Coronavirus

বিদেশি দেখলেই আতঙ্ক পাড়ায় পাড়ায়

আবুধাবি থেকে এক প্রৌঢ়া শিবপুরে তাঁর স্বামীর দুর্গতির বিষয়ে ফেসবুকে ভিডিয়ো করে মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২০ ০২:২০
Share:

ছবি পিটিআই।

এক দিকে বিপদের সময়ে কিছু নাগরিকের হঠকারিতা, অন্য দিকে লাগামছাড়া আতঙ্ক। কলকাতা তথা রাজ্যে ‘লকডাউন’ বা সম্পূর্ণ অচলাবস্থা জারির প্রাক-মুহূর্তে বিদেশ-ফেরত নাগরিকদের ঘিরে টানাপড়েন জারি থাকল রবিবারও।

Advertisement

অভিযোগ, প্রশাসন তো বটেই, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবেদনকেও কানে তুলছেন না বিদেশ-ফেরত অনেকে। ঘরবন্দি না হয়েও তাঁরা বাইরে ঘুরছেন। হরিদেবপুর থানা এলাকার জেমস লং সরণির বৈষ্ণবী গার্ডেন আবাসনে আমেরিকা ফেরত এক দম্পতির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। তাঁদের প্রতিবেশিরা দ্বারস্থ হচ্ছেন পুলিশের কাছে, স্থানীয় পুর প্রতিনিধিদের কাছে। গত ১৩ মার্চ তাঁরা আমেরিকা থেকে কলকাতায় ফিরেছেন।

আবাসিকেরা জানান, প্রথম দু’দিন বিষয়টি তাঁরা বুঝতে পারেননি। ১৫ তারিখ দেখা যায় তাঁদের। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর শেফালি প্রামাণিক রবিবার বলেন, ‘‘আমিও অনুরোধ করেছি। কিন্তু, উনি শুনতে রাজি নন। আবাসিকদের বলেছি পুলিশকে জানাতে।’’ ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আবাসিকেরা সই সংগ্রহ করে আবাসিক সমিতির সম্পাদককে দিয়েছেন। আবার বিপরীত চিত্র হিসেবে দেখা যাচ্ছে আতঙ্কের জেরে সুস্থ মানুষকেও ঘরবন্দি করার চেষ্টা চলছে। এয়ার ইন্ডিয়ার দাবি, অনেক জায়গায় তাঁদের বিমান সেবিকারাদের ঘরবন্দি থাকতে চাপ সৃষ্টি চলছে।

Advertisement

আবুধাবি থেকে এক প্রৌঢ়া শিবপুরে তাঁর স্বামীর দুর্গতির বিষয়ে ফেসবুকে ভিডিয়ো করে মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছেন। মহিলার স্বামী রয়েছেন শিবপুরের বাড়িতে। মহিলার দাবি, ‘‘বাড়ি ফিরেছি এমন গুজব রটিয়ে আমার স্বামীকে হেনস্থা করা হচ্ছে। আগামী এক মাস আমার আবুধাবিতেই থাকার কথা। ফিরতে হলেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা কী ভাবে নিতে হয়, তা জানি।’’

ইতিমধ্যে দমদমের করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির পুত্র-পুত্রবধূ পরিচয় দিয়ে একটি ছবি হোয়াটসঅ্যাপে ঘুরছে। ছবিটি এক বিদেশিনীর। বলা হচ্ছে, তাঁরা নাকি ওই ব্যক্তির দেহে করোনার সংক্রমণ ঘটিয়েছেন। অথচ, করোনা আক্রান্ত ওই ব্যক্তি ট্রেনে করে ভিন্‌ রাজ্য থেকে ফিরেছিলেন। তাঁর ছেলে আমেরিকায় রয়েছেন। সিঙ্গাপুর ফেরত এক ব্যক্তিকে নিয়েও দমদম থানায় অভিযোগ হয়েছে।

শ্যামবাজারের কাছের একটি পাড়ায় এক দল বিদেশি রয়েছেন রটে যাওয়ায় শনিবার মধ্য রাতে স্থানীয়েরা উৎকণ্ঠায় নানা জায়গায় ফোন করছেন। আবার কলকাতারই বাসিন্দা এক বিদেশিনীও রাস্তায় হেনস্থার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ। টেরিটিবাজারের বাসিন্দা এক ভারতীয় চিনা যুবকের ক্ষোভ, ‘‘ আমায় দেখে লোকজনের মুখ গম্ভীর হয়ে যাচ্ছে। কী করে বোঝাই আমি জীবনে চিনে যাইনি। বাড়িতে প্রায়ই পরোটা, তরকারি খাই। তা সত্ত্বেও লোকে ধরেই নিচ্ছে আমি মারণ ভাইরাস বয়ে বেড়াচ্ছি।’’

করোনাভাইরাস এখনকার মতো প্রধানত বিদেশ থেকে আসা লোকের শরীর থেকে ছড়াক বা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে ঢুকে পড়ুক— সঙ্কটের মুহূর্তে মাথা ঠান্ডা রাখার কথাই বার বার বলছেন লালবাজারের কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন