছেন ওই যুবক। তাতে অবশ্য যিনি মারছেন, তাঁর কোনও হেলদোল নেই। তাঁর মুখে তখন একটাই কথা, ‘‘বল কোথায় রেখেছিস? তাড়াতাড়ি বল।’’ যদিও যে ভিডিয়োয় এই দৃশ্য দেখা গিয়েছে, তার সত্যতা আনন্দবাজার পত্রিকা যাচাই করেনি।

Advertisement

শেষমেশ প্রায় আধ ঘণ্টা পরে এক সিভিক ভলান্টিয়ারের থেকে খবর পেয়ে লেক টাউন থানার পুলিশ এসে দুই যুবককে উদ্ধার করে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার হয়েছে দুই অভিযুক্ত। তাঁদের নাম মনোহর রায় ও সুনীল রায়। তাঁদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা, হুমকি প্রদর্শন-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করে তদন্তে নেমেছে লেক টাউন থানা।

এ ভাবে কেন মারা হচ্ছিল দুই যুবককে? এলাকাবাসীর একাংশের বক্তব্য, কিছু দিন ধরেই তাঁদের গাড়ির ব্যাটারি-সহ মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরি যাচ্ছিল। তাঁদের অভিযোগ, ওই দুই যুবক চুরিতে জড়িত বলে তাঁরা নিশ্চিত। কিন্তু সে ক্ষেত্রে কেন পুলিশে খবর দেওয়া হল না? এ ভাবে কি আইন হাতে তুলে নেওয়া যায়? ওই বাসিন্দারা জানান, পুলিশকে জানানোর আগে তাঁরাই অভিযুক্তদের শায়েস্তা করতে চেয়েছিলেন।

যদিও ঘটনার সঙ্গে স্থানীয়েরা যুক্ত, এই অভিযোগ মানতে নারাজ দক্ষিণ দমদম পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর পার্থ বর্মা। তিনি বলেন, ‘‘উল্টোডাঙা উড়ালপুলের নীচে ভিআইপি রোডের ওই অংশে রাতে অনেকে গাড়ি রাখেন। তাঁরা এই ঘটনা ঘটাতে পারেন। এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখেছি, দক্ষিণদাঁড়ির বাসিন্দা কেউ যুক্ত নন।’’ তবে স্থানীয় বিধায়ক তথা দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু বলেন, ‘‘এমন কিছু হয়ে থাকলে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আইন হাতে তোলা কখনওই উচিত নয়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে বলেছি।’’

বিধাননগর কমিশনারেটের ডিসি (সদর) অমিত জাভালগি বলেন, ‘‘ভিআইপি সার্ভিস রোডে দু’জন ব্যক্তিকে অন্যায় ভাবে আটকে রেখে মারধরের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁদের উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের নাম বাবু সামন্ত এবং সঞ্জয় ভুঁইয়া। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে দুই অভিযুক্তকে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন