ঘুপচি রেস্তোরাঁর মধ্যে তিনটি গ্যাস সিলিন্ডার জ্বালিয়ে রান্নার কাজ চলছিল। বুধবার সকালে যাদবপুর কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে ওই রেস্তোরাঁর মধ্যে একটি সিলিন্ডার ফেটে আগুন লেগে যায়। ভস্মীভূত হয় রেস্তোরাঁটি। ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম নন্দ বেরা (৩০)। মেদিনীপুরের বাসিন্দা নন্দ ওই রেস্তোরাঁর কর্মী। রেস্তোরাঁর আর এক কর্মী আশঙ্কাজনক অবস্থায় এম আর বাঙুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রেস্তোরাঁর ম্যানেজার উত্তমকুমার তলাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মালিক গোপাল ওঝা পলাতক।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, যাদবপুর কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ লাগোয়া রেস্তোরাঁটি থেকে বেলা এগারোটা নাগাদ বিকট শব্দ শোনা যায়। তার পরেই দাউদাউ করে আগুন জ্বলতে শুরু করে। প্রথমে আগুন নেভাতে হাত লাগান কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীরা। হাসপাতালের নিজস্ব জলাধারের জল কাজে লাগিয়ে পাইপের মাধ্যমে ওই রেস্তোরাঁয় জল ছড়ানো হয়। মিনিট কুড়ির মধ্যে দলকলের তিনটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে এসে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। তাঁরা প্রথমে রেস্তোরাঁয় ঢুকে আটকে থাকা দু’জনকে উদ্ধার করে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই এক জনকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। দমকলের চেষ্টায় প্রায় এক ঘণ্টা পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
এ দিন অগ্নিকাণ্ডের জেরে রাজা সুবোধচন্দ্র মল্লিক রোডের এক দিক প্রায় এক ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয়। ফলে ঢাকুরিয়া থেকে যাদবপুর সুকান্ত সেতু পর্যন্ত রাস্তায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। অফিস শুরুর সময়ে যানজটের কবলে ভোগান্তির মুখে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। যানজট স্বাভাবিক হতে দুপুর গড়িয়ে যায়। পুলিশ ও দমকল জানিয়েছে, রেস্তোরাঁটির গ্যাস সিলিন্ডার বাণিজ্যিক কারণে ব্যবহার করা হলেও আদতে সেটি ডোমেস্টিক হিসেবে বুক করা হতো। এ দিন ঘটনাস্থলে এসে দমকলের ডিজি জগমোহন বলেন, ‘‘রেস্তোরাঁটিতে দমকলের কোনও লাইসেন্স ছিল না। বাণিজ্যিক কেন্দ্রে ডোমেস্টিক হিসেবে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা রেস্তোরাঁর মালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’’
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই এই রেস্তোরাঁটি বেশ জনপ্রিয়। ওই রেস্তোরাঁয় সারাদিন ভি়ড় থাকে। তবু দিনের পর দিন যে ভাবে চার ফুট বাই চার ফুট ঘরে তিনটি সিলিন্ডার জ্বালিয়ে রান্না হয়, তাতে আগেই বিপদের আঁচ পেয়েছিলেন বাসিন্দাদের একাংশ। এক বাসিন্দা সুকুমার সর্দারের অভিযোগ, ‘‘ডোমেস্টিক সিলিন্ডারকে বাণিজ্যিক হিসেবে ব্যবহার চলছে এই রেস্তোরাঁয়। এটা একটা নমুনা মাত্র। এ রকম শত শত রেস্তোরাঁ বেআইনি ভাবে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করছে।’’ ডিসি (এসএসডি) ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখর বলেন, ‘‘বেআইনি ভাবে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের জন্য রেস্তোরাঁর মালিকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’