নথি যাচাই না করেই নিয়োগ করা হচ্ছে নার্স

মাঝেমধ্যেই রোগীর রক্তে শর্করার পরিমাণে তারতম্য হওয়ায় অস্বস্তি হচ্ছে। রোগীর পরিজনেদের অভিযোগ, কর্তব্যরত নার্সের ওষুধ সম্পর্কে ঠিক মতো জ্ঞান নেই।

Advertisement

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৫০
Share:

প্রতীকী ছবি।

মধ্য কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে পিত্তথলির পাথর বার করার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন এক প্রৌঢ়। রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি। অস্ত্রোপচারের পরে চিকিৎসক প্রয়োজনীয় ওষুধ দিয়েছেন। কিন্তু মাঝেমধ্যেই রোগীর রক্তে শর্করার পরিমাণে তারতম্য হওয়ায় অস্বস্তি হচ্ছে। রোগীর পরিজনেদের অভিযোগ, কর্তব্যরত নার্সের ওষুধ সম্পর্কে ঠিক মতো জ্ঞান নেই। একাধিক বার ভুল ওষুধ দেওয়ায় রোগীর শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁরা লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

Advertisement

আলিপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে সদ্যোজাতকে নিয়ম মেনে স্তন্যপান না করিয়ে কৃত্রিম দুধ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল কর্তব্যরত নার্সের বিরুদ্ধে। মাতৃদুগ্ধের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কেন অবগত নন হাসপাতালের নার্স? কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চেয়েছিলেন রোগীর পরিজনেরা। যদিও সেই প্রশ্নের জবাব মেলেনি বলেই পরিবারের দাবি।

বেসরকারি হাসপাতালের নার্সদের যোগ্যতা নিয়ে ফের এক বার প্রশ্ন উঠল গত শুক্রবার, স্বাস্থ্য কমিশনে আমরি-কাণ্ডের শুনানিতে। ১৭ জানুয়ারি ওই হাসপাতালে ঐত্রী দে-র মৃত্যু হয়েছিল ভুল ইঞ্জেকশন দেওয়ার কারণেই, কমিশনে এমনই অভিযোগ দায়ের করে ঐত্রীর পরিবার। এর পরেই নার্সের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। শুক্রবার কমিশনে সংশ্লিষ্ট নার্স জানান, তিনি এখনও ‘ফাইনাল ডিগ্রি’ পাননি। যদিও শনিবার আমরি হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার অলোক গঙ্গোপাধ্যায় দাবি করেছেন, ওই নার্সকে বিএসসি-র কোর্স শেষ করার শংসাপত্র যাচাই করেই নিয়োগ করা হয়েছিল।

Advertisement

নার্সদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন অবশ্য আকছার উঠছে। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের মতে, প্রয়োজন এবং জোগানে ভারসাম্য নেই। তাই অনেক সময়ে কাজ সামলাতে পর্যাপ্ত শংসাপত্র যাচাই না করেই নার্সদের নিয়োগ করা হচ্ছে একাধিক বেসরকারি হাসপাতালে। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএসসি নার্সিং কোর্সে সরকারি ও বেসরকারি— আটটি করে মোট ১৬টি নার্সিং কলেজ আছে। যেখানে ফি-বছর প্রায় ছ’শো জন নার্স পাশ করেন। নার্সিংয়ে ডিপ্লোমা কোর্সের সরকারি প্রতিষ্ঠান ৩৫, বেসরকারি ১৬। সেখানে বছরে পাশ করেন প্রায় চার হাজার নার্স। এর পাশাপাশি কিছু প্রতিষ্ঠান প্রশিক্ষণের কাজও শুরু করেছে। যদিও ২০১৭ সাল পর্যন্ত সেই সব প্রতিষ্ঠান থেকে কোনও নার্স পাশ করেননি। প্রয়োজন মেটাতে তাই একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল পাশ করার আগেই নার্সদের চাকরি দিচ্ছে।

বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব হসপিটালস অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার তরফে এম পি মেটার দাবি, ‘‘নিয়ম মেনে প্রয়োজনীয় নথি যাচাই করেই নার্স নিয়োগ করা হয়।’’ কিন্তু নার্সিং প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত কর্তাদের একাংশই জানাচ্ছেন, অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালে নিত্য নতুন বিভাগ চালু হচ্ছে। কিন্তু ফি-বিভাগে পর্যাপ্ত যোগ্য নার্স নেই। বিএসসি পাশ করা নার্স এবং ডিপ্লোমা করা নার্সদের যোগ্যতা ও দক্ষতায় পার্থক্য রয়েছে। পাশাপাশি, বেসরকারি হাসপাতালগুলি বিএসসি পাশ করা নার্সের বেতনও পর্যাপ্ত দেয় না। তাই তাঁরা যোগ দিতে আগ্রহী নন। বিএসসি নার্স অপ্রতুল হওয়ায় জটিল অস্ত্রোপচার থেকে শুরু করে আশঙ্কাজনক রোগীর চিকিৎসায় সব কাজ সামলাচ্ছেন ডিপ্লোমা নার্সরাই। যা অনেক সময়ে রোগী পরিষেবার মানের তারতম্য তৈরি করছে।

স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানান, নার্সের আকাল মেটাতে নার্সিং কলেজে আসন বাড়ানোর পরিকল্পনা চলছে। কিন্তু পর্যাপ্ত নার্স না থাকায় রোগীর দেখভালের দায়িত্ব অযোগ্য ব্যক্তিকে দিলে তা বরদাস্ত করা হবে না। তাঁর কথায়, ‘‘বেসরকারি হাসপাতালে নার্স নিয়োগে অনিয়ম হলে সেটা অপরাধ। দফতর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন