পুরসভার অনেক সম্পত্তিই অন্যের নামে, ক্যাগের চিঠিতে তোলপাড়

শহর জুড়ে কলকাতা পুরসভার কয়েকশো কোটি টাকার সম্পত্তি কি বেহাত হয়ে গিয়েছে প্রশ্ন তুলল কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (ক্যাগ)। জবাব খুঁজতে এখন কালঘাম ছুটেছে পুর কর্তৃপক্ষের। সন্দেহের উৎস পুরসভার স্থাবর-সম্পত্তির তালিকা সম্বলিত একটি বই। ফি-বছর বাজেট পেশের সময় ওই বই প্রকাশ করে পুরসভাই। পোশাকি নাম ‘ইনভেনটরি অব ইমমুভেবল প্রপার্টিস ২০১৪-১৫’। এই বইতেই কলকাতার ১৫টি বরো (মোট ১৪১টি ওয়ার্ড) এলাকার কোন ঠিকানায় কী সম্পত্তি রয়েছে, তার পরিমাণ কত, জমি বা বাড়ির মূল্যই বা কত সেই তথ্য দেওয়া থাকে।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৪ ০৩:২০
Share:

শহর জুড়ে কলকাতা পুরসভার কয়েকশো কোটি টাকার সম্পত্তি কি বেহাত হয়ে গিয়েছে প্রশ্ন তুলল কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (ক্যাগ)। জবাব খুঁজতে এখন কালঘাম ছুটেছে পুর কর্তৃপক্ষের।

Advertisement

সন্দেহের উৎস পুরসভার স্থাবর-সম্পত্তির তালিকা সম্বলিত একটি বই। ফি-বছর বাজেট পেশের সময় ওই বই প্রকাশ করে পুরসভাই। পোশাকি নাম ‘ইনভেনটরি অব ইমমুভেবল প্রপার্টিস ২০১৪-১৫’। এই বইতেই কলকাতার ১৫টি বরো (মোট ১৪১টি ওয়ার্ড) এলাকার কোন ঠিকানায় কী সম্পত্তি রয়েছে, তার পরিমাণ কত, জমি বা বাড়ির মূল্যই বা কত সেই তথ্য দেওয়া থাকে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি মেয়র পারিষদের বৈঠকে সেই সম্পত্তির তালিকা অনুমোদিত হওয়ার পরে পেশ হয় জুন মাসের পুর বাজেটে। বইটিও প্রকাশিত হয় সেই সময়ে।

এর পর নিয়ম মতো ওই বই পাঠিয়ে দেওয়া হয় কলকাতায় ক্যাগের রেসিডেন্ট অফিসে। বইয়ে প্রকাশিত তথ্য যাচাই করে জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে পুরসভার চিফ ম্যানেজার (রেভিনিউ) এবং চিফ ভ্যালুয়ার ও সার্ভেয়ার-এর কাছে চিঠি পাঠায় ক্যাগ। আর তাই নিয়েই তোলপাড় ৫ নম্বর এসএন ব্যানার্জি রোডের লাল বাড়ি।

Advertisement

এক পাতার চিঠিতে ক্যাগ লিখেছে, ‘তালিকায় উল্লিখিত অধিকাংশ সম্পত্তির ক্ষেত্রে কোনও অ্যাসেসি নম্বর দেওয়া নেই। এই নম্বর না-থাকলে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির মালিক কে, তা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। যে সব সম্পত্তির অ্যাসেসি নম্বর দেওয়া আছে, দেখা যাচ্ছে, তার অনেকগুলিরই মালিক পুরসভা নয়, অন্য কেউ।’ কাগের চিঠিতে এই দু’টি ঘটনার ব্যাখা চাওয়া হয়েছে।

অ্যাসেসি নম্বর কী? পুরসভার আধিকারিকরা জানান, কোনও জমি বা বাড়ির মালিক নিজের সম্পত্তির দলিল নিয়ে পুরসভার কাছে কর নির্ধারণের আবেদন জানান। সেই আবেদন যাচাই করে সম্পত্তির একটি ঠিকানা ও নম্বর দেয় পুরসভা। এই নম্বরটি হল অ্যাসেসি নম্বর। অর্থাৎ, যে ব্যক্তি বা সংস্থার নামে আ্যসেসি নম্বর দেওয়া হয় তিনি বা তাঁরাই ওই বাড়ি বা জমির নথিভুক্ত মালিক (রেকর্ডেড ওনার)। কর জমা পড়ে অ্যাসেসি নম্বরের ভিত্তিতেই। পুরসভার রেভিনিউ দফতরের এক অফিসার জানান, অ্যাসেসি নম্বরহীন কোন সম্পত্তির প্রেমিসেস নম্বর বা ঠিকানা থাকার কথা নয়। তা সেই সম্পত্তি পুরসভার হলেও। কিন্তু পুর সম্পত্তির যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে বহু ক্ষেত্রেই অ্যাসেসি নম্বর নেই। আবার যে যে সম্পত্তির অ্যাসেসি নম্বর রয়েছে, পুরসভার কর বিভাগের কম্পিউটার বলছে, পুরসভা তার অনেকগুলিরই মালিক নয়।

ক্যাগের ২৪ জুলাই তারিখে লেখা চিঠি হাতে পেয়ে গত শনিবার জরুরি বৈঠকে বসেন পুর কমিশনার খলিল আহমেদ। বইয়ে লেখা সম্পত্তির সঙ্গে কোথায় কোথায় গরমিল হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট দফতরের অফিসারকে তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন তিনি। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মঙ্গলবার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “তদন্ত করা হবে। জমি বেহাত হওয়ার ঘটনা প্রমাণিত হলে মালিকানা বাতিল করার ব্যবস্থা করা হবে।”

প্রাথমিক তদন্তে নেমেই কেঁচো খুঁড়তে কেউটে মেলার দশা। পুরসভা সূত্রের খবর, গত কয়েক দিনে তালিকায় থাকা শ’দুয়েক অ্যাসেসি নম্বর যাচাই করে কর্তারা দেখেছেন সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির মালিকানা অন্যের হাতে। এ ব্যাপারে আঙুল উঠেছে রেভিনিউ (রাজস্ব) ও ভ্যালুয়ার (মূল্যায়ন) দফতরের দিকে। কারণ, স্থাবর সম্পত্তির তালিকা তৈরি থেকে তার মূল্যায়ন করে কর নির্ধারণ পর্যন্ত সব কাজই করে ওই দুই দফতর।

ফলে প্রশ্ন উঠেছে, শয়ে শয়ে এমন ঘটনা রেভিনিউ ও ভ্যালুয়ার দফতরের নজর এড়িয়ে গেল কী করে? পুরসভার জমি ও বাড়ি হাতছাড়া হল কী ভাবে? করলই বা কে? এর পিছনে কারা আছে? কবে এ সব হল?

পুর কর্তৃপক্ষের একাংশের ধারণা, বেহাত জমি ও সম্পত্তির আর্থিক মূল্য কয়েকশো কোটি টাকার কম নয়। এখন পুর সম্পত্তির খুঁটিনাটি জানতে প্রতিটি ওয়ার্ডে ঘুরবেন সেংশ্লিষ্ট বিভাগের ইন্সপেক্টরেরা। কোন সম্পত্তি, কোন আমলে বেহাত হয়েছে তাও জানতে তৎপর পুর প্রশাসন।

পুরসভার একাংশের মতে, এই ঘটনার দায়িত্ব বর্তমান পুর কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারেন না। যদিও পুরসভার এক আমলার দাবি, “এ সবই হয়েছে আগের আমলে।”


সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন