বেআইনি তেলের দোকানে বিধ্বংসী আগুন, মৃত ৩

আটা পেষাই, হলুদ গুঁড়ো, নুনের ব্যবসার পাশাপাশি গ্রিলের ঝালাইয়ের দোকান। পিছনে চলছিল ডিজেল ও কেরোসিন মিশিয়ে কাটা তেল ও গ্যাস ভরার রমরমা ব্যবসা। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়েও সুরাহা মেলেনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৩২
Share:

অগ্নিগ্রাসে। বৃহস্পতিবার, ক্রিস্টোফার রোডের সেই দোকান। — বিশ্বনাথ বণিক

আটা পেষাই, হলুদ গুঁড়ো, নুনের ব্যবসার পাশাপাশি গ্রিলের ঝালাইয়ের দোকান। পিছনে চলছিল ডিজেল ও কেরোসিন মিশিয়ে কাটা তেল ও গ্যাস ভরার রমরমা ব্যবসা। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়েও সুরাহা মেলেনি।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সেই দোকানে আগুন লেগে মৃত্যু হল এক মালিক-সহ তিন জনের। তপসিয়া থানার ১০৪ ক্রিস্টোফার রোডের ঘটনা। মৃতদের নাম রাম অবতার অগ্রবাল এবং পঙ্কজকুমার রাম। অন্য এক জনের নাম জানা যায়নি। রাম অবতার দোকানটির এক জন মালিক। অপর মালিক নন্দকুমার অগ্রবাল এ দিন দোকানে ছিলেন না। ঘটনার পর থেকে তাঁকে পাওয়া যায়নি বলে দাবি পুলিশের।

দমকল সূত্রের খবর, এ দিন দুপুর ১টা নাগাদ ওই দোকানে আগুন লাগে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে দমকলকর্মীরা দেখেন, আগুনের আঁচ সামনের চিনা প্যাগোডাতেও ধরে গিয়েছে। স্থানীয়েরা ছুটোছুটি করে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছিলেন। দোকানের ভিতরে একাধিক গ্যাস সিলিন্ডার ও দাহ্য-তেল থাকায় আগুনের তীব্রতা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তখন দোকানে মালিক রাম অবতার এবং কয়েক জন কর্মী ছিলেন। তাঁরা ভিতরেই আটকে পড়েন। পরে দমকল, পুলিশ ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী তিন জনের দগ্ধ দেহ উদ্ধার করেন।

Advertisement

প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, বাইরে আটা, গুঁড়ো মশলা ও গ্রিলের ঝালাইয়ের দোকান থাকলেও, আড়ালে চলত গ্যাস ও ডিজেলের বেআইনি ব্যবসা। এ দিন দুপুরে একটি গাড়ি এসেছিল বড় বড় জারে করে তেল দিতে। তেল ভরার পরে খালি জারগুলি গাড়িতে তুলে চালক রাম অবতারের কাছে গিয়েছিলেন। দমকলের অনুমান, সেই সময়েই গ্রিলের দোকান থেকে কোনও ভাবে আগুনের ফুলকি ছিটকে আগুন লাগে।

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দোকানের সামনে পড়ে রয়েছে একাধিক পোড়া গ্যাস সিলিন্ডার। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে হলুদ, নুনের প্যাকেট। আর দোকানের উল্টো দিকে রাস্তার একটি প্রাইভেট নম্বরের গাড়িতে ‘পুলিশ’ লেখা ইন্ডিকা গাড়ি দাঁড় করানো। কেউ গাড়িতে নেই। ভিতরে বড় বড় খালি জার। ডিজেলের গন্ধ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই গাড়ি করেই বেআইনি ভাবে জারে তেল নিয়ে এসে মজুত করছিল দোকানের লোকজন। তার পরেই দুর্ঘটনাটি ঘটে। তাঁদের আরও অভিযোগ, আটা ও রান্নার গুঁড়ো মশলার চাকির আড়ালে এই ব্যবসার কথা জানা ছিল পুলিশ-প্রশাসন, স্থানীয় কাউন্সিলরেরও। বহু বার তাঁদের কাছে অভিযোগও করা সত্ত্বেও কেউ কোনও ব্যবস্থা নেননি।

এ দিকে আগুনের খবর পাওয়ার পরেই স্থানীয় ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জলি বসু, বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহা, মেয়র পারিষদ (বস্তি) স্বপন সমাদ্দার ঘটনাস্থলে পৌঁছন। তবে তিন জনই বিষয়টি জানার কথা অস্বীকার করেছেন। বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহা বলেন, ‘‘পুলিশ তদন্ত করে দেখবে কী করে বেআইনি ভাবে এই তেল ও গ্যাসের ব্যবসা চলত।’’

কিন্তু পুলিশ লেখা গা়ড়িটা কার, তদন্তে নেমে সেটাই জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, সাধারণ লোক ও প্রশাসনের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্যই ‘পুলিশ’ লেখা কাগজ সাঁটানো থাকত। কিন্তু চারপাশের লোকজন যে এই বেআইনি তেল ও গ্যাস বিক্রির কথা জানতেন, তা দুর্ঘটনার পরে সকলেই স্বীকার করছেন। শুধু তাই নয়, এঁরা দু’জন হলদিরাম ভুজিওয়ালার মালিক প্রভু অগ্রবালের ভাই বলেও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন