থোড়াই কেয়ার: বার বার প্রচার সত্ত্বেও হুঁশ ফিরছে না শহরবাসীর একাংশের। তারই চিত্র খন্না মোড়ের কাছে। মঙ্গলবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
কয়েক সপ্তাহ ধরেই দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। গত কয়েক দিনে দৈনিক সংক্রমণ প্রায় হাজার ছুঁয়েছে। শনি ও রবিবার জেলায় আক্রান্ত হন যথাক্রমে ৯৯২ ও ৯৯৩ জন। দৈনিক সংক্রমণ বাড়ায় অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে। এক সপ্তাহ আগে জেলায় মোট অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজারের আশেপাশে। সেই সংখ্যাটাই এখন আট হাজার ছুঁই ছুঁই। মৃতের পরিসংখ্যানও ভয় বাড়াচ্ছে। গত বৃহস্পতিবারই জেলায় মৃত্যু হয় ১১ জন করোনা আক্রান্তের। যা সাম্প্রতিক বেশ কয়েক দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। সোমবার জেলায় মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা স্বাস্থ্য জেলায় বারুইপুর, যাদবপুর-সহ একাধিক হাসপাতালে কোভিড ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। চালু হয়েছে অনেকগুলি সেফ হোমও। ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলায় কোভিড রোগীদের জন্য ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৫০ শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সেখানে ভর্তি রয়েছেন ১৩০ জন কোভিড রোগী। ডায়মন্ড হারবার স্টেডিয়াম মাঠে ১০০ শয্যার সেফ হোমও চালু হয়েছে। কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালের পুরনো ভবনে ২০ শয্যার কোভিড ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে।
তবে পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি গড়িয়া স্টেশন এলাকার বাসিন্দা এক রোগীকে বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। কিন্তু পরে তাঁকে যাদবপুরের কেএস রায় হাসপাতাল, সেখান থেকে হাওড়ায় বালিটিকুড়িতে স্থানান্তরিত করে দেওয়া হয়। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। করোনা আক্রান্ত এবং অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়া এক রোগীকে নির্দিষ্ট কোভিড ওয়ার্ডে ভর্তি করার পরেও কেন তাঁকে চিকিৎসা না করে বার বার স্থানান্তরিত করা হল, সেই প্রশ্ন তোলেন মৃতের পরিবারের লোকজন। এই ঘটনায় কোভিড ওয়ার্ডগুলির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এ ছাড়াও, মানুষের অসচেতনতার ছবিও বার বার সামনে আসছে। এখনও বিধি ভেঙে হাটে-বাজারে ভিড় হচ্ছে। সরকারি নিয়ম ভেঙে পঞ্চাশের বেশি লোক নিয়ে বিয়েবাড়ির আয়োজনও হচ্ছে অনেক জায়গায়। বিধি নিয়ে কড়াকড়ি শুরু হওয়ার পরেও গ্রামে-গঞ্জে, চায়ের ঠেকে এক শ্রেণির মানুষের জমায়েত রোখা যাচ্ছে না। পুলিশ ধরপাকড় চালাচ্ছে। কিন্তু পুলিশের চোখে এড়িয়ে বিধিভঙ্গ চলছে অনেক জায়গাতেই। সাধারণ মানুষের মধ্যে এই সচেতনতার অভাবই এই মুহূর্তে মাথাব্যথার কারণ জেলা স্বাস্থ্যকর্তাদের। দক্ষিণ ২৪ পরগনা স্বাস্থ্য জেলার এক কর্তা বলেন, “প্রশাসন সব রকম ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু মানুষ সচেতন না হলে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।”