ডলার পাচার রুখতে কাচের দরজায় প্রহরা

কলকাতা বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উড়ানের দুই নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাঝে এই অংশ।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৫৯
Share:

কলকাতা বিমানবন্দর। —ফাইল চিত্র।

কলকাতা বিমানবন্দরের একটি কাচের দরজার ফাঁক গলিয়ে পাচার হচ্ছিল ডলার। এ নিয়ে সতর্ক করা হয়েছিল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে।

Advertisement

এ বার সেই দরজার সামনে পাকাপাকি ভাবে কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীর (সিআইএসএফ) রক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে।

কলকাতা বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উড়ানের দুই নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাঝে এই অংশ। এ দিকের যাত্রী ও দিকে যাতে না যেতে পারেন, সে জন্য রয়েছে কাচের দেওয়াল। প্রয়োজনে যাতে যাতায়াত করা যায়, তার জন্য ওই দেওয়ালে রয়েছে একটি কাচের দরজা। যেটি একটি লম্বা চেন ও তালা দিয়ে আটকানো থাকে। ফলে একটু টানলেই সেই দরজা সামান্য ফাঁক হয়ে যায়।

Advertisement

সেই পথে ডলার গলানোর সময়ে সম্প্রতি ডিরেক্টরেট অব রেভেনিউ ইন্টেলিজেন্সের (ডিআরআই) অফিসারদের হাতে ধরা পড়েন তিন জন। তাঁদের এক জন জিয়াউল মুস্তাফা যাচ্ছিলেন ব্যাঙ্ককে। তিনি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ছিলেন। আর বাকি দু’জন শেখ মাসিরুদ্দিন ও আখতার মঈনি ছিলেন অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বেষ্টনীতে। ৮০ হাজার ডলার ছিল এই দু’জনের কাছে। এক এক জন ৪০ হাজার ডলার জুতোয় লুকিয়ে বিমানবন্দরে ঢোকেন। মাসিরুদ্দিনের যাওয়ার কথা ছিল গুয়াহাটি। আখতারের কাছে ভুবনেশ্বর যাওয়ার টিকিট ছিল। কাচের দরজার ফাঁক দিয়ে তাঁরাই ডলার পাচার করেন জিয়াউলের কাছে। ডিআরআই সূত্রের খবর, এই তিন জনেরই বাড়ি কলকাতার খিদিরপুরে।

তবে আইনের ফাঁক গলে ধৃত তিন জন ওই দিনই আদালত থেকে জামিন পেয়ে যান। কারণ, আইন অনুযায়ী, এক কোটি টাকা মূল্যের কম বিদেশি মুদ্রা-সহ ধরা পড়লে জামিন হয় অভিযুক্তদের। জামিন পেলেও তিন জনকে ডেকে জেরা করছেন ডিআরআই অফিসারেরা। জানা গিয়েছে, এর আগে ওই তিন জন এ ভাবেই চার বার কলকাতা থেকে ডলার পাচার করেছেন। প্রতিবার ডলার জিয়াউলের হাতে তুলে দেওয়ার পরে মাসিরুদ্দিন ও আখতার যাত্রা বাতিল করে বেরিয়ে যেতেন বিমানবন্দর থেকে। তদন্তকারীদের অনুমান, এঁরা ছাড়া আরও কয়েকটি দল এই পদ্ধতিতে ডলার পাচার করে থাকতে পারে।

এ বার তাই পাচারকারী ধরতে তদন্তকারী অফিসারেরা পিছন দিকে তাকাচ্ছেন। গত কয়েক মাস ধরে কত জন যাত্রী অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ঢোকার পরেও যাত্রা বাতিল করেছেন, সেই তালিকা যোগাড় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘সব ক্ষেত্রেই যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি পাচারে জড়িত, এমন নয়। অনেকে ন্যায্য কারণেও যাত্রা বাতিল করে থাকতে পারেন। তবে, যাত্রীদের প্রোফাইল ভাল করে পরীক্ষা করলে কিছু তথ্য পাওয়া যেতেও পারে।’’

তদন্তকারীদের দাবি, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাঝে যে এমন একটি দরজা রয়েছে এবং সেখান দিয়ে এ ভাবে ডলার পাচার করা যায়, তা অভিযুক্তেরা আগেই সরেজমিনে দেখে গিয়েছেন। ধৃতেরা চক্রের সামান্য সদস্য এবং এর পিছনে বড় মাথা রয়েছে বলেও অনুমান তাঁদের।

কলকাতা বিমানবন্দরের কর্তারা জানাচ্ছেন, এখানে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে যাত্রীর সংখ্যা যথেষ্ট বেশি হওয়ায় প্রত্যেকের জুতো খুলিয়ে পরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। তাই, জুতোর নীচে লুকিয়ে সহজেই ঢুকে যেতে পারেন অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রের যাত্রীরা। তবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কড়াকড়ি তুলনায় বেশি। এমনকি, সেখানে সিআইএসএফ ছাড়াও শুল্ক দফতরের অফিসারদের নজরদারি থাকে। এর আগে, গত অক্টোবরে ব্যাঙ্কক যাওয়ার পথে কলকাতা থেকে দুই যাত্রীকে ১ লক্ষ ৭৪ হাজার ডলার সমেত ধরেছিলেন গোয়েন্দারা। এক্স-রেতে যাতে দেখা না যায়, সে জন্য সুটকেসের ভিতরে কার্বন পেপারে মুড়ে ওই ডলার পাচার হচ্ছিল। তবুও শেষরক্ষা হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন