Kolkata

প্রশাসনের ঢিলেমিতেই ডুবছে দক্ষিণ দমদম, দাবি

দুয়ারে নদী। বাড়ির একতলার খাট পর্যন্ত ভিজে গিয়েছিল। সেই জল নামাতে কয়েক দিন ধরে হিমশিম খেতে হয়েছিল দক্ষিণ দমদম পুরসভাকে।

Advertisement

আর্যভট্ট খান ও কাজল গুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:৪৪
Share:

দুর্দশা: এমনই চেহারা বাগজোলা খালের। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

দুয়ারে নদী। বাড়ির একতলার খাট পর্যন্ত ভিজে গিয়েছিল। সেই জল নামাতে কয়েক দিন ধরে হিমশিম খেতে হয়েছিল দক্ষিণ দমদম পুরসভাকে। গত বর্ষায় এমনই দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে পুর এলাকার বাসিন্দাদের। দক্ষিণ দমদমকে ঘিরে থাকা সোনাই, দমদম ক্যান্টনমেন্ট, বাগজোলা, কেষ্টপুর খাল জলে টইটুম্বুর হয়ে যাওয়ায় এমন বিপত্তি বলে দাবি করেছিলেন তৎকালীন পুর কর্তারা। তবে পুরকর্তাদের দাবি, গত বর্ষার অত্যধিক বৃষ্টি সে বারের বানভাসির অন্যতম কারণ।

Advertisement

কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘ সময় ধরে পুরো দস্তুর সংস্কার না-করায় খালের নাব্যতা বাড়েনি। যার জেরে এমন ঘটনা। পাশাপাশি দক্ষিণ দমদমের সাবেক নিকাশি ব্যবস্থা এবং তার মানোন্নয়নে সদিচ্ছার অভাব বিপত্তি বাড়িয়েছে বলেও বাসিন্দারা অভিযোগ তুলেছেন। পুর নির্বাচনের প্রাক্কালে বিরোধীদের প্রচারের মূল ইসুর অন্যতম ছিল জমা জলের যন্ত্রণা। স্থানীয় বাসিন্দা গোরা ঘোষ জানাচ্ছেন, খাল যত ক্ষণ না আমূল সংস্কার হচ্ছে, এ সমস্যা মিটবে না। এলাকার খোলা নিকাশি নালা ঢেকে তার উপরে বসে পড়ছে দোকান-সহ নানা দখলদারি। ফলে সেই নিকাশি নালার সংস্কার করা যায় না বলেও দাবি বাসিন্দাদের।

ভোটের আগে যথারীতি এই সমস্যা নিয়ে সরব বিরোধীরা। সিপিএম নেতা দেবশঙ্কর রায়চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘বিদায়ী পুর বোর্ড এবং রাজ্য সরকারের অবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি সমস্যা জটিল করেছে। খাল এবং নিকাশি নালার আমূল সংস্কার জরুরি। নীল-সাদা রং বা বাহারি আলো লাগিয়ে কিছু হবে না।’’

Advertisement

তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের দাবি, বাম আমলে নিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। তৃণমূল আমলে তা অনেক উন্নত হয়েছে। সেই কারণে আগের মতো ৮-১০ দিন ধরে জল জমে থাকে না। প্রশাসনিক বৈঠক থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খাল সংস্কারে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশের প্রেক্ষিতে পরিকল্পনা হয়েছে। তা কার্যকর হলে সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে দাবি তাঁদের।

উন্নয়ন যে হয়েছে, সে কথা মানতে নারাজ বিজেপি নেতা অরিজিৎ বক্সী। তাঁর অভিযোগ, ‘‘নিকাশির উন্নয়নে পুরোপুরি ব্যর্থ পুরসভা। বহুতল গজিয়ে উঠছে। ভাঙা রাস্তা শুধু পিচ ঢেলে ঢেলে উঁচু হচ্ছে। জল ঢুকছে একতলা বাড়িতে। উন্নয়নের ফল হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন বাসিন্দারা।’’

এ তো গেল রাজনৈতিক নেতাদের চাপান-উতোর। বাস্তবটা কী? দমদম ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে ট্রেনে দমদম স্টেশনের দিকে যেতে রেললাইন বরাবর খালের অবর্ণনীয় দশা চোখে পড়ে। পুর এলাকার ভিতর দিয়ে যাওয়া বাগজোলা খালের বহন ক্ষমতা যে কমে গিয়েছে, তা অল্প বৃষ্টিতেই মালুম হয় বলে জানাচ্ছেন বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, খালপাড়ে বাহারি আলোর খামতি নেই।

নগরোন্নয়নের ধাক্কাও জমা জলের অন্য কারণ। যার জেরে বরাহনগর এবং দক্ষিণ দমদমের সীমান্তবর্তী এলাকায় জল জমার সমস্যা জটিল হয়েছে বলে দাবি বিরোধীদের। মেট্রো প্রকল্প, ডাম্পিং গ্রাউন্ডের কারণে সমস্যা বেড়েছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। কারণ ওই সব এলাকায় খালের পরিসর আগের তুলনায় কমে বিপত্তি বেড়েছে বলেই অভিযোগ। যার ফলে ৩, ১৮, ১৯, ২০, ৩০, ৩২-সহ বেশ কিছু ওয়ার্ডে জল জমে যায়। বাসিন্দা এবং বিরোধীদের অভিযোগ, ভিআইপি রোড বরাবর নয়ানজুলির পরিমাণ কমেছে, সেই সমস্যাও জল জমার যন্ত্রণা বাড়িয়ে তুলেছে। এই পুর এলাকার জমা জলে থাকা বাতিস্তম্ভে হাত লেগে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গত বছর মৃত্যু হয়েছিল দুই কিশোরীর।

দক্ষিণ দমদম পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যানের দাবি, জল জমার সমস্যা নিয়ে গত পুরবোর্ড ওয়াকিবহাল ছিল। তাই রাজ্য প্রশাসনের সহায়তায় এর কারণ বিশ্লেষণ হয়েছে। প্রয়োজনীয় পরিকল্পনাও হয়েছে। তা বাস্তবায়িত করতে পদক্ষেপ করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন