নজরদারির জন্য এত দিন কেবল নবান্নের চৌহদ্দিতে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা লাগানো ছিল। এ বার রাজ্য প্রশাসনের ওই সদর দফতরের চারপাশে যে এলাকা জুড়ে ১৪৪ ধারা বলবৎ রয়েছে, সেখানেও ক্যামেরা লাগাল পুলিশ।
নবান্নের গা ঘেঁষে গিয়েছে বিদ্যাসাগর সেতু। সেতু থেকে নেমে সব ক’টি রাস্তা দিয়েই নবান্নে পৌঁছনো যায়। এ দিকে, যেহেতু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেড প্লাস মানের নিরাপত্তা পান এবং রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা নবান্নেই বসেন, তাই ওই ভবনের এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে দীর্ঘ দিন ১৪৪ ধারা জারি রেখেছে প্রশাসন। নবান্নের অন্দরে মিটিং-মিছিল তো দূরের কথা, ওই চত্বরে কোনও জমায়েতও করতে দেয় না প্রশাসন।
এই আঁটোসাটো নিরাপত্তা ব্যবস্থার ফাঁক গলে গত বছর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে এক দল দলীয় কর্মী-সমর্থক নবান্নের সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকে পড়েন। এ দিকে, সম্প্রতি ডিএ-র দাবিতে রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতারা নবান্নর ভিতরেই স্লোগান দেন। পুলিশ জেনেছিল, নবান্নে কর্মরত কো-অর্ডিনেশনের নেতারা আর পাঁচটা দিনের মতো সকাল ১০ টা নাগাদ নিজের দফতরে চলে এসেছিলেন। ১১টা থেকে বাইরের অফিসে কর্মরত সংগঠনের কর্মীরা নিজেদের সরকারি পরিচয়পত্র দেখিয়ে নবান্নে ঢুকতে শুরু করেন। তাঁরা কোনও দফতরে যাননি, ক্যান্টিনে বসে গল্প করছিলেন। তাঁরা যে বিক্ষোভ দেখাতে জড়ো হয়েছেন, ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি পুলিশ। কো-অর্ডিনেশনের এই কর্মী-সমর্থকেরা যখন স্লোগান দিতে শুরু করেন, তখন পুলিশের হুঁশ হয়। পুলিশ তাঁদের কোনও রকমে নবান্নের বাইরে বার করে পরিস্থিতি সামাল দেয়। এক পুলিশকর্তা জানান, ওই ঘটনার পরেই ১৪৪ ধারার আওতাভুক্ত সমস্ত রাস্তায় ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত হয়।
হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের এক অফিসার বলেন, নবান্ন থেকে ব্যাতাইতলা, মন্দিরতলা, কাজিপাড়া ও বেলেপোল যাওয়ার প্রতিটি রাস্তায় একাধিক ক্যামেরা বসানো হয়েছে। সেগুলি দেওয়াল বা পোস্টের আড়ালে এমন ভাবে লাগানো হয়েছে যে পথচারীদের সচরাচর নজরে পড়বে না। ক্যামেরার মাধ্যমে দিনভর ওই রাস্তায় যাতায়াতকারী লোকজনের উপরে নজরদারি চালায় পুলিশ। এ জন্য কয়েক জন পুলিশকর্মীকে পৃথক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
নবান্নের নিরাপত্তা দেখভালের দায়িত্বে থাকা এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘এক থেকে চোদ্দ, প্রতি তলায় কমপক্ষে সাতটি করে ক্যামেরা বসানো রয়েছে। ক্যামেরা রয়েছে সব গেটে।’’ সম্প্রতি মন্দিরতলা বাস স্ট্যান্ডের মোড়ে সেতুর উপরে, সেতুর নীচে তিনটি পয়েন্টে, শিবপুর দক্ষিণপাড়া দুর্গামণ্ডপের সামনে, ব্যাতাইতলা যাওয়ার পথে নিউবস্তির সামনে, শরৎ চ্যাটার্জি রোডে, ওঙ্কারমল জেটিয়া রোডের মোড়ে ও দক্ষিণপাড়া কালচারাল ক্লাবের সামনের রাস্তা-সহ বিভিন্ন পয়েন্টে ক্যামেরা বসানো হয়েছে।