IMA

শিবির বদলের হাওয়া কি রইল, ডাক্তারদের নির্বাচনে প্রশ্ন

আইএমএ-র এই নির্বাচন ঘিরে কয়েক দিন ধরেই রাজনীতির আঙিনায় ‘দল বদল’-এর জল্পনা তৈরি হয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:০৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-এর রাজ্য শাখার নির্বাচনে জয়ী হল তৃণমূল ঘনিষ্ঠ চিকিৎসদের প্যানেলই। গত রবিবার ওই নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হয়েছে।

Advertisement

আইএমএ-র এই নির্বাচন ঘিরে কয়েক দিন ধরেই রাজনীতির আঙিনায় ‘দল বদল’-এর জল্পনা তৈরি হয়েছিল। যদিও যে তিনটি প্যানেল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল, তার কোনওটিতেই কোনও রাজনৈতিক দলের নাম উল্লেখ ছিল না। কিন্তু সরাসরি না হলেও পরোক্ষ ভাবে যে কোনও নির্বাচন কিংবা প্রার্থীর নেপথ্যে কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের প্রভাব থেকেই যায়। তেমনই এই নির্বাচনে একটি প্যানেলে আইএমএ-র রাজ্য সম্পাদক পদে প্রার্থী ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ, চিকিৎসক শান্তনু সেন। তাঁর বিপক্ষে ‘সেভ আইএমএ’ প্যানেলে সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য মেডিক্যাল সেলের সিনিয়র এগজিকিউটিভ চিকিৎসক সোমনাথ সরকার।

আবার সোমনাথবাবুদের প্যানেলেই ২০২১-’২২ এর সহ-সভাপতি পদে প্রার্থী ছিলেন চিকিৎসক প্রদীপকুমার নিমানি এবং ২০২২-’২৩ এর সহ-সভাপতি পদে প্রার্থী ছিলেন অসীমকুমার সরকার। এই দুই চিকিৎসকই শাসক দলের মন্ত্রী তথা রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি নির্মল মাজির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। প্রদীপবাবু এবং অসীমবাবু দু’জনেই রয়েছেন মেডিক্যাল কাউন্সিলের দু’টি পদে। তাতেই প্রশ্ন উঠেছিল, ২০১১-য় বাম মনোভাবাপন্ন চিকিৎসকেরা যেমন তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন, একই ভাবে কি ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে শাসক দলের ঘনিষ্ঠ চিকিৎসকেরা শিবির বদল করছেন?

Advertisement

জল্পনা নিয়ে কেউ প্রকাশ্যে কিছু না বললেও, আইএমএ-র রাজ্য সম্পাদক পদে প্রার্থী শান্তনুর স্বেচ্ছাচারিতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে ছিলেন সোমনাথবাবু থেকে শুরু করে প্রদীপবাবু, অসীমবাবুরা। আবার কারও নাম না করে নির্মলের অভিযোগ ছিল, কিছু স্বার্থান্বেষীর জন্য তাঁর সভাপতি পদের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। রবিবার দুর্গাপুরে পোস্টাল ব্যালট গণনার পরে দেখা যায়, আইএমএ-র রাজ্য শাখার পরিচালন কমিটির ২১টি পদে জয়ী হয়েছেন যে চিকিৎসকেরা, তাঁদের অনেকেই শাসক দল ঘনিষ্ঠ। তাঁদের মধ্যে রাজ্য সম্পাদক পদে জিতেছেন শান্তনু। ২০২২-’২৩ এর রাজ্য সভাপতি পদে জয়ী হয়েছেন তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক, চিকিৎসক মোল্লা আবুল কাশেম।

নির্বাচনের ফলাফলের বিষয়ে জানতে সোমবার সোমনাথবাবুকে ফোন করা হলে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আইএমএ নির্বাচনের সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। কিন্তু ইচ্ছাকৃত ভাবে আমাদের প্যানেল বিজেপির বলে অপ্রচার করা হয়েছে, এখনও হচ্ছে। শান্তনুবাবু নিজের ক্ষমতাবলে যা ইচ্ছে তাই করেছেন।’’ সোমনাথবাবুরই প্যানেলে ভোটে দাঁড়ানো, চিকিৎসক অসীমবাবু বলেন, ‘‘মনোনয়ন বাতিলের বিষয়ে এখনও আদালতে মামলা চলছে। কিন্তু শান্তনুবাবুরা কোনও নির্দেশই মানেননি। গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ব্যক্তিগত প্রভাব খাটানো, কাউকে কাউকে হুমকিও দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি পদের ক্ষেত্রে সব ভোট যোগ করলে দেখা যাচ্ছে, তা ব্যালটের থেকে সংখ্যায় বেশি। আবার একই নম্বরের দু’টি ব্যালটের উদাহরণও আছে। সমস্ত তথ্যপ্রমাণ রাখা রয়েছে। প্রয়োজনে আদালতে দেখানো হবে।’’

অন্য দিকে, তৃণমূলের চিকিৎসক সংগঠন ‘প্রোগ্রেসিভ ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন’ এর সহ-সভাপতি পদে থাকা অসীমবাবু দ্বিচারিতা করছেন বলে পাল্টা সরব হয়েছেন শান্তনু। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সহ-সভাপতি, সদ্যপ্রয়াত রাজীব গণচৌধুরীর জায়গায় অসীমবাবুকে মনোনীত করার প্রস্তাব এনেছেন মন্ত্রী তথা ওই সংগঠনের সভাপতি নির্মলবাবু। সেই অসীমবাবুই বিজেপির প্যানেলে প্রার্থী হয়েছিলেন। ভোট গণনার সময়েও তিনিই বেশি অশান্তি পাকিয়েছেন।’’ পাশাপাশি শান্তনুর দাবি, ‘‘গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়েছে বলেই অসীমবাবু-সহ বিরোধীরাও কিছু ভোট পেয়েছেন।’’
ফলাফল যা-ই হোক, গোপনে শিবির পরিবর্তনের জল্পনা কিন্তু থেকেই গেল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন