ফুসফুসে পেনের ঢাকনা, বেরোল এক বছর পরে

পড়াশোনা করার সময়েই আচমকা পেনের ঢাকনা গিলে ফেলেছিল রহমান। পরিজনদের সামনেই ঘটনাটি ঘটেছিল বছরখানেক আগে। সে সময়ে তাৎক্ষণিক কোনও শারীরিক অসুবিধা না হওয়ায় বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি তার পরিবার। কিন্তু মাস দুয়েক পর থেকেই রহমানের কাশি শুরু হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২০ ০৯:৩০
Share:

বিপত্তি: পেনের এই অংশ আটকে ছিল গলায়। নিজস্ব চিত্র

বছরখানেক আগে পেনের ঢাকনা গিলে ফেলেছিল আট বছরের ছেলেটি। সেই ঘটনার মাস তিনেক পর থেকে শিশুটির চিকিৎসা শুরু হলেও পেনের ঢাকনা গিলে ফেলাটাই যে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরের নেপালগঞ্জের বাসিন্দা রহমান মালিকের অসুস্থতার কারণ, তা ধরা যায়নি। শেষমেশ শনিবার ব্রঙ্কোস্কোপি করে অসুখের কারণ বুঝতে পারে এসএসকেএমের ‘ইনস্টিটিউট অব অটো রাইনো ল্যারিঙ্গোলজি’। জরুরি ভিত্তিতে এ দিনই অস্ত্রোপচার করে পেনের ঢাকনা বার করা হলেও সঙ্কট কাটেনি রহমানের।

Advertisement

পড়াশোনা করার সময়েই আচমকা পেনের ঢাকনা গিলে ফেলেছিল রহমান। পরিজনদের সামনেই ঘটনাটি ঘটেছিল বছরখানেক আগে। সে সময়ে তাৎক্ষণিক কোনও শারীরিক অসুবিধা না হওয়ায় বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি তার পরিবার। কিন্তু মাস দুয়েক পর থেকেই রহমানের কাশি শুরু হয়। তার মামা আব্দুল জানান, চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো একাধিক বার বুকের পরীক্ষা করানো হলেও কিছু ধরা পড়েনি। আট মাস পরে রক্তবমি শুরু হয় শিশুটির। তা দেখে তাকে হাজরা মোড়ের চিত্তরঞ্জন শিশু সদনে নিয়ে যান পরিজনেরা। সেখান থেকে রহমানকে এসএসকেএমের শিশুরোগ বিভাগে পাঠানো হয়। আব্দুলের বক্তব্য, তাঁর ভাগ্নের অবস্থা দেখে ভর্তি নিয়ে নেন শিশুরোগ বিভাগের চিকিৎসকেরা। কিন্তু ফুসফুসে পেনের ঢাকনা আটকে রাখার জন্যই যে এই সমস্যা, তখনও তা ধরা পড়েনি। অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে রক্তবমি বন্ধ হলে তিন সপ্তাহ পরে রহমানকে ছুটি দেওয়া হয়।

মাসখানেক পরে একই সমস্যা দেখা দিলে ফের রহমানকে এসএসকেএমে নিয়ে যান পরিজনেরা। আব্দুল জানান, শিশুরোগের বহির্বিভাগের চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো এ বার সিটি স্ক্যান করানো হলে বুকের মধ্যে মাংসপিণ্ড জাতীয় কিছু রয়েছে বলে বোঝা যায়। সেটি ক্যানসার কি না জানতে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মাস দুয়েক আগে শিশুটির বায়োপসি করানো হয়। বায়োপসি রিপোর্টে কিছু ধরা পড়েনি। এর পরে দু’দফায় তার আলট্রাসোনোগ্রাফি হয়। সপ্তাহ তিনেক আগে রক্তবমির পরিমাণ বাড়লে আবার এসএসকেএমের চিকিৎসকেরা রহমানকে ভর্তি করানোর জন্য বলেন। কিন্তু শয্যা না থাকায় দু’সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয় তাকে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, শনিবার সিটি স্ক্যানের রিপোর্টে ফুসফুসের বাঁ দিকে সমস্যা রয়েছে বুঝতে পেরে ‘ইনস্টিটিউট অব অটো রাইনো ল্যারিঙ্গোলজি’-তে পাঠানো হয় রহমানকে।

Advertisement

শিশুটির ব্রঙ্কোস্কোপি করে ‘ইনস্টিটিউট অব অটো রাইনো ল্যারিঙ্গোলজি’র চিকিৎসকেরা বুঝতে পারেন, ফুসফুসের বাঁ দিকে ‘ফরেন পার্টিকল’ কিছু একটা আটকে রয়েছে। তৎক্ষণাৎ ইনস্টিটিউটের প্রধান চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্তের নেতৃত্বে সেই ‘ফরেন পার্টিকল’ বার করতে অস্ত্রোপচার শুরু করেন চিকিৎসক অঙ্কিত চৌধুরী, সৌত্রিক কুমার ও প্রকৃতি সমাদ্দার। অস্ত্রোপচার সফলও হয়। কিন্তু বারো ঘণ্টা পরেও রোগীর জ্ঞান না ফেরায় চিকিৎসকেরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।

এ দিন সন্ধ্যায় আব্দুল বলেন, ‘‘সকালে ভাগ্নের শারীরিক অবস্থা এত খারাপ ছিল যে, ভেন্টিলেটরে দিতে হয়। এখন আইসিইউ-এ রয়েছে। জ্ঞান ফিরলেও বিপদ পুরোপুরি কাটেনি। পেনের ঢাকনার জন্যই যে এটা হচ্ছিল, সেটা আগে বুঝতে পারলে ভাল হত।’’

‘ইনস্টিটিউট অব অটো রাইনো ল্যারিঙ্গোলজি’র প্রধান অরুণাভবাবু বলেন, ‘‘মাসের পর মাস কাশি। কফের সঙ্গে রক্ত উঠছে। অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েও সারছে না। এ রকম হলে এক বার ব্রঙ্কোস্কোপি করে দেখা উচিত শরীরে কোনও ফরেন পার্টিকল রয়েছে কি না। সচেতনতার অভাবে অনেক সময়ে অহেতুক জটিলতা তৈরি হয়। সেটা কাম্য নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন