বেপাত্তা: এই ছবি দেখা যাবে কবে? —নিজস্ব চিত্র।
ইলিশের দেখা নাই! কবে আসবে, তা-ও কেউ বলতে পারছেন না। জানতে চাইলে সকলের মুখে একটাই উত্তর, ‘‘কোনও খবর নেই দাদা।’’
ভ্যাপসা গরমের হাত থেকে সদ্য রেহাই দিয়েছে কয়েক দিনের বৃষ্টি। বর্ষার জল গায়ে পড়তেই শুরু হয়ে গিয়েছে ইলিশের খোঁজ। মাসের শেষ রবিবার অবশ্য শহরের কোনও বাজারেই তার দেখা মেলেনি। ইদের দিনও অনেকে ইলিশের খোঁজ করেছেন। কিন্তু সে গুড়ে বালি। পাইকারি মাছ বাজারগুলিও বলতে পারছে না, কবে ইলিশ ঢুকবে। মৎস্যজীবীরা জানাচ্ছেন, সবে মোহনায় বৃষ্টির মিষ্টি জলের সঙ্গে পূবালি হাওয়া বইতে শুরু করেছে। জালে ইলিশ ধরার পক্ষে যা আদর্শ। তবে রসনা তৃপ্তির জন্য আরও কিছু দিন সময় লাগবে।
এ বারের গরমে চড়া তাপমাত্রা আর আর্দ্রতা শহরবাসীকে নাজেহাল করে ছেড়েছে। হিমসাগর, গোলাপখাস, লক্ষ্মীভোগের পর্যাপ্ত জোগান খানিকটা হলেও তাতে প্রলেপের কাজ করেছে। গরমের বাজারে ৪০ টাকা কেজিতে ভাল মানের হিমসাগর কলকাতার বাজারগুলিতে দেদার বিক্রি হয়েছে। অনেকেরই আশা ছিল, এ বার ইলিশের জোগানও যথেষ্ট থাকবে।
দিন কয়েক আগেই বিভিন্ন সংবাদপত্রে দিঘায় ইলিশ ধরা পড়ার ছবি প্রকাশিত হয়েছিল। ফলে প্রত্যাশার পারদ চড়তে শুরু করেছিল। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে মানুষকে হতাশ হয়েই বাজার থেকে ফিরতে হচ্ছে। যা পাওয়া যাচ্ছে, তা হিমঘরের পুরনো ইলিশ, দামও চড়া। রবিবার ৪০০-৬০০ গ্রামের ছোট ‘বাসি’ ইলিশের দাম ছিল ৭০০-৮০০ টাকা কেজি। ৯০০-১১০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১৪০০-১৫০০ টাকা কেজি দরে। যাঁদের রেস্ত আছে, তাঁরা গত কয়েক দিন সেই ইলিশ কিনেই দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়েছেন।
আরও পড়ুন: এআই বেচতে প্রাথমিক সায় শীঘ্রই
মানিকতলা বাজারের সাধারণ সম্পাদক প্রভাত দাস জানাচ্ছেন, তাঁদের বাজারে মরসুমি ইলিশ নেই। প্রভাতবাবুর কথায়, ‘‘অন্য বছর এই সময়ে ইলিশ ঢুকতে শুরু করে। এ বছর হিমঘরের পুরনো কিছু ইলিশ ছাড়া বর্ষার টাটকা মাছের জোগান নেই। দিঘায় যে ইলিশ ধরা পড়েছে, তার ছিটেফোঁটাও কলকাতার পাইকারি বাজারগুলিতে আসেনি। ফলে বর্ষা শুরু হলেও ইলিশ ছাড়াই মানুষকে বাজার থেকে ফিরতে হচ্ছে।’’
দমদম গোরাবাজারের মাছ ব্যবসায়ী আনন্দ সাহারও একই বক্তব্য। তিনি জানান, ইলিশের জন্য মহাজনকে অগ্রিম কিছু টাকা দিয়ে বলেও রেখেছেন। কিন্তু কবে ইলিশ পাওয়া যাবে, তা তিনি কেন, মহাজনও জানেন না। পাতিপুকুর, শিয়ালদহ, হাওড়া, বৈঠকখানা পাইকারি বাজারের মাছ ব্যবসায়ীদেরও একই বক্তব্য। খদ্দেরের থলিতে কবে ইলিশ দিতে পারবেন, কেউ জানেন না। সল্টলেকের এফ ডি ব্লকের মাছ ব্যবসায়ী কৃষ্ণ মাঝি বলেন, ‘‘রবিবার বাজারে এসে অনেকেই ইলিশের খোঁজ করেছেন। কিন্তু দিতে পারিনি। সামান্য কিছু পুরনো হিমঘরের ইলিশ ছিল, সেগুলিই কয়েক জন পেয়েছেন। এই মরসুমের ইলিশ কবে পাব, জানি না।’’ একই কথা লেক মার্কেট, গড়িয়াহাট বাজার-সহ দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন বাজারের মাছ ব্যবসায়ীদের।
গত বছর অবশ্য ছবিটা ছিল অন্য। জুনের মাঝামাঝিই ইলিশে ভরে গিয়েছিল সব বাজার। দামও ছিল সস্তা। ছোট-মাঝারি-বড় টাটকা ইলিশের গন্ধে ঘরের হেঁশেল ইলিশময় হয়ে উঠেছিল। আর এ বছর একেবারে উল্টো। গড়িয়াহাটের বাসিন্দা স্বপন দেবনাথ যেমন জানালেন, রবিবার খুব আশা নিয়ে সকাল সকাল ইলিশের খোঁজে বাজারে গিয়েছিলেন। কিন্তু না পেয়ে শেষে মাংস কিনে ফিরেছেন।
কলকাতার ইলিশ আমদানিকারী সংস্থাগুলির সংগঠনের সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মকসুদও আশার কথা শোনাতে পারেননি। তাঁর কথায়, ডায়মন্ড হারবার, রায়দিঘি, দিঘা-সহ যে সব জায়গা থেকে কলকাতায় ইলিশ আসে, কোথাও মাছ নেই। সামান্য যা কিছু ধরা পড়ছে, তা স্থানীয় বাজারগুলিতেই চড়া দামে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। ফলে কলকাতায় আকাল চলছে এবং আরও কিছু দিন চলবে।
কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, রায়দিঘি, ডায়মন্ড হারবার প্রমুখ জায়গার মৎস্যজীবীদের সংগঠনের অন্যতম নেতা বিজন মাইতির বক্তব্য, গত বছর অনেক আগে থেকেই ইলিশ জালে ধরা পড়ার আবহাওয়া তৈরি হয়ে গিয়েছিল। এ বছর বৃষ্টিও দেরিতে এসেছে। আবার, পূবালী হাওয়াও বইতে শুরু করেছে অনেক পরে। সে জন্যই চাহিদা মেটানোর মতো ইলিশ ধরা পড়ছে না। বিজনবাবু জানান, সোমবার কাকদ্বীপ থেকে ডায়মন্ড হারবারের মধ্যে মোহনা থেকে ৭০টি ট্রলার ফিরে এসেছে। তাতে ৮০০-১০০০ কেজি করে ইলিশ আছে। যা চাহিদার তুলনায় যৎসামান্য। এই সময়ে এক একটি ট্রলারে কমপক্ষে দুই থেকে তিন টন করে ইলিশ ধরা পড়ে বলেই বিজনবাবু দাবি করেছেন।