Deaf and Dumb

ক্লান্ত মূক-বধির যুবক উদ্ধার বিমানবন্দরে

২৬ বছরের ওই যুবক ফারহান আবসার মানসিক ভাবেও পুরোপুরি সুস্থ নন। রাজাবাজারে বাড়ি।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:২২
Share:

বিমানবন্দরে বাবা এহসানের সঙ্গে ফারহান। নিজস্ব চিত্র

রাস্তা হারিয়ে ফেলায় তিন-চার দিন ধরে এ দিক-সে দিক ঘুরে বেড়িয়েছেন মূক ও বধির এক যুবক। গলায় ঝোলানো ছিল বাড়ির ঠিকানা, বাবার নাম ও ফোন নম্বর। সম্ভবত মাস্ক না থাকার কারণে কেউই তাঁর ধারেকাছে ঘেঁষেননি। প্রচণ্ড খিদে নিয়ে পথে পথে ঘুরে শেষে কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছে যান তিনি।

Advertisement

২৬ বছরের ওই যুবক ফারহান আবসার মানসিক ভাবেও পুরোপুরি সুস্থ নন। রাজাবাজারে বাড়ি। গত শনিবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে হারিয়ে যান। ধোপদুরস্ত জামাকাপড়। বৃহস্পতিবার কলকাতা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা অফিসারেরা তাঁকে উদ্ধার করার পরে জানিয়েছেন, কেউ ধারেকাছে না আসায় গত কয়েক দিনে প্রবল খিদের কথা সম্ভবত কাউকে জানানোর সুযোগ পাননি তিনি। ফারহানকে গত মঙ্গলবার থেকে বিমানবন্দর চত্বরেই ঘোরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছে বলে কয়েক জন ট্যাক্সিচালক নিরাপত্তা অফিসারদের জানিয়েছেন। নিরাপত্তা অফিসারেরা জানান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জামাকাপড়, জুতো পরা ফারহানকে দেখে প্রথম দিকে হয়তো বিমানযাত্রী বলেই ভুল হয়েছে অনেকের।

বৃহস্পতিবার সকালের দিকে বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালের একতলায় থ্রি সি গেটের বাইরে তাঁকে দেখে প্রথম সন্দেহ হয় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফের ইনস্পেক্টর সুশীল কুমারের। তাঁকে ডেকে কথা বলার চেষ্টা করে লাভ হয় না। ফারহানও কোনও প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি। উল্টে উর্দিধারী আধাসেনার অফিসারদের সামনে ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপতে থাকেন। সিআইএসএফের আর এক অফিসার অনিমেষ চক্রবর্তী বুঝতে পারেন খুব খিদে পেয়েছে ফারহানের। তাঁকে বসিয়ে খাবার খাওয়ানো হয়। দেখা যায়, ফারহানের গলায় ঝুলছে একটি স্টিলের তৈরি কার্ড। সেখানে তাঁর নাম, বাবার নাম, বাড়ির ঠিকানা এমনকি ফোন নম্বরও খোদাই করা আছে।

Advertisement

সেই নম্বরে যোগাযোগ করতে জানা যায়, সেটি আসলে ফারহানের বাবা এহসান উল হকের। তিনি ছেলের খবর পেয়ে পৌঁছে যান বিমানবন্দরে। নিরাপত্তা অফিসারদের ধন্যবাদ জানিয়ে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন।

শুক্রবার ফোনে ফারহানের মা শাহজাহান খাতুন বলেন, ‘‘চার মাস বয়সে মেনিনজাইটিস হয়েছিল আমার সেজ ছেলে ফারহানের। তার পর থেকে ও আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি। বাড়িতে থাকার সময়ে অস্ফুটে সবার নাম বলতে পারে ঠিকই। এখন ওর সঙ্গে থাকতে থাকতে আমরাও ওর কথা বা ইশারা বুঝতে পারি। কিন্তু বাইরের লোকের কাছে মুখ খুলতে চায় না ফারহান।’’

শাহজাহান খাতুন জানিয়েছেন, প্রতিদিন দুপুরে খেয়ে জামাকাপড় পরে ঘুরতে বেরোন ফারহান। আবার সন্ধ্যার মুখে বাড়ি ফিরে আসেন। কিন্তু, গত শনিবার দুপুরে খেয়ে বেরোনোর পরে আর ফেরেননি। স্থানীয় নারকেলডাঙা থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। সোমবার লালবাজারে ছোটেন এহসান। তিন দিন ধরে ফারহানের খোঁজ না পেয়ে চিন্তায় পড়ে যান বাড়ির লোক।

মায়ের কথায়, ‘‘গলায় তো সব লিখে দেওয়া কার্ড ছিল। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো ছেলেটার গলায় ঝোলানো সেই কার্ডটা তিন-চার দিনে কারও চোখে পড়ল না?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন