সাত ‘আশ্চর্য’ দেখাতে পারি...

কলকাতা লন্ডন হওয়ার পথে কত দূর এগোল, তা নিয়ে বিতর্ক এখনও থামেনি। তবে তার আগেই বিশ্বের বিস্ময়গুলিকে শহরে হাজির করার রাস্তা কার্যত তৈরি করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:২৭
Share:

ইকো পার্কে তৈরি হচ্ছে: ইস্টার আইল্যান্ডের মূর্তি

কলকাতা লন্ডন হওয়ার পথে কত দূর এগোল, তা নিয়ে বিতর্ক এখনও থামেনি। তবে তার আগেই বিশ্বের বিস্ময়গুলিকে শহরে হাজির করার রাস্তা কার্যত তৈরি করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

চিনের প্রাচীর দেখার ইচ্ছে? মিশরের পিরামিড কিংবা রোমের কোলোসিয়াম? শহরে বসেই এ বার দেখা মিলবে বিশ্বের সাত আশ্চর্যের। নিউ টাউনের ইকো পার্কে রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতরের উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে এই বিশ্ব দর্শনের ব্যবস্থা।

রাজ্যের নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম শনিবার জানান, নিউ টাউনকে আকর্ষণীয় করতে ইতিমধ্যেই নানা পরিকল্পনা নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর নির্দেশেই হয়েছে ইকো পার্ক, ওয়াক্স মিউজিয়াম। প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ ইকো পার্ক দেখতে আসছেন। তাঁদেরকে আরও আকর্ষিত করতে এই ‘ওয়ান্ডার পার্ক’ তৈরির দায়িত্ব পেয়েছে হিডকো। সেখানেই গড়ে উঠছে পৃথিবীর সাত আশ্চর্যের প্রতিরূপ। আগামী নববর্ষেই এই পার্কের সূচনা হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে হিডকো-র তরফে।.

Advertisement

ইজিপ্টের পিরামিড

কী কী থাকছে সেখানে?

হিডকোর চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন জানালেন, চিনের প্রাচীর, চিলির ইস্টার আইল্যান্ড মূর্তি, রোমের কোলোসিয়াম, জর্ডনের পেট্রা, ব্রাজিলের ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার, মিশরের পিরামিড এবং ভারতের তাজমহল— সবেরই দর্শন মিলবে সেখানে। প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, রীতিমতো কর্মযজ্ঞ চলছে সেখানে। কয়েকশো কর্মী সেখানে ব্যস্ত ‘বিস্ময়’ গড়তে। ইতিমধ্যেই প্রায় তৈরি কোলোসিয়াম, পেট্রা। কেউ পিরামিড তৈরি করছেন, কেউ বা গড়ছেন ডজন ডজন তুতানখামেনের মূর্তি। আর একদল আবার ব্যস্ত ব্রাজিলের ক্রাইস্ট দ্য রিডিমারের আদলে প্রায় ৬০ ফুট লম্বা যিশুর মূর্তি বানাতে।

কিন্তু হঠাৎ কেমন দেখাবে ঝাঁ চকচকে নিউ টাউনের বুকে কোনও গুহার মতো বাড়ি কিংবা পিরামিড?

শুধু আদলে গড়ে দিয়েই যে ক্ষান্ত হতে চায় না সরকার। প্রতিটি নির্মাণকে আকর্ষণীয় করে তুলতে তৈরি করা হবে মানানসই পরিবেশ। রং, শব্দ, আলো— সবটাই আসলের মতো ফুটিয়ে তোলা হবে বলে জানান দেবাশিসবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘বিশ্বের আশ্চর্যতম ওই সব স্থানের পুরো ‘অ্যাম্বিয়েন্স’ ধরে রাখতে চাই আমরা।’’ এর জন্য যা যা করা প্রয়োজন, সবটাই হিডকো করবে বলে জানান দেবাশিসবাবু।

রোমের কোলোসিয়াম

দর্শকেরা কি এ সব শুধু দূর থেকে চোখের দেখাই দেখবেন?

মোটেও না। হিডকোর কর্তা জানান, কেউ চাইলে চিনের প্রাচীরের উপর দিয়ে হেঁটেও দেখতে পারেন। দেওয়ালের গায়ে খোদাই করা হবে তার ইতিহাস। মানানসই ধ্বনি এবং আলোর ব্যবহারে তৈরি করা হবে এমনই আবহ, যাতে দর্শকের মনে হয় তাঁরা সত্যিই যেন চিন দেশে গিয়ে উপস্থিত। যেন আসল চিনের প্রাচীরের কাছেই পৌঁছে গিয়েছেন তাঁরা। পেট্রার সেই গুহা বাড়িতে ওঠার ব্যবস্থাও থাকবে সকলের জন্য। ভিতরে ঢুকে ঘুরে দেখা যাবে রোমের কোলোসিয়ামও।

ব্রাজিলের ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার

এখনও অনেকটাই কাজ বাকি তাজমহলের। মূল রাস্তার পাশেই গড়ে উঠবে ভারতীয় এই ‘ওয়ান্ডার’। স্টিলের পাতের উপরে হবে ফাইবারের সুক্ষ্ম কাজ। ফুটিয়ে তোলা হবে সেই রং, সেই কারুকাজ।
একটু একটু করে তা তৈরি হচ্ছে ওয়ার্কশপে। তাজমহলকে একেবারে নিখুঁত ভাবে গড়ে তোলাই শিল্পীর বড় চ্যালে়ঞ্জ বলে মনে করছেন ওই কাজে যুক্ত অনেকে।

এই সব স্থাপত্যের পিছনে রয়েছেন কোন শিল্পী? দেবাশিসবাবু জানান, রাজ্যেরই শিল্পী রূপচাঁদ কুণ্ডু দিনরাত পরিশ্রম করছেন নিখুঁত ভাবে ‘ওয়ান্ডার পার্ক’ গড়ে তুলতে। কত খরচ হতে পারে গোটা প্রকল্পের জন্য? এখনই কিছু বলতে চাননি মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং হিডকো কতৃর্পক্ষ। হিডকোর বক্তব্য, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ওই সব স্থাপত্য তারা গড়ে তুলে চায় বাংলার মাটিতে। বিশ্ববঙ্গের রূপকার মুখ্যমন্ত্রী চান মানুষকে এই উপহার দিতে। ইকো পার্ককে আরও সুন্দর করে গোটা পৃথিবীর কাছে আকর্ষণীয় করতে চান তিনি। গোটা কাজটা ভাল ভাবে শেষ করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

পাশাপাশি কাজ চলছে তাজমহল, চিনের প্রাচীর ও জর্ডনের পেট্রার প্রতিরূপ তৈরিরও। — নিজস্ব চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন