রেফারের চক্করেই কি মৃত্যু বালকের

মঙ্গলবার নাগেরবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় অবশ্য শহরের বেসরকারি হাসপাতালগুলির অনীহাও ফের প্রকাশ্যে এল। চিকিৎসকদেরই একাংশ জানাচ্ছেন, অগ্নিদগ্ধ রোগীদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের আশঙ্কা খুব বেশি থাকে। তাই তাঁদের খুব সাবধানে রাখতে হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:১৫
Share:

স্থানান্তর: এসএসকেএমের পথে বিভাস। নিজস্ব চিত্র

জটিল অস্ত্রোপচার থেকে সংক্রামক ব্যাধির চিকিৎসা— প্রয়োজনীয় সব রকম পরিকাঠামোই রয়েছে। কিন্তু অগ্নিদগ্ধ রোগীর জরুরি চিকিৎসার কোনও পরিকাঠামো নেই। তাই শহরের একের পর এক হাসপাতাল ঘোরার পরে চিকিৎসার সুযোগ পাওয়ার আগেই মারা গেল অগ্নিদগ্ধ আট বছরের বালক।

Advertisement

অগ্নিদগ্ধ রোগীদের ভর্তি নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালগুলির টালবাহানা নতুন কিছু নয়। কোথাও অগ্নিদগ্ধ রোগী এলেই চেষ্টা হয় তাঁকে এসএসকেএমে পাঠাতে। মঙ্গলবার নাগেরবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় অবশ্য শহরের বেসরকারি হাসপাতালগুলির অনীহাও ফের প্রকাশ্যে এল। চিকিৎসকদেরই একাংশ জানাচ্ছেন, অগ্নিদগ্ধ রোগীদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের আশঙ্কা খুব বেশি থাকে। তাই তাঁদের খুব সাবধানে রাখতে হয়। তা ছাড়া, তাঁদের টানা বেশ কয়েক মাস ভর্তি রেখে দিতে হয়, যা অনেক হাসপাতালই চায় না।

এ দিন নাগেরবাজারে বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হয় বিভাস ঘোষ (৮)। প্রথমে তাকে দমদমের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ, হাসপাতাল অগ্নিদগ্ধ রোগী দেখে তাকে ভর্তি নিতে চায়নি। তারা বিভাসকে পার্ক সার্কাসের আর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। সেই হাসপাতালও জানায়, অগ্নিদগ্ধ রোগীর চিকিৎসা পরিকাঠামো তাদের নেই। এর পরে বিভাসকে এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পৌঁছনোর মিনিট ১৫ পরেই মারা যায় সে। বিভাস ছাড়াও দমদমের ওই হাসপাতালে আরও ন’জন অগ্নিদগ্ধকে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তাঁদের মধ্যে আট জনকেই অন্যত্র ‘রেফার’ করে দেন কর্তৃপক্ষ। সঙ্গীতা প্রসাদ নামে এক মহিলা সেখানে ভর্তি রয়েছেন। এ দিন তাঁর পেটে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।

Advertisement

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, অগ্নিদগ্ধ রোগীর চিকিৎসায় সময়মতো ফ্লুইড ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া খুব জরুরি। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রশিক্ষিত নার্সরাই নিয়মিত মলম লাগান এবং ব্যান্ডেজ পরিবর্তন করেন। পাশাপাশি, সংক্রমণ যাতে না হয়, সে দিকেও বিশেষ নজর রাখা প্রয়োজন। তবে, সেটা দায়িত্বে থাকা নার্সরাই খেয়াল রাখেন। যে কোনও প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীরই সংক্রমণ এড়ানোর বিষয়ে প্রশিক্ষণ থাকে। রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানান, এ রাজ্যের নার্সিং কলেজগুলিতে বিএসসি পাশ করা নার্সরা ওই সমস্ত প্রশিক্ষণ পান। নার্সিংয়ে স্নাতক যে কোনও নার্সেরই অগ্নিদগ্ধ রোগীকে পরিষেবা দিতে পারার কথা। চিকিৎসকদের একাংশ জানান, প্রাথমিক পর্বে ফ্লুইড ও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র দিয়ে স্থিতিশীল রেখে পরবর্তী পর্যায়ে রোগীকে অস্ত্রোপচারের জন্য বিশেষ অ্যাম্বুল্যান্সে অন্য হাসপাতালে পাঠালে বিপদ কিছুটা কম হতে পারে।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, দমদমের ওই বেসরকারি হাসপাতালে কি কোনও স্নাতক পাশ করা নার্স নেই? প্রাথমিক পর্বের চিকিৎসা না করেই কী ভাবে তাঁরা রোগীকে ‘রেফার’ করে দিলেন? দমদমের ওই বেসরকারি হাসপাতালের তরফে চিকিৎসক কুমার রায় ও তৃষ্ণেন্দু মণ্ডল সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘বোমার আগুনে সকলেই ঝলসে গিয়েছিল। বার্ন ইউনিট না থাকায় তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা করে স্থানান্তরিত করা হয়।’’ তবে, নার্স প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্যই তাঁরা করেননি।

রোগীকে পরিষেবা না দেওয়ার পাশাপাশি এ দিন ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে আশঙ্কাজনক রোগীকে সময়ে রক্ত না দেওয়ার অভিযোগও ওঠে। অভিযোগ, হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় রক্ত হাসপাতালই জোগা়ড় করবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত নিয়ে যাওয়ার জন্য হাসপাতালের এক কর্মী বেরোলেও কিছু ক্ষণ পরে জানা যায়, তিনি পুজোর কেনাকাটা করতে চলে গিয়েছেন। এলাকার বাসিন্দারা বিষয়টি জানতে পেরে পাতিপুকুরে যান। অভিযোগ, সেখানে ওই কর্মীকে জুতো কিনতে দেখা যায়। এ নিয়ে হাসপাতালে অভিযোগ করা হয়েছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একাধিক অসহযোগিতার অভিযোগ প্রসঙ্গে ওই চিকিৎসকেরা বলেন, ‘‘সমস্ত চিকিৎসক ও কর্মীরা মিলে ঘটনার পরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। সাধারণ মানুষও সাহায্য করেছেন। তাঁরা হাসপাতালের কাজে খুশিও।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন