Coronavirus

করোনা আতঙ্ক, বাগবাজারে স্থানীয় নেতার ফতোয়ায় একঘরে পরিবার

করোনা সন্দেহে সংজ্ঞাহীন পড়শিকে না ছোঁয়া, করোনা রোগী সন্দেহে সৎকারে বাধা দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেই চলেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদাদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২০ ১৯:২৭
Share:

উত্তর কলকাতার রাজবল্লভ পাড়া।—নিজস্ব চিত্র।

প্রশাসনের তরফে বার বার সচেতন করা হচ্ছে, ‘করোনার সঙ্গে লড়াই, রোগীর সঙ্গে নয়’। কিন্তু তার পরেও করোনা সন্দেহে সংজ্ঞাহীন পড়শিকে না ছোঁয়া, করোনা রোগী সন্দেহে মৃতের সৎকারে বাধা দেওয়ার মতো ঘটনা খাস কলকাতা শহরে একের পর এক ঘটে চলেছে। সেই তালিকায় যোগ হল উত্তর কলকাতার রাজ বল্লভপাড়া স্ট্রিটের একটি ঘটনা। ওই এলাকার এক বাসিন্দার অভিযোগ, পরিবারের সকলের কোভিড টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ। তা সত্বেও কার্যত একঘরে করে রাখা হয়েছে তাঁদের। আর যার ফতোয়ায় ‘একঘরে’, তিনি ওই এলাকারই তৃণমূল যুব নেতা।

Advertisement

রাজ বল্লভপাড়া স্ট্রিটের মুখার্জি পাড়ার বাসিন্দা ঘোষ পরিবার। ওই এলাকারই পাশাপাশি দু’টি বাড়িতে তাঁরা থাকেন। গত ২১ জুলাই তাঁদের পরিবারের এক সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার পরেই চিকিৎসকদের পরামর্শে পরিবারের বাকি ৯ সদস্য সরকার অনুমোদিত একটি বেসরকারি ল্যাব থেকে কোভিড পরীক্ষা করান। ঘোষ পরিবারের দাবি, ওই পরীক্ষায় তাঁদের পরিবারের ৫ সদস্যের রিপোর্ট পজিটিভ পাওয়া যায়। মূলত মৃত ব্যক্তি যে বাড়িতে থাকতেন সেই বাড়ির আরও পাঁচ জনের রিপোর্ট পজিটিভ হয়। বাকি ৪ সদস্যের রিপোর্ট নেগেটিভ। গত ২৩ জুলাই তাঁরা ওই রিপোর্ট হাতে পান বলে দাবি ঘোষ পরিবারের সদস্যদের।

ওই পরিবারের যে ক’জনের কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ, তাঁদের এক জন সুবীর ঘোষ। তিনি অভিযোগ করেন, কয়েক দিন আগে তিনি পাড়ার মিষ্টির দোকানে গেলে দোকানদার তাঁকে জানিয়ে দেন, তিনি যেন আর না আসেন। দোকানদার তাঁকে জানান, স্থানীয় নেতা শান মিত্র বারণ করেছেন সুবীরদের পরিবারকে কিছু বিক্রি করতে। সুবীরের অভিযোগ, ‘‘শুধু মিষ্টির দোকান নয়, আমাদের পরিবারের বাকিদেরও একই অভিজ্ঞতা হয় এলাকার অন্য দোকানে গেলে। সবাই বলে, আমাদের পরিবারকে এখন জিনিসপত্র বিক্রি করতে বারণ করা হয়েছে।”

Advertisement

আরও পড়ুন: সিঙ্গাপুরে প্রয়াত অমর সিংহ, কিডনির অসুখে ভুগছিলেন দীর্ঘ দিন

ওই মিষ্টির দোকানের মালিকের স্ত্রী দীপা পাল। তিনিও স্বীকার করেন, এলাকার কিছু লোকজন এবং স্থানীয় নেতা তাঁদের বারণ করেছিলেন ঘোষ পরিবারকে মালপত্র বিক্রি না করতে। কারণ তাঁরা নাকি সবাই করোনা রোগী। সুবীরের আপত্তি সেখানেই। তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা সবাই এক বাড়ির বাসিন্দা। তাঁরা সবাই গৃহ পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। তাঁরা কেউ বাইরে বেরচ্ছেন না। কিন্তু আমি বা আমার পরিবারের বাকি ৩ সদস্য তো নেগেটিভ। আমরা আক্রান্ত না হওয়া সত্ত্বেও কেন এ রকম করা হবে?”

ঘোষ পরিবারের এক সদস্য এর পর কলকাতা পুরসভার হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে সাহায্য চান। শনিবার তিনি বলেন, ‘‘পুরসভা প্রথমে আমাদের প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু যিনি ওই ফতোয়া দিয়েছেন তিনি তো ওই কাউন্সিলরের ছেলে। সব শুনে পুরসভা থানাতে জানাতে পরামর্শ দেয়।”

এর পর ঘোষ পরিবার তাঁদের আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওই এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। যে স্থানীয় তৃণমূল নেতার ফতোয়া ঘিরে এই গন্ডগোল, সেই শান মিত্র এলাকার যুব তৃণমূলের সভাপতি। এ দিন তাঁর যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘মনে হয় কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আসলে এলাকার লোকজনই আমাকে ফোন করে অভিযোগ জানায় যে, ওই পরিবারের লোকজন করোনা পজিটিভ হয়েও এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওরা যেন বাইরে ঘোরাঘুরি না করে, দোকান-বাজার না করে— সংক্রমণ রুখতে তাই এটাই বলেছিলাম।” কিন্তু কোভিড নেগেটিভ হলেও চলাফেরায় বাধা কেন? জবাবে শানের বক্তব্য, ‘‘আমি কী করে জানব যে নেগেটিভ? ওঁরা রিপোর্ট পাঠালেই তো মিটে যেত।”

আরও পড়ুন: উত্তরাখণ্ডের লিপুলেখে এ বার সেনা সমাবেশ চিনের​

সুবীর-সহ ঘোষ পরিবারের প্রশ্ন, এলাকার লোক যদি অভিযোগ জানিয়ে থাকে, তা হলে ওই নেতা তো পুলিশ এবং স্বাস্থ্য দফতরকে জানাতে পারতেন। কারণ স্বাস্থ্য দফতরও তো জানে যে, কে পজি়টিভ এবং কে নেগেটিভ!

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন