প্রতীকী ছবি।
কিশোরীকে দিনের পর দিন ধর্ষণের অভিযোগে তার সৎবাবাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল আলিপুরের পকসো বিশেষ আদালত। বুধবার বিশেষ দায়রা বিচারক সোনিয়া মজুমদার সেই ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৬৫ হাজার টাকার জরিমানার নির্দেশ দেন।
আদালত সূত্রের খবর, গত ২০১৫ সালে মানিকতলার বাসিন্দা বছর তেরোর ওই নাবালিকা তার সৎবাবার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনে। ধর্ষণের ফলে ওই নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বাও হয়ে পড়ে। তার গর্ভপাত করাতে হয়। ওই নাবালিকাকে নিয়ে তার মা মানিকতলা থানার দ্বারস্থ হন। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ওই নাবালিকার সৎবাবাকে গ্রেফতার করে। সাড়ে তিন বছরের মাথায় এ দিন আদালত থেকে ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে অভিযুক্তকে সাজা শোনানো হয় বলে জানিয়েছেন আলিপুর জাজেস কোর্টের প্রধান সরকারি কৌসুঁলি রাধাকান্ত মুখোপাধ্যায় এবং বিশেষ সরকারি আইনজীবী মাধবী ঘোষ। এ দিন রাধারান্তবাবু বলেন, ‘‘সাজা ঘোষণার পাশাপাশি ওই নাবালিকাকে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য স্টেট লিগাল সার্ভিস অথরিটিকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে অভিযুক্তের জরিমানা বাবদ ধার্য ৬৫ হাজার টাকার অর্ধেকও নাবালিকাকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।’’
ঘটনাটি ঠিক কী ঘটেছিল?
সরকারি আইনজীবী সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২০১৫ সালের মে মাসে মানিকতলা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের হয়। তাতে বছর তেরোর সেই নাবালিকা জানায়, তার মা পরিচারিকার কাজ করতেন। কিন্তু সৎবাবা বিশেষ কোনও কাজ করত না। অভিযোগ, তার মা কাজে বেরিয়ে গেলেই ফাঁকা বাড়িতে দিনের পর দিন সৎবাবা ওই নাবালিকাকে ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করত। কাউকে কিছু বললে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেওয়া হত তাকে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কয়েক মাস পরে কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে পুরো বিষয়টি জেনে ফেলেন তার মা। এর পরে ওই নাবালিকাকে নিয়ে তার মা নিজের বাবা-মায়ের বাড়ি চলে যান এবং সব কথা খুলে বলেন। পরে বাপের বাড়ির সাহায্যে ওই মহিলা মেয়েকে নিয়ে হাজির হন মানিকতলা থানায়। সেখানেই ওই নাবালিকা সৎবাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ পেয়েই পুলিশ কলকাতা শিশুকল্যাণ সমিতির সামনে ওই কিশোরীকে হাজির করে। তাতে শিশুকল্যাণ সমিতি মেয়েটির সৎবাবার ডিএনএ পরীক্ষা এবং নাবালিকার গর্ভপাতের নির্দেশ দেয়। ডিএনএ পরীক্ষাতেও সৎবাবার সঙ্গে নাবালিকার গর্ভস্থ শিশুর ডিএনএ মিলে যায় বলে জানিয়েছেন সরকারি আইনজীবী।
অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরেই পুলিশ ওই বছরের অগস্ট মাসে স্বপনকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ (ধর্ষণ), ৩১৩ (ধর্ষণের ফলে অন্তঃসত্ত্বার জেরে গর্ভপাত) ৫০৬- (২এ) প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি এবং প্রোটেকশন অব চিল্ড্রেন ফ্রম সেক্স্যুয়াল অফেন্সেস বা পকসো-র ৬ নম্বর ধারায় মামলা রুজু করে অভিযোগ দায়ের করে। বুধবার সাড়ে তিন বছরের মাথায় সেই মামলাতেই আলিপুর পকসো বিশেষ আদালত এই সাজা ঘোষণা করল।