স্মৃতিতে আয়লা, শিক্ষা নিয়ে প্রস্তুতি পুলিশের

আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, শুক্রবার রাতেই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কলকাতায় বৃষ্টি ও ঝড় শুরু হতে পারে। পরিস্থিতি যাতে নাগালের বাইরে না গড়ায় সে জন্য আগাম একাধিক সতর্কতা নিয়েছে কলকাতা পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৯ ০০:৫৬
Share:

আয়লায় তাণ্ডবে গাড়ির উপ ভেঙে পড়েছে গাছ।— ফাইল চিত্র।

আয়লার অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে ঘুর্ণিঝড় ফণীর সঙ্গে মোকাবিলা করতে চাইছে কলকাতা পুলিশ।

Advertisement

আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, শুক্রবার রাতেই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কলকাতায় বৃষ্টি ও ঝড় শুরু হতে পারে। পরিস্থিতি যাতে নাগালের বাইরে না গড়ায় সে জন্য আগাম একাধিক সতর্কতা নিয়েছে কলকাতা পুলিশ। সদর দফতর লালবাজারে ৭২ ঘণ্টার জন্য খোলা হচ্ছে বিশেষ কন্ট্রোল রুম। যার নম্বর ০৩৩-২২১৪৩২৩০ এবং ১০০। সেখান থেকেই পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হবে এবং পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করা হবে। কলকাতা পুলিশ জানায়, যে কোনও সমস্যায় শহরবাসী ওই নম্বরে ফোন করলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ওই কন্ট্রোল রুমে থাকবেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (দুই) জাভেদ শামিম–সহ সিইএসসি, পূর্ত দফতর, কলকাতা পুরসভার মতো বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকেরা। যাতে যে কোনও সমস্যা তৈরি হলে সেটির সমাধান কার করার কথা তা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি এড়ানো যায়।

Advertisement

পাশাপাশি কলকাতা পুলিশের সব ক’টি ডিভিশনেই একটি করে কন্ট্রোল রুম থাকছে। সেই সব ডিভিশনে কন্ট্রোল রুমগুলি নিয়ন্ত্রণ করবেন সংশ্লিষ্ট দফতরের ডিসি-রাই। তৈরি থাকবে কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা দলও। প্রতি ডিভিশনে একটি করে গাড়ি ছাড়াও বিপর্যয় মোকাবিলা দলের কম্পোজিট একটি গাড়িও তৈরি রাখা হবে। তৈরি রাখা হচ্ছে পুলিশের নৌকাও। গাছ পড়ে, বাড়ি ভেঙে কিংবা অন্য ভাবে কেউ আটকে পড়েছেন খবর পেলে ওই গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছবে। আজ, শুক্রবার সকাল থেকে আগামী ৭ তারিখ পর্যন্ত ওই কন্ট্রোল রুম খুলে রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

কলকাতা পুলিশ জানাচ্ছে, আয়লার সময়ে শহরের রাস্তায় প্রায় হাজার খানেক গাছ উপড়ে পড়েছিল। তাতে শহরে ব্যাহত হয়েছিল যান চলাচল। তা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার কলকাতার ২৫টি ট্র্যাফিক গার্ড এলাকায় পড়ে থাকা গাছ কেটে রাস্তা সাফাইয়ের জন্য দুই থেকে তিনটি দল তৈরি থাকবে। যাতে পুলিশকর্মীরা দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারেন। একই সঙ্গে পর্যাপ্ত বিকল্প আলোর ব্যবস্থা রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

লালবাজার সূত্রের খবর, ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্রয়ের জন্য প্রতিটি থানাকে নিজেদের এলাকার স্কুল কিংবা কলেজের সঙ্গে কথা বলতে বলা হয়েছে। পুলিশ জানায়, শহরের পুরনো ও জরাজীর্ণ বাড়ির বাসিন্দাদের শুক্রবার সকাল থেকে সাময়িক ভাবে অন্যত্র চলে যেতে অনুরোধ করা হয়েছে। পুলিশকেও তাঁদের আশ্রয়ের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে বহুতলের ছাদে ও বারান্দা থেকে ফুলের টব কিংবা অন্যান্য জিনিস সরিয়ে নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় দোকানদারদের আপৎকালীন অবস্থায় খাবারের সামগ্রী মজুত রাখতেও বৃহস্পতিবার অনুরোধ করেছে পুলিশ।

বিভিন্ন ক্লাব এবং এলাকার মানুষকে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখতে বলা হচ্ছে। কলকাতা পুলিশের ট্রেনিং স্কুলে জরুরি ভিত্তিতে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর একটি বিশেষ দল তৈরি রাখা হচ্ছে।

পুলিশ জানায়, শহরের গঙ্গার ঘাটগুলিতে বৃহস্পতিবার রাত থেকে প্রচার চালানো হচ্ছে যাতে নৌকার মাঝিরা ঝড়ের সময়ে নদীতে না যান। ঝড় এবং বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হলে ওই সময়ে গঙ্গায় ফেরি চলাচল বন্ধ রাখার অনুরোধ করা হয়েছে। পরিবহণ দফতরকে অনুরোধ করা হয়েছে শুক্রবার থেকেই শহরে ট্রাম চলাচল বন্ধ করতে। লালবাজারের এক কর্তা জানান, খুব জরুরি কাজ না থাকলে শনিবার সকাল থেকে মানুষকে বাড়ির বাইরে বেরোতে নিষেধ করা হচ্ছে।

একই সঙ্গে কলকাতা শহরের বিভিন্ন হোটেল কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে, সেখানে আসা প্রত্যেক অতিথিকে অনুরোধ করতে, যাতে খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অযথা তাঁরা বাইরে না বার হন। পুলিশের ওই কর্তা বলেন, ‘‘মানুষের জীবনহানি যাতে না ঘটে তার জন্য আমরা সব রকম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা রাখতে বলছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন