Specially Abled

Specially abled: স্কুল খুলবে? আশা বাঁচিয়ে চলছে ওদের প্রস্তুত করার পর্ব

এখন পরিস্থিতি ঠিক উল্টো। কেউ ঘর থেকে বেরোতে না চেয়ে হাত-পা কামড়াচ্ছে, কেউ চিৎকার করে কেঁদে চলেছে।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২১ ০৬:৫৪
Share:

স্কুলে যাওয়ার দিনগুলি ফিরে পেতে চায় ওরা। ফাইল চিত্র।

ঘরবন্দি থাকতে থাকতে কেউ এক দিন একাই রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছিল স্কুলে যাবে বলে। কেউ আবার দিনের পর দিন দেওয়ালে মাথা ঠুকেছে। স্কুলে না যেতে পেরে কারও অস্থির ভাব আবার এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, নিজেকে খামচে রক্ত বার করে ফেলেছিল নিজেই! এর পরে গত দু’বছরে স্কুলহীন সেই ঘরবন্দি জীবনের সঙ্গে অনেকটাই মানিয়ে নিয়েছিল বিশেষ চাহিদাসম্পন্নেরা। কিন্তু ফের স্কুল খুলতে পারে ভেবে তাদের বাবা-মায়েরা প্রস্তুতি শুরু করায় আবার নতুন করে সমস্যা শুরু হয়েছে।

Advertisement

এখন পরিস্থিতি ঠিক উল্টো। কেউ ঘর থেকে বেরোতে না চেয়ে হাত-পা কামড়াচ্ছে, কেউ চিৎকার করে কেঁদে চলেছে। কাউকে কাউকে আবার দোতলার ঘর থেকে নীচে নামাতেই কালঘাম ছুটছে অভিভাবকদের। প্রস্তুতি-পর্বেই এই পরিস্থিতি হলে স্কুল চালু হলে কী হাল হবে, সে কথা ভেবেই আতঙ্কে ভুগছেন অভিভাবকেরা। সেই সঙ্গে রয়েছে করোনা-বিধি মেনে চলার চ্যালেঞ্জও। তবু তাঁদের একটা বড় অংশই চান, দ্রুত স্কুল খুলুক। কারণ, বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের পড়াশোনা এবং মানসিক বিকাশের অনেকটাই নির্ভর করে স্কুলের উপরে। এ ক্ষেত্রে স্পেশ্যাল এডুকেটররা (বিশেষ শিক্ষক) যে ভূমিকা নেন, তা উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া বাবা-মায়ের পক্ষেও সম্ভব নয়।

শহরের বিশেষ শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, টানা ঘরবন্দি থাকায় ব্যবহারিক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের মধ্যে। তাঁদের দাবি, অটিজ়ম, ডাউন সিন্ড্রোম ও মেন্টাল রিটার্ডেশনের মতো বৌদ্ধিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে যাদের, তারা নির্দিষ্ট নিয়মে চলতেই স্বচ্ছন্দ। যে কোনও বিষয়ে আগে থেকে জানা থাকলে তাদের কাজ করতে সুবিধা হয়। কিন্তু গত দু’বছরে বদলে গিয়েছে সব কিছু। স্কুলের পাশাপাশি সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো বা পার্কে খেলাধুলোও বন্ধ। এর জেরে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছে ছোটরা। যে শিশুদের প্রতিবন্ধকতা অপেক্ষাকৃত কম, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ পেলে যারা হয়তো অচিরেই জীবনের মূল স্রোতে প্রবেশ করতে পারত, গত প্রায় দু’বছরের ঘরবন্দি দশা তাদের অনেকটাই পিছিয়ে দিচ্ছে।

Advertisement

এক বিশেষ চাহিদাসম্পন্নের বাবা সঞ্জীব পাল বললেন, ‘‘একটা সাধারণ বাচ্চা স্কুলে পড়াশোনা শেখে। একটা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বাচ্চা সেখানে পড়াশোনার সঙ্গেই আরও অনেক বেশি কিছু শেখে। সেই শেখাটাই বছরের পর বছর আটকে আছে।’’ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মেয়ের অভিভাবক মণিদীপা ঘোষ যদিও বললেন, ‘‘স্কুল খুললেও করোনা সতর্কতার কী হবে? ভয়ে প্রায় দু’বছর মেয়েকে কোথাও বাইরে বার করিনি। স্কুল খোলার আগে ছোটদের প্রতিষেধক দেওয়া হলে অনেকটা নিশ্চিন্ত হতাম। এই বিশেষ শিশুরা সংক্রমিত হলে তো সমস্যা বোঝাতেও পারে না, নিজেরাও বুঝতে পারে না। ওদের আলাদা ভাবে রাখাও অসম্ভব।’’ স্পেশ্যাল এডুকেটর কাকলি কর বললেন, ‘‘সামাজিক দূরত্বের বোধ ওদের বেশির ভাগেরই নেই। অনেক বিশেষ চাহিদাসম্পন্নের আবার গন্ধে সমস্যা আছে। সে ক্ষেত্রে স্যানিটাইজ়ার কী ভাবে ব্যবহার হবে ভেবে দেখতে হবে। স্কুল না খুললে বোঝাই যাচ্ছে না ওদের প্রতিক্রিয়া ঠিক কী রকম হবে!’’

শহরের স্পেশ্যাল স্কুলগুলিতে খোঁজ করে জানা গেল, করোনা-বিধি মেনেই স্কুল খোলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। শুরুতে দু’-এক ঘণ্টার জন্য ক্লাসের কথা ভাবা হচ্ছে। রয়েছে বাচ্চাদের ভাগ ভাগ করে স্কুলে আনার পরিকল্পনাও। সেই সঙ্গেই মাস্ক পরে ক্লাস করার এবং আলাদা করে স্যানিটাইজ়ারের ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে। ডেভেলপমেন্ট থেরাপিস্ট জাহির আব্বাস যদিও বলছেন, ‘‘করোনার ভয়ের চেয়েও বেশি ভয় পাওয়ার মতো ক্ষতি হচ্ছে আমাদের বাচ্চাদের। স্কুলে এলে যে দ্রুততায় বৌদ্ধিক বিকাশ হতে পারত, তার একাংশও হচ্ছে না।’’

তাঁর দাবি, ‘‘আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে। আমি তো দেখেছি, আমরা মাস্ক খুলে ফেললে আমাদের বাচ্চারাই মাস্কটা পরে নেওয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন