প্রসাধনী দ্রব্য থেকেও ছড়াতে পারে শ্বেতী

শুধু চুলের রং নয়, চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, জামাকাপড় ধোওয়ার সাবান, ডিওডোর‌্যান্ট থেকেও ছড়াতে পারে এই শ্বেতী। যার পোশাকি নাম ‘কেমিক্যাল শ্বেতী’।

Advertisement

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৭ ১৩:৩০
Share:

ঠাকুরমার সঙ্গে এক বালিশে ঘুমোত ছোট্ট মেঘলা। হঠাৎই এক দিন তার গায়ে সাদা রঙের গোল গোল দাগ দেখা দিতে শুরু করে। প্রাথমিক ভাবে কিছু বোঝা না গেলেও, পরে জানা যায় মেঘলার ঠাকুরমা চুলে রং ব্যবহার করেন। আর তা থেকে ঠাকুরমার কিছু না হলেও, এক বালিশে শোওয়ার কারণে নাতনির ত্বকে ছড়িয়েছে শ্বেতী।

Advertisement

শুধু চুলের রং নয়, চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, জামাকাপড় ধোওয়ার সাবান, ডিওডোর‌্যান্ট থেকেও ছড়াতে পারে এই শ্বেতী। যার পোশাকি নাম ‘কেমিক্যাল শ্বেতী’। চর্মরোগ চিকিৎসক সঞ্জয় ঘোষ এবং তাঁর সহকারী চিকিৎসক শক্তি মুখোপাধ্যায় বছর সাতেক আগে এই কেমিক্যাল শ্বেতীর কারণ অনুসন্ধান করে একটি গবেষণা করেছিলেন। সেখানে তাঁরা জানিয়েছিলেন, শ্বেতী নানা প্রকারের হয়। তার একটি ধরন হল কেমিক্যাল শ্বেতী। বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করলে এই রোগ ছড়াতে পারে। মূলত প্রসাধনী দ্রব্য থেকেই এটি হয়। এই শ্বেতী নির্মূল করা সম্ভব। সম্প্রতি সেই গবেষণাপত্রটি একটি আন্তর্জাতিক সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়। আন্তর্জাতিক স্তরে মেনে নেওয়া হয়েছে কেমিক্যাল শ্বেতী নামে চর্মরোগের অস্তিত্ব।

সঞ্জয়বাবু জানান, বিদেশে শিল্পাঞ্চলের কর্মীদের ত্বকে এক ধরনের কোষ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চর্মরোগ দেখা দেয়। যাকে চিকিৎসার ভাষায় কেমিক্যাল লিউকোডার্মা বলা হয়। কিন্তু ভারতে এই রোগ ঘরে ঘরে। এ দেশে দেখা গিয়েছে, শিল্পাঞ্চলের রাসায়নিক থেকে নয়, নিত্য দিন ব্যবহৃত হওয়া বিভিন্ন পণ্য থেকে চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে। তবে, এই রোগকে কেমিক্যাল লিউকোডার্মা বলার পক্ষপাতী তিনি নন। বললেন, ‘‘আমাদের দেশে বিভিন্ন পণ্য থেকে ত্বক সাদা হয়ে যাওয়ার যে রোগ ধরা পড়ে, সেটাও এক ধরনের শ্বেতী। তার ডাক্তারি নাম কেমিক্যাল শ্বেতী।’’

Advertisement

আরও পড়ুন:‘ডাইনি’ অপবাদ মাথায় নিয়েই সফল বাসন্তী

চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, শ্বেতী কেন হয়, তা বুঝতে না পারার জেরে অনেক সময়ে সঠিক চিকিৎসা হয় না। পাশাপাশি, অনেকের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে, শ্বেতী ছোঁয়াচে। এই চর্মরোগ যাঁদের রয়েছে, তাঁদের নিয়ে নানা সামাজিক ছুঁৎমার্গও রয়েছে। শ্বেতী নিয়ে সচেতনতা প্রসার করতে পারলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। শ্বেতীর কারণ সঠিক বোঝা গেলে, তা নির্মূলও হতে পারে। যে সমস্ত সামগ্রী, অর্থাৎ সুগন্ধী, ডিটারজেন্ট, চুলের রং, ডিওডোর‌্যান্ট ব্যবহার করলে শ্বেতী হচ্ছে, সেই দ্রব্যের ব্যবহার বন্ধ করলেই রোগ ছ়ড়াবে না।

চিকিৎসক সুস্মিত হালদার আবার বলছেন, ‘‘চিকিৎসকদের রোগ নির্ণয়ের সময়ে রোগীর ইতিহাস ভাল করে জানা দরকার। তিনি কী কী জিনিস ব্যবহার করেন, সে ব্যাপারে নজর দিলে কেমিক্যাল শ্বেতী সেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা প়ড়াটাও জরুরি। কারণ, যে দ্রব্যের জন্য ওই চর্মরোগ হচ্ছে, সেটি ক্রমাগত ব্যবহার করলে দেহের বিভিন্ন জায়গায় শ্বেতী ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে।’’

চর্মরোগ চিকিৎসকদের একাংশের আবার বক্তব্য, এই গবেষণা রীতিমতো প্রশ্নের মুখে ফেলে দিল এ দেশে নিত্য প্রয়োজনে ব্যবহৃত একাধিক পণ্যের গুণমান নির্ণয়ের পদ্ধতি ব্যবস্থাকেও। ডিটারজেন্ট বা ডিওডোর‌্যান্ট তৈরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিকের নাম সঠিক থাকলে চর্মরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাবেন কেন, উঠছে সে প্রশ্নও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন