Rasgulla

তিন বছরেও অধরা রসগোল্লার ‘জিআই’ লোগো

রীতিমতো লড়াই করে ছিনিয়ে নেওয়া এই লোগো আদায়ের জন্য কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি রাজ্য সরকার তথা বাংলার মিষ্টান্ন শিল্পীদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২০ ০২:৩৮
Share:

মিষ্টিমুখ: রসগোল্লা দিবস উপলক্ষে হাওড়ার একটি মিষ্টির দোকানে রসগোল্লা বিতরণ করা হচ্ছে। শনিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

গোলাকার রসগোল্লা ঘিরে দেবনাগরী হরফে লেখা ‘অখিলং মধুরম’! এম এস সুব্বুলক্ষ্মীর গান থেকে ধার করা তামিল শব্দবন্ধটির অর্থ, সম্পূর্ণ মিষ্টি বা ‘টোটাল সুইট’! লোগোর গোল্লার নীচে আবার রোমান হরফে লেখা, ‘বাংলার রসগোল্লা’।

Advertisement

রীতিমতো লড়াই করে ছিনিয়ে নেওয়া এই লোগো আদায়ের জন্য কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি রাজ্য সরকার তথা বাংলার মিষ্টান্ন শিল্পীদের। ‘জিয়োগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন’ তকমা বা ‘জিআই লোগো’ আদায়ের গরিমা তিন বছর আগে পকেটস্থ করে বাংলা। কিন্তু এই স্বীকৃতি বা লোগো-র সুবাদে বাংলার রসগোল্লার বিশ্ব দরবারে বিপণন এখনও পর্যন্ত সার্থক নয়। কোভিড-ধ্বস্ত সময়ে শনিবার কালীপুজো ও তৃতীয় রসগোল্লা দিবস মিলে গিয়েছে। গত বছর এই দিনটির পালনে বিশেষ উৎসাহও ছিল রাজ্য সরকারের। কিন্তু এ বছর বিশেষ পরিস্থিতিতে যাবতীয় উদ্‌যাপন নিচু তারেই বাঁধা। তবু খানিক হা-হুতাশও শোনা যাচ্ছে মিষ্টি বিক্রেতা মহলে।

আরও পড়ুন: শব্দের দাপট ঠেকানো গেল না হাওড়ায়

Advertisement

সরকারি সূত্রের খবর, তিন বছরে কাঙ্ক্ষিত লোগোটি পেয়েছিল একটি মাত্র মিষ্টান্ন প্রতিষ্ঠান। তবে আরও ৭১ জন মিষ্টি স্রষ্টা লোগোর জন্য আবেদন করেছেন। মিষ্টির কারবারিদের দাবি, রাজ্য জুড়ে লাখখানেক মিষ্টি স্রষ্টা ছড়িয়ে রয়েছেন। কলকাতারও পাড়ায় পাড়ায় সন্দেশ-রসগোল্লার রূপকার। সেখানে ৭১ জন আবেদনকারীর সংখ্যাটা অবশ্য খুব বেশি নয়। এত জন আর্জি জানানোর পরে সেই লোগো কেন এখনও তাঁদের কাছে পৌঁছল না, সেই প্রশ্নও থেকে যাচ্ছে। রসগোল্লার ‘জিআই’ আদায়ের বিষয়টি রাজ্য সরকারের তরফে দেখভাল করছে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং উদ্যান চর্চা নিগম। তাদের তরফে বলা হচ্ছে, কোভিড পরিস্থিতির জেরে লোগো বিলি প্রক্রিয়ায় কিছুটা সময় লাগছে।

লোকমুখে ‘রসগোল্লার কলম্বাস’ বলে পরিচিত বাগবাজারের নবীন দাশ। সেই সূত্র ধরেই বাংলা দাবি করে, ১৮৬৮ সালে নবীনচন্দ্র দাশই রসগোল্লা আবিষ্কার করেন। তবে ওড়িশাও হাল ছাড়েনি। জগন্নাথদেবের উল্টোরথের পরে মন্দিরে প্রত্যাবর্তনের অনুষ্ঠান ‘নীলাদ্রি বিজে’য় রসগোল্লা ভোগের রীতি বহু প্রাচীন বলে দাবি করে তারা। সেই রসগোল্লা আদতে ছানার গোলক কি না, তা নিয়ে অবশ্য ধন্দ রয়েছে পণ্ডিতদের। তবে বাংলার পরে ওড়িশাও তাদের ‘রসগোলা’র জন্য ‘জিআই’-স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলা এবং ওড়িশা আলাদা ভাবে নিজেদের রসগোল্লার মর্যাদা রক্ষা করলেও রসগোল্লার প্রথম ‘জিআই’-জয়ী হিসেবে নাম লিখিয়েছে বাংলাই।

কিন্তু তাতে লাভটা কী হল? চেন্নাইয়ে ‘জিআই’ নথিভুক্তির দফতর থেকে এখনও পর্যন্ত রসগোল্লার ‘জিআই’ লোগো ব্যবহারের শংসাপত্র এসেছে নবীন দাশ-কে সি দাশদের ঘরের মিষ্টি স্রষ্টাদের জন্যই। বাঞ্ছারামের অভিজিৎ ঘোষ এ দিন বলছিলেন, ‘‘আমরাও বাংলার রসগোল্লার মর্যাদার লড়াইয়ে শরিক। অনেক দিন আগে আর্জি জানিয়েছি, এখনও লোগো পাইনি।’’ এই লোগো রসগোল্লার বিপণনে সাহায্য করবে বলেই তাঁদের বিশ্বাস।

কে সি দাশ ঘরানার স্পঞ্জ রসগোল্লার পাশাপাশি উত্তর কলকাতার চিত্তরঞ্জনের মুখে মিলিয়ে যাওয়া রসগোল্লারও কম নামডাক নয়! তাদের কর্ণধার নিতাইচন্দ্র ঘোষের কথায়, ‘‘নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনেই লোগোর আর্জি জানিয়েছি। এ বার তো পাওয়া উচিত।’’ খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং উদ্যান চর্চা নিগম সূত্রের দাবি, পরে অনুষ্ঠান করে সবাইকে লোগো দেওয়া হতে পারে। তবে সেই সবুরের রসগোল্লা কতটা মিষ্টি হবে, এই রসগোল্লা দিবসে তার উত্তর নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন