Footpath

footpath: দূষণ রুখতে ফুটপাত ঢাকার নির্দেশ, তবু হাঁটা-সঙ্গী ধুলোই!

তথ্য বলছে, ৪৩ শতাংশ বায়ুদূষণের নেপথ্যে রয়েছে ধুলো— যার অন্যতম উৎস ফুটপাতও।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২২ ০৮:০১
Share:

বিপজ্জনক: ধর্মতলা (বাঁ দিকে) এবং চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে (ডান দিকে) এবড়োখেবড়ো ফুটপাতের জেরে হাঁটাচলা করাই দায় পথচারীদের। ছবি: রণজিৎ নন্দী, স্বাতী চক্রবর্তী

ধুলো-দূষণ রুখতে ফুটপাত ভাল ভাবে ঢাকতে হবে। বায়ুদূষণ সংক্রান্ত একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে ২০২০ সালে এমন নির্দেশ দেয় জাতীয় পরিবেশ আদালত। আদালতের কথা মতো, ‘দ্য পেভমেন্টস মে অলসো বি অ্যাপ্রোপ্রিয়েটলি কভার্ড সো অ্যাজ টু প্রিভেন্ট জেনারেশন অব ডাস্ট’।

Advertisement

কারণ তথ্য বলছে, ৪৩ শতাংশ বায়ুদূষণের নেপথ্যে রয়েছে ধুলো— যার অন্যতম উৎস ফুটপাতও। ওই মামলার রায়েই পরিবেশ আদালত ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের একটি মামলার প্রসঙ্গ টেনে এনেছিল। যেখানে দেশের শীর্ষ আদালত দিল্লি সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে ফুটপাত সারাই, যেখানে ফুটপাত নেই সেখানে তা তৈরি এবং ফুটপাত পরিষ্কারের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্র জোগাড়ের নির্দেশ দেয়। এই দু’টি মামলার প্রসঙ্গ তুলে বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করাচ্ছেন, প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী ধুলো-দূষণ শুধু রাস্তা বা নির্মাণ সামগ্রী থেকেই হয়। অথচ বাস্তব বলছে, সুপ্রিম কোর্ট, জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশে তো বটেই, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য ফুটপাতের নকশা, তার সামগ্রিক কাঠামোর মতো বিষয়গুলি বার বার আলোচনায় উঠে এসেছে, জায়গা পেয়েছে ‘কম্প্রিহেন্সিভ এয়ার কোয়ালিটি অ্যাকশন প্ল্যান’-এও।

কিন্তু তার পরেও শহরের ফুটপাতের অবস্থা তথৈবচ। তাই চলতি মাসের ৪-২৫ তারিখ, এই ২১ দিনের পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে মধ্য, শহরের বিস্তীর্ণ অংশের ফুটপাত সারাইয়ের জন্য কলকাতা পুরসভাকে প্রায় এক কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করতে হয়েছে! কারণ, কোথাও পানীয় জল, নিকাশির পাইপলাইন বসানো বা সারাই, কোথাও টেলিকম সংস্থার কেব্‌ল বসানো বা অন্য সংস্থার পাইপলাইন বসাতে গিয়ে ক্ষতি হয়েছে ফুটপাতের।

Advertisement

অথচ, পরিবেশ গবেষণাকারী সংস্থা ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’-এর (সিএসই) গবেষণা জানাচ্ছে, শহরের মোট কর্মরত জনগোষ্ঠীর এক-চতুর্থাংশেরও বেশি মানুষ হেঁটে যাতায়াত করেন। কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের ‘স্টাডি অন ট্র্যাফিক অ্যান্ড ট্রান্সপোর্টেশন পলিসিস অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিস ইন আর্বান এরিয়াস ইন ইন্ডিয়া’ সমীক্ষাও বলছে, কলকাতায় গণপরিবহণের (৫৪ শতাংশ) পরে সব থেকে বেশি মানুষ হেঁটে যাতায়াত করেন (১৯ শতাংশ)। এক গবেষকের কথায়, ‘‘কলকাতার রাস্তা হাঁটার উপযোগী, কারণ প্রায় ৬০ শতাংশ গন্তব্যই ৩-৪ কিলোমিটারের মধ্যে।’’

তবে হাঁটার জন্য ফুটপাতের পরিসর পর্যাপ্ত হওয়া প্রয়োজন। আর সেখানেই আটকে যাচ্ছে কলকাতা। গবেষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, পথচারীদের সংখ্যার নিরিখে স্বচ্ছন্দে হাঁটার জন্য কমপক্ষে ১.৮ মিটার চওড়া রাস্তার প্রয়োজন। আবার ‘ভেরি হাই ফুটফল’ অনুযায়ী সেই প্রস্থ হওয়া দরকার ৪-৫ মিটার।

মজার বিষয় হল, কলকাতার বেশির ভাগ মূল রাস্তা সংলগ্ন ফুটপাতেই এই পরিমাণ জায়গা রয়েছে। তা সত্ত্বেও সেগুলি হাঁটা-বান্ধব নয়। কারণ কোথাও ফুটপাত হকারদের দখলে, কোথাও ফুটপাতে আবার রীতিমতো সাজানো সংসার।

কয়েক বছর আগে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রক বায়ুদূষণের জন্য স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে একটি স্টিয়ারিং কমিটি তৈরি করেছিল। সেই কমিটির রিপোর্টেও ধুলো-দূষণ রোধে ফুটপাতের নকশা (‘স্ট্রিট ডিজ়াইনিং গাইডলাইন্স ফর ফুটপাতস’) গুরুত্ব পেয়েছিল। সংশ্লিষ্ট স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য এবং সিএসই-র এগ্‌জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি) অনুমিতা রায়চৌধুরীও জানাচ্ছেন‌, ধুলো কমানোর জন্য শুধুমাত্র জল দিয়ে রাস্তা ধোয়া যথেষ্ট নয়। বরং স্থায়ী সমাধানের জন্য রাস্তা এবং ফুটপাতের নকশার উপরে নজর দিতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘তার সঙ্গে সবুজ গাছপালা দিয়ে ফুটপাত ঘিরতে হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে এই কাজ করতে হবে।’’

পুরসভার অবশ্য দাবি, ৩০টি স্প্রিঙ্কলার গাড়ি দিয়ে রাস্তা ও ফুটপাত ধোয়ার পাশাপাশি রাস্তা, ফুটপাতকে কেন্দ্র করে সবুজায়ন করা হচ্ছে। পুরসভার এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘ধুলো-দূষণ কমাতে তিন-চার বছরে শহরে প্রায় ৭২০ কিলোমিটার ফুটপাতের পরিকাঠামোর সংস্কার করা হয়েছে। কলকাতার কম্প্রিহেন্সিভ এয়ার কোয়ালিটি অ্যাকশন প্ল্যানেও এই তথ্যের উল্লেখ রয়েছে।’’

পথচারীদের অভিজ্ঞতা অবশ্য বলছে, ক্রমাগত খোঁড়াখুঁড়ি, হকারদের রাজত্ব-সহ একাধিক কর্মকাণ্ডের জেরে প্রায়ই বেরিয়ে পড়ছে ফুটপাতের হতশ্রী দশা। সেখান দিয়ে হাঁটতে গেলে নিত্যসঙ্গী ধুলো এবং ধুলোর ঝড়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন