Coronavirus

প্রাক্তন ও বর্তমানের মুষ্টিবদ্ধ হাত পৌঁছে দিচ্ছে ত্রাণ

উল্টোডাঙার কিচেন থেকে খাবার দেওয়া হয় কলেজ স্ট্রিটের ফুটপাতবাসীদের। এত দিন নিজেরাই তা দিচ্ছিলেন।

Advertisement

মধুমিতা দত্ত

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২০ ০৩:৪৯
Share:

প্রতীকী ছবি

ত্রাণে পাওয়া প্রতিদিনের খাবার নিজেদের মধ্যে বণ্টন করছেন নিজেরাই। কলেজ স্ট্রিট চত্বরের ফুটপাত যাঁদের ঠিকানা। ওঁদের বেশির ভাগই ফলপট্টিতে ফল ওঠানো-নামানোর কাজ করেন বা ভ্যান টানেন। কাজ সেরে অনেক রাতে খালি কলেজ স্ট্রিটের ফুটপাতে ফিরে রান্না সেরে, সেখানেই ঘুম। লকডাউন কেড়ে নিয়েছে ওঁদের সেই রুজি-রুটি।

Advertisement

ওঁদের যেমন দিনলিপি, তাতে দেখা হওয়ার কথা নয় ওই চত্বরে থাকা প্রেসিডেন্সি বা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের সঙ্গে। ফলে উভয়ের মধ্যে পরিচয়ও ছিল না। কিন্তু ওঁদের কষ্টের কথা শুনে এগিয়ে আসে ‘কোয়রান্টিনড স্টুডেন্টস ইউথ নেটওয়ার্ক’। প্রেসিডেন্সি এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীদের উদ্যোগে তৈরি এই সংগঠন। সংগঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটর সায়েন্স বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র মন্মথ রায়। যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি, কলকাতা-সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পড়ুয়াদের নিয়ে ত্রাণকার্য চালাচ্ছে সংগঠনটি। এই শহর তো বটেই, রাজ্য জুড়ে পৌঁছে যাচ্ছে ত্রাণ। সাহায্য পৌঁছে যাচ্ছে দিল্লি, মুম্বই এবং হায়দরাবাদেও।

রবিবার মন্মথ জানালেন, সারা রাজ্যে তাঁদের ২০টি কমিউনিটি কিচেন চলছে। উল্টোডাঙার কিচেন থেকে খাবার দেওয়া হয় কলেজ স্ট্রিটের ফুটপাতবাসীদের। এত দিন নিজেরাই তা দিচ্ছিলেন। এ বার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ফুটপাতেরই কয়েক জন বাসিন্দাকে। মন্মথ বলেন, ‘‘আজমিরা, ফিরোজদা, আকাশ— ওঁরাই কমিউনিটি কিচেন থেকে ভ্যানে করে খাবারের প্যাকেট নিয়ে গিয়ে কলেজ স্ট্রিটের ফুটপাতবাসীদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: বাঁদর-হনুমানের তাণ্ডবে অতিষ্ঠ দমদম-বারাসত

ইতিমধ্যেই কলকাতায় আটকে পড়া কাশ্মীরি শাল বিক্রেতাদের রেশন দেওয়া শুরু করেছে সংগঠনটি। এখনও পর্যন্ত কলকাতায় আট হাজারের মতো রান্না করা খাবারের প্যাকেট বিলি করেছে তারা। রাজ্য জুড়ে প্রায় ৩২ হাজার প্যাকেট বিলি হয়েছে। রেশন পৌঁছে দেওয়া হয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার পরিবারকে। ফেসবুকের মাধ্যমে সংগঠন আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানালে সাড়া দেন বহু মানুষ। সেই সাহায্যকারীদের মধ্যে রয়েছেন দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা প্রাক্তনীরাও। তবে জেলার বহু মানুষও সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন বলে জানালেন মন্মথ।

সংগঠনের হয়ে দিল্লিতে একটানা কাজ করে চলেছেন দেবজিৎ ঠাকুর এবং সরগম শর্মারা। দু’জনেই প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী। জার্মানির এক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণারত দেবজিৎ আপাতত দিল্লিতে রয়েছেন। সরগম পড়ছেন দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্সে। দেবজিৎ জানালেন, হজ রানি, শাহপুর জাট-সহ দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় চলছে রেশন এবং খাবারের প্যাকেট বণ্টন। পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদেরই মূলত ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। যাঁদের মধ্যে বাঙালি জরিশিল্পীরা রয়েছেন। রয়েছেন মাস কয়েক আগের সংঘর্ষে গৃহহীন বহু মানুষ।

সাহায্যের হাত পৌঁছে গিয়েছে মুম্বই, হায়দরাবাদেও। মুম্বইয়ের সান্তাক্রুজ, ধারাভি এবং বান্দ্রা এলাকায় চলছে ত্রাণকার্য। মুম্বইয়ের ত্রাণ প্রাপকদের বলা হয়েছে, কোনও মুদিখানা থেকে চাল, ডাল-সহ প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে নিতে। সেই মুদির দোকানদারকে অনলাইনে টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

এ দিকে, প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী ও পড়ুয়াদের বাড়িতে বিনামূল্যে মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ার পৌঁছে দেওয়া শুরু করেছে ‘প্রেসিডেন্সি প্রাক্তনী সংসদ’। সংসদের সম্পাদক বিভাস চৌধুরী জানান, বয়স্কদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এই পরিষেবা কলকাতা ও সল্টলেকে সীমাবদ্ধ। প্রয়োজন বুঝে পরিষেবার পরিধি বাড়ানো হবে।

আরও পড়ুন: অনলাইন ক্লাসেও নানা দুষ্টুমি পড়ুয়াদের, থামাতে থাকছে মনিটর

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেনআপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন