Kolkata

পাশে পেয়েছিলেন বিপদে, মেয়ের নামই তাই আইসি

গত বছরের ২৫ মার্চ লকডাউনের এক সকালে টহল সেরে থানায় ফিরছিলেন সঞ্জীববাবু। সুকান্ত সরণির কাছে এক ব্যক্তি তাঁর গাড়ির সামনে হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২১ ০৬:২১
Share:

কোলে আইসি, পাশে অন্য দুই সন্তানকে নিয়ে জ্যোতি। নিজস্ব চিত্র

সন্ধ্যায় সোনারপুর থানায় নিজের ঘরে বসে কাজ করছিলেন আইসি সঞ্জীব চক্রবর্তী। হঠাৎই এক বছরের মেয়েকে কোলে নিয়ে সেখানে প্রবেশ এক মহিলার। জ্যোতি গুপ্ত নামে ওই মহিলা আইসি-কে বললেন, ‘‘স্যর, আমার মেয়ের নাম রেখেছি ‘আইসি গুপ্ত’।’’ প্রথমে কিছুই বুঝে উঠতে পারেননি সঞ্জীববাবু। পরে জ্যোতিই ধোঁয়াশা দূর করেন।

Advertisement

বিষয়টি ঠিক কী?

গত বছরের ২৫ মার্চ লকডাউনের এক সকালে টহল সেরে থানায় ফিরছিলেন সঞ্জীববাবু। সুকান্ত সরণির কাছে এক ব্যক্তি তাঁর গাড়ির সামনে হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন। গাড়ি থামিয়ে কী হয়েছে জিজ্ঞাসা করায় ওই ব্যক্তি সঞ্জীববাবুকে জানান, তাঁর স্ত্রী জ্যোতির প্রসবযন্ত্রণা উঠেছে। কিন্তু কোনও গাড়ি না পাওয়ায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারছেন না তিনি। সব শুনে আর দেরি করেননি আইসি। সুরিন্দর গুপ্ত নামে ওই ব্যক্তির স্ত্রীকে নিজের গাড়িতে তুলে সোনারপুর গ্রামীণ হাসপাতালের দিকে রওনা হন। গাড়িতে ছিলেন সুরিন্দর ও জ্যোতির এক আত্মীয়াও। তবে হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই গাড়িতে একটি কন্যাসন্তান প্রসব করেন জ্যোতি। পরে হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা তাঁর চিকিৎসা করেন। মা ও সদ্যোজাতকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

Advertisement

সোনারপুরের এক চিলতে ভাড়া ঘরের বাসিন্দা জ্যোতি বলেন, ‘‘ছ’বছর আগে আমার যমজ সন্তান হয়েছিল। একটি ছেলে, একটি মেয়ে। লকডাউনের দিন যদি আইসি সাহেব আমাকে গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে না যেতেন, তা হলে আমি অথবা মেয়ে কেউই হয়তো বাঁচতাম না। তাই মেয়ের নাম রেখেছি ‘আইসি’।

জ্যোতি জানান, তাঁর স্বামী সুরিন্দরের একটি হাত নেই। বিয়ের আগে কারখানায় কাজ করার সময়ে দুর্ঘটনায় হাত বাদ দিতে হয়েছিল। শিয়ালদহ স্টেশনের কাছে একটি ভাড়ার চায়ের দোকান রয়েছে সুরিন্দরের। যদিও এখন সেই দোকান তেমন চলে না। দুই ছেলেমেয়ে অপুষ্টিতে ভোগে। তিনি বলেন, ‘‘ওই ঘটনার পরে প্রায় এক বছর সোনারপুর থানার তরফে আমাদের চাল, ডাল, আটা এবং ওষুধ দেওয়া হয়েছে। এখনও প্রতি মাসে দেওয়া হয়। আর আমার একরত্তি মেয়ের ওষুধ থেকে খাবার— সে সবও দেন থানার কর্মীরাই। মেয়ের যতটুকু স্বাস্থ্য ফিরেছে, তা আইসি সাহেবের জন্যই।’’

আর সঞ্জীববাবুর কথায়, ‘‘ওই দিন গাড়ি থেকে নেমে সুরিন্দরের বাড়ির ভিতরে গিয়ে দেখি, যন্ত্রণায় ছটফট করছেন ওই মহিলা। অ্যাম্বুল্যান্সে খবর দিয়ে আনতে সময় লেগে যেত। তাই আমার গাড়িটাকেই অ্যাম্বুল্যান্স হিসেবে ব্যবহার করি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, ওই পরিবারটির আর্থিক
অবস্থা খুবই খারাপ। থানার তরফে বিভিন্ন মানুষকে সাহায্য করা হয়। সেই তালিকায় ওই পরিবারের নামও তোলা হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement