Sound Pollution

প্রতিনিয়ত শব্দবিধি লঙ্ঘন, তবে তার ‘ছাপ’ নেই রিপোর্টে

রাজ্য পুলিশের ক্ষেত্রে ডিসেম্বরে লাউডস্পিকার, ডিজে মিলিয়ে মোট ২৬টি ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১১:০০
Share:

শব্দ-বন্ধ: হর্ন-বিরোধী পোস্টার নিয়েই বাইকে গন্তব্যের দিকে। সোমবার, ধর্মতলা এলাকায়। ছবি: সুমন বল্লভ

মাইক, ডিজে, যানবাহনের লাগাতার হর্নে তিতিবিরক্ত শহরবাসী। সরকারি ও বেসরকারি একাধিক রিপোর্টে ধারাবাহিক ভাবে শব্দবিধি লঙ্ঘনের পরিসংখ্যানও উল্লেখ করা হয়েছে। তবে জাতীয় পরিবেশ আদালতে রাজ্য সরকার সম্প্রতি শব্দদূষণ রোধ সংক্রান্ত যে ‘অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট’ (এটিআর) জমা দিয়েছে, তাতে সেই অবস্থার বিন্দুমাত্র প্রতিফলন নেই বলেই জানাচ্ছেন পরিবেশকর্মীদের একাংশ। ফলে ওই রিপোর্ট কতটা যথার্থ, উঠছে সেই প্রশ্নও।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রের খবর, জাতীয় পরিবেশ আদালতে রাজ্যের দাখিল করা এটিআর-এ লাউডস্পিকার, ডিজে, যানবাহনের হর্নের শব্দ-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈধ সীমা লঙ্ঘন করা হলে কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে। যেমন, কলকাতা পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে লাউডস্পিকার-ডিজে সংক্রান্ত শব্দবিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে মামলা দায়ের, যন্ত্র বাজেয়াপ্ত এবং গ্রেফতার-সহ মোট ৪৮টি ক্ষেত্রে পদক্ষেপ করা হয়েছে। যানবাহনের আওয়াজের ক্ষেত্রে সব মিলিয়ে ৪৩টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু কাউকে গ্রেফতার বা কোনও হর্ন বাজেয়াপ্ত করা হয়নি।

রাজ্য পুলিশের ক্ষেত্রে ডিসেম্বরে লাউডস্পিকার, ডিজে মিলিয়ে মোট ২৬টি ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে সাতটি ক্ষেত্রে নিয়ম লঙ্ঘনকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যানবাহনের আওয়াজ সংক্রান্ত ১৭৬টি ঘটনায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যদিও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। কিন্তু যেখানে সাইলেন্স জ়োন-সহ শহরের সর্বত্র প্রতিনিয়ত শব্দবিধি লঙ্ঘিত হয়ে চলেছে, সেখানে এক মাসে শব্দদূষণ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান এত কম কী করে হয়, সেই প্রশ্নই তুলছেন পরিবেশবিদদের একাংশ।

Advertisement

আরও পড়ুন: পুরনো গাড়ি নিয়ে কোর্টের নির্দেশে বিপাকে পুরসভা

এই রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ আদালতে ‘সাপ্লিমেন্টারি’ হলফনামা দাখিল করেছেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তাঁর বক্তব্য, যেখানে শহর-সহ সারা রাজ্যে নিত্যদিনই লাউডস্পিকার বা ডিজে বাজানো হয়, সেখানে কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের তরফে আদালতে পেশ করা পরিসংখ্যান হাস্যকর। তাঁর কথায়, ‘‘শহরে সাইলেন্স জ়োন বলে কিছু নেই। অথচ পুলিশের তরফে যে সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে, তা নগণ্য এবং বিশ্বাসযোগ্য নয়।’’ পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর তরফে নব দত্তেরও বক্তব্য, ‘‘এখন কোনও নির্দিষ্ট সময়ে নয়, সারা বছরই ডিজে, মাইক বা বাজি ফাটানো চলতে থাকে। কিন্তু তার পরেও দূষণ রোধে পুলিশি সক্রিয়তা চোখে পড়ে না।’’

আরও পড়ুন: দমকলের নির্দেশ মানছে না নিমতলার কাঠগোলা পাড়া

কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সাম্প্রতিক রিপোর্টে (২০১৮ সাল) ‘সাইলেন্স জ়োন’-সহ সারা শহরে শব্দদূষণের ছবি ধরা পড়েছে। শব্দবিধি অনুযায়ী, হাসপাতালের মতো ‘সাইলেন্স জ়োন’-এ দিন ও রাতের নির্ধারিত শব্দমাত্রা যথাক্রমে ৫০ ও ৪০ ডেসিবেল থাকার কথা। পর্ষদের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এসএসকেএম হাসপাতালের সামনে দিনে ও রাতে শব্দমাত্রা ছিল যথাক্রমে ৬৮ ও ৬৫ ডেসিবেল। আবার আর জি কর হাসপাতালে দিনে ও রাতে শব্দমাত্রা ছিল যথাক্রমে ৬৭ ও ৫৯ ডেসিবেল। নির্ধারিত মাত্রার ক্ষেত্রে যা অনেকটাই বেশি।

নিউ মার্কেটের মতো বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ও রাতের শব্দমাত্রা থাকার কথা যথাক্রমে ৬৫ ও ৫৫ ডেসিবেল। সংশ্লিষ্ট রিপোর্ট অনুযায়ী, নিউ মার্কেটে গত ডিসেম্বরের শব্দমাত্রা ছিল দিনে ৭১ ডেসিবেল এবং রাতে ৭২ ডেসিবেল। বসতি এলাকায় যেখানে দিন ও রাতের নির্ধারিত শব্দমাত্রা যথাক্রমে ৫৫ ও ৪৫ ডেসিবেল হওয়ার কথা, সেখানে বাগবাজার, পাটুলি-সহ এলাকায় তা ধারাবাহিক ভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে।

যদিও কলকাতা পুলিশের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘মাইক্রোফোন, ডিজের বিরুদ্ধে নিয়ম মেনেই পুলিশ পদক্ষেপ করছে।’’ পরিবেশমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র এ বিষয়ে বলেন, ‘‘পুলিশের সঙ্গে যৌথ ভাবে আমরা কাজ করছি। সব জায়গায় এখনও হয়তো শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। ধাপে ধাপে সেটা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন