Coronavirus

বড়বাজারের ঘিঞ্জি গলিতে এখনও সচেতনতার অভাব

বড়বাজারের এক বিক্রেতা জানান, সেখানে করোনা-আতঙ্কের জের মঙ্গলবার পর্যন্ত পড়েনি।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২০ ০৩:২৭
Share:

যেমন খুশি: কেউ মাস্ক পরেছেন, কেউ আবার মাস্ক পরে থাকলেও নাক-মুখের অংশ রয়ে গিয়েছে অনাবৃতই। বড়বাজারে। নিজস্ব চিত্র

‘‘করোনাভাইরাস ২০ টাকা! করোনাভাইরাস ২০ টাকা!’’

Advertisement

এ ভাবেই চিৎকার করে বড়বাজারের ক্যানিং স্ট্রিটে দাঁড়িয়ে মাস্ক বিক্রি করছিলেন এক যুবক। চিৎকার শুনে তাঁকে ঘিরে ধরলেন পথচলতি একঝাঁক মানুষ। কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিক্রি হয়ে গেল প্রায় পঞ্চাশটি মাস্ক।

বড়বাজারের ক্যানিং স্ট্রিটের ভিড়ে ঠাসা ফুটপাতে রকমারি কেনাবেচার সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছে এই মাস্ক বিক্রি। যদিও সেখানকার মেহতা বিল্ডিংয়ের অজস্র ওষুধের দোকানে কোথাও মিলছে না মাস্ক। এমনকি, কয়েকটি দোকানে লেখা রয়েছে, ‘নো মাস্ক, নো স্যানিটাইজ়ার’। সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলেছেন, বড়বাজারে ওষুধের দোকানে পাইকারি বা খুচরো মাস্ক কিনতে পাওয়া যাচ্ছে না। তা হলে ফুটপাতে হকারদের কাছে মাস্ক মিলছে কী ভাবে? ক্যানিং স্ট্রিটে যে যুবক মাস্ক বিক্রি করছিলেন তাঁকে অবশ্য জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়। মানুষের অভিযোগ, পুরো বড়বাজার জুড়েই মাস্ক নিয়ে কালোবাজারি চলছে। তা ঠেকাতে এক জন বিক্রেতাকে আটক করে কোনও লাভ হবে না।

Advertisement

করোনাভাইরাস নিয়ে যখন শহর জুড়ে বিভিন্ন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তখন শহরের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা বড়বাজারে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা কার্যত কিছুই নেই। বড়বাজারের ক্যানিং স্ট্রিট থেকে শুরু করে ওল্ড চায়না বাজারের আশপাশের অলিগলি ঘুরে দেখা

গেল, চেনা ঘিঞ্জি ছবিটা সে ভাবে পাল্টায়নি। ধাক্কাধাক্কি করে পথ চলা থেকে শুরু করে মোটবাহকদের চিৎকার— সবই রয়েছে এক রকম। বড়বাজারের এক বিক্রেতা জানান, সেখানে করোনা-আতঙ্কের জের মঙ্গলবার পর্যন্ত পড়েনি।

বড়বাজার ফায়ারওয়ার্কস ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক কর্মকতা দীপঙ্কর পাল মনে করেন, বড়বাজার আছে বড়বাজারেই। তিনি বলেন, ‘‘সরকার থেকে জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। কিন্তু বড়বাজারে জমায়েত হবে না, এমন তো হতে পারে না। তা হলে বড়বাজার বন্ধই করে দিতে হয়। সারা দেশ থেকে মানুষ এখানে আসেন।

অথচ এখানে সরকারের তরফে সচেতনতার কোনও প্রচার নেই বললেই চলে।’’ বড়বাজারের আর এক ব্যবসায়ী সমীরণ পাল বলেন, ‘‘এখানে ভিন্‌ রাজ্যের ব্যবসায়ী থেকে ট্রাকচালক, মোটবাহক কত ধরনের মানুষ রোজ আসেন। তাঁদের বেশির ভাগের মধ্যেই কোনও সচেতনতা নেই। মাইকে যদি প্রচার চালানো যেত বা বেশি সংখ্যায় পোস্টার সাঁটানো যেত, তা হলে ভাল হত।’’

তবে বড়বাজার ঘুরে দেখা গেল, কয়েক জন মাস্ক পরে বসে রয়েছেন। হাত জীবাণুমুক্ত করার জন্য স্যানিটাইজ়ারও রেখেছেন। পাইকারি ছাতা বিক্রেতা অরুণ সিংহ বলেন, ‘‘দোকানে সারাদিন ধরে কত ধরনের মানুষ আসছেন। ঘিঞ্জি দোকানে খুব কাছ থেকে তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে হয়। তাই মাস্ক পরেছি। সঙ্গে রেখেছি স্যানিটাইজ়ার। কিন্তু বড়বাজারে সার্বিক সচেতনতা সত্যিই কম।’’

বছরখানেক আগে পুড়ে যাওয়া বাগড়ি মার্কেটও ফিরে এসেছে আগের চেহারায়। ওই বাজারে গিয়ে দেখা গেল, কয়েক জন বিক্রেতা স্যানিটাইজ়ার রেখেছেন

দোকানে। সবাই অবশ্য জীবাণুনাশকে ভরসা করেননি। মার্কেটে ঢোকার মুখেই এক বিক্রেতা জয়দেব ধর হাত ধোয়ার জন্য রেখেছেন গঙ্গাজল। তিনি বললেন, ‘‘স্যানিটাইজ়ার নয়, গঙ্গার জলই হাত ধোয়ার সব থেকে ভাল পদ্ধতি! হাত শুধু পরিষ্কারই নয়, শুদ্ধও হয়ে যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন