সেই বিমানটি। নিজস্ব চিত্র।
যাত্রী নিয়ে কলকাতা বিমানবন্দরের প্রধান রানওয়ে থেকে টেক অফ করার পরেই বিগড়ে গেল বিমানের ডান দিকের ইঞ্জিন। নীচ থেকে যাঁরা দেখেছেন, তাঁদের দাবি, ইঞ্জিনে আগুন ধরে গিয়েছিল। তাঁরা আগুন, ধোঁয়া— দুই-ই দেখেছেন।
আকাশে বিমান ঘিরে জরুরি অবস্থা যদি খুব বেশি হয়, তখন পাইলট আর কিছু না বলে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-কে প্রথমেই ‘প্যান, প্যান’ বলে সতর্ক করেন। সোমবারেও দুপুরে কলকাতা থেকে টেক-অফ করার পরেই ইন্ডিগোর পাইলট প্রথমেই ওই জরুরি বার্তা পাঠান এটিসি-কে। জানান, ডান দিকের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তিনি জরুরি অবতরণ করতে চান।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, কলকাতা থেকে দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল বিমানটির। দুপুর ২টো ৩৮ মিনিটে ১৭৯ জনকে নিয়ে টেক অফ করে যায় বিমানটি। তার তিন মিনিটের মধ্যে পাইলট এটিসি-কে ‘প্যান, প্যান’ বার্তা পাঠান। অ্যাপ্রন এলাকায় (যেখানে বিমান দাঁড়ায়, অন্য গাড়ি যাতায়াত করে) গাড়ির গতিবিধি যাঁরা নিয়ন্ত্রণ করেন, যাঁরা ঠিক করেন বিমানকে কোন পার্কিং বে-তে দাঁড় করানো হবে, সেই অ্যাপ্রন কন্ট্রোলের অফিসারেরা গিয়ে নিয়ম মাফিক রানওয়ে পরীক্ষা করে আসেন। তৈরি রাখা হয় দমকলবাহিনী ও অ্যাম্বুলেন্স-কেও। দুপুর ২টো ৫৭ মিনিটে বিমানটি নেমে আসার পরে অবশ্য আর ইঞ্জিন থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায়নি। যাত্রীদের নামিয়ে নিয়ে ইন্ডিগোর অন্য বিমানে তাঁদের দিল্লি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
দুপুরে বিমানটি টেক-অফ করার পরে সবে তখন মুখ উঁচু করে মধ্যমগ্রামের দিকের পাঁচিল পেরিয়েছে। বিমানবন্দরেই ডাভ এয়ারলাইনসের গাড়ি চালান চঞ্চল সান্যাল। তিনি থাকেন বিটি কলেজের কাছে। এ দিন তাঁর ছুটি ছিল। দুপুরে খেয়ে বাড়ির বাইরে এসে দেখেন, মাথার উপর দিয়ে ইন্ডিগোর বিমান উ়ড়ে যাচ্ছে। তার ডান দিকের ইঞ্জিন থেকে আগুন ও ধোঁয়া বেরোচ্ছে।
আরও পড়ুন: সময় বলবে, রেল সুরক্ষায় গুরুত্ব কতটা
সোমবার সন্ধ্যায় চঞ্চলবাবু ফোনে বলেন, ‘‘দুম দুম করে বার তিনেক শব্দের সঙ্গে আগুনের গোলা বেরোতে দেখলাম। আমি যে হেতু দশ বছরের উপর বিমানবন্দরে চাকরি করছি, ওই অ্যাপ্রন এলাকাতেই গাড়ি চালাই, আমার মনে হয় বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো দরকার। আমি অ্যাপ্রন কন্ট্রোলে ফোন করে বিষয়টি জানাই।’’
জানা গিয়েছে, রানওয়ের পাশে দাঁড়িয়ে যাঁরা পাখি তাড়ানোর কাজ করেন, এমন এক অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মীও এ দিন একই ভাবে রানওয়ের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেন, আকাশে ওড়ার পরেই বিমানের ডান দিকের ইঞ্জিন থেকে আগুনের গোলা ও ধোঁয়া বেরোচ্ছে। চঞ্চলবাবুর ফোন পেয়ে অ্যাপ্রন কন্ট্রোল থেকে যোগাযোগ করা হয় এটিসি-র সঙ্গে। সূত্রের খবর, প্রায় একই সময়ে ওই বিমানের পাইলটও যোগাযোগ করেন এটিসি-র সঙ্গে। তবে, পাইলট যে বার্তা এটিসি-কে পাঠিয়েছেন, সেখানে ইঞ্জিনে আগুন লাগার কথা উল্লেখ করা নেই। শুধু বলা আছে, ইঞ্জিন বিগড়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ইন্ডিগো তার বিবৃতিতে জানিয়েছে, টেক অফ করার পরে পাইলট বুঝতে পারেন, ডান দিকের ইঞ্জিন প্রচন্ড জোরে কাঁপছে। তারপরেই পাইলট জরুরি অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন।
বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নেমেছে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)।