তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। —ফাইল চিত্র।
ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের প্রস্তাবিত মসজিদের জন্য অনলাইন এবং অফলাইনে অনুদান এসেই চলেছে। বেলডাঙায় গত শনিবার বাবরি মসজিদের শিলান্যাস করেছেন হুমায়ুন। সে দিনই সভাস্থলে ১১টি দানবাক্স বসিয়েছিলেন। ভক্তদের কাছে মসজিদ তৈরির জন্য অর্থসাহায্যের আবেদন করেছিলেন তিনি। কিছু দিনের মধ্যেই ১১টি বাক্স ভরে যায়। নগদ গুনতে টাকা গোনার যন্ত্র আনতে হয়েছিল। অবশেষে সেই সমস্ত টাকা গোনার কাজ শেষ হয়েছে।
রবিবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত মোট চারটি বাক্সের টাকা গোনা হয়েছিল। নগদে উঠেছিল ৩৭ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা। সোমবার বিকেল থেকে ফের যন্ত্র দিয়ে টাকা গোনার কাজ শুরু হয়। মঙ্গলবারের মধ্যে বাকি সাতটি বাক্সের শেষ হয় গণনা। তাতে জমা পড়া মোট অনুদানের পরিমাণ পৌঁছোয় ৩৮ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকায়। সব মিলিয়ে ১১টি বাক্স এবং একটি বস্তা থেকে গোনা হয়েছে ৭৫ লক্ষ ৬৭ হাজার ৫২৩ টাকা। তবে এর পরেও অনুদান আসা থামেনি। বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা আরও টাকা বুধবার গোনা হয়েছে। তার পরিমাণও ১১ লক্ষের কাছাকাছি। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত শুধু নগদে মিলেছে প্রায় ৮৭ লক্ষ টাকা।
অনলাইনেও টাকা জমা দেওয়ার বন্দোবস্ত করেছেন হুমায়ুন। রেখেছেন নির্দিষ্ট কিউ আর কোড। বাবরি মসজিদের ট্রাস্ট হিসাবে যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টটি নির্দিষ্ট করা হয়েছে, তাতে এখনও পর্যন্ত ২ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা জমা পড়েছে বলে খবর। হুমায়ুনের ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, অনুদানের পরিমাণ আরও বাড়বে। কারণ, প্রায় প্রতি দিনই কেউ না কেউ মসজিদ নির্মাণের জন্য অর্থসাহায্য করছেন। বড় অঙ্কের টাকা যাঁরা দিচ্ছেন, আপাতত তাঁদের নাম গোপন রাখা হচ্ছে। অনুদানের অঙ্ক প্রত্যাশা ছাপিয়ে গিয়েছে হুমায়ুনের।
বাক্সের নগদ টাকা দ্রুত ব্যাঙ্কের খাতায় স্থানান্তরিত করতে চাইছেন ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ। টাকা গোনার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছিল। এই টাকা সংরক্ষণের জন্য পৃথক একটি ঘরের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। সেখানে সিসি ক্যামেরা-সহ নিরাপত্তার যাবতীয় বন্দোবস্ত থাকবে।
বেলডাঙায় বাবরি মসজিদ নির্মাণের কথা বলে তৃণমূলকে অস্বস্তিতে ফেলেছিলেন হুমায়ুন। তাঁকে সাসপেন্ড করেছে দল। হুমায়ুন ঘোষণা করেছিলেন, ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের ধ্বংসের দিনই মুর্শিদাবাদে ওই নামের মসজিদের শিলান্যাস করবেন। এই ঘোষণার পর থেকে তৃণমূল তাঁর সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখছিল। কিছু দিন আগে পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) বিরুদ্ধে সভা করতে মুর্শিদাবাদে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বহরমপুরের সেই সভাস্থলে হাজির হন হুমায়ুনও। কিন্তু সেই দিনই জানিয়ে দেওয়া হয়, তাঁকে দল সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ক্ষুব্ধ হুমায়ুন সভাস্থল থেকে বেরিয়ে যান এবং ২২ ডিসেম্বর নতুন দল গড়ার হুঁশিয়ারি দেন। জানিয়ে দেন, বেলডাঙায় মসজিদ তিনি তৈরি করবেনই। নতুন দল নিয়ে রাজ্যের ১৩৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথাও তিনি জানিয়েছেন। মসজিদের শিলান্যাসের দিন বেল়ডাঙায় ৪০ হাজার জনকে বিরিয়ানি খাওয়ানোর বন্দোবস্ত করেছিলেন হুমায়ুন।