এক মহিলার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে। হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন তাঁর স্বামী। বুধবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে পঞ্চসায়র থানা এলাকার নয়াবাদের একটি আবাসনে।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই রাতে বাবা-মাকে দেখতে নয়াবাদের আবাসনে যান তাঁদের ছেলে। তিনি বার কয়েক কলিং বেল বাজালেও কেউ দরজা খোলেননি। তদন্তকারীদের ওই যুবক জানিয়েছেন, দরজা না খোলায় শেষে বাবা-মাকে ফোন করেন তিনি। কিন্তু সেই ফোনও কেউ তোলেননি।
এর পরেই প্রতিবেশীদের ডাকেন ওই যুবক। খবর দেওয়া হয় পুলিশে। তদন্তকারীরা জানান, তাঁরা দরজা ভেঙে দেখেন, ঘরে গলায় ওড়নার ফাঁস দিয়ে ঝুলছেন বছর পঞ্চান্নর ওই মহিলা। গলার বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন-সহ জখম অবস্থায় খাওয়ার ঘরের মেঝেতে পড়ে ছিলেন তাঁর স্বামী। পরিস্থিতি দেখে প্রাথমিক পুলিশের অনুমান, আত্মঘাতী হয়েছেন মহিলা। একই ভাবে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন তাঁর স্বামীও। কিন্তু দড়ি ছিঁড়ে নীচে পড়ে গিয়েছেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে বছর ৬৫-র ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে ই এম বাইপাসের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জেনেছে, ওই দম্পতি দেনায় ভারে জর্জরিত ছিলেন। তাঁর জেরেই এই ঘটনা বলে অনুমান তদন্তকারীদের। পুলিশের অনুমান, অর্থনৈতিক কারণেই তাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে অবসাদে ভুগছিলেন। সেই অবসাদ থেকেই আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছেন দম্পতি। ঘরের ভিতর থেকে একটি সুইসাইড নোটও উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, গত তিন মাস ধরে নয়াবাদের ওই আবাসনে ভাড়া থাকতেন ওই দম্পতি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁদের ওই এলাকাতেই একটি বাড়ি ছিল। কয়েক মাস আগে সেই বাড়িটি বিক্রি করে ওই আবাসনে চলে আসেন দম্পতি। দম্পতির ছেলে বছর তেইশের ওই যুবক কমার্শিয়াল পাইলটের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বলে দাবি করেছিলেন। সেই প্রশিক্ষণের জন্য তিনি শহরের একটি নামী হোটেল থাকেন। অভিযোগ, ওই খরচ জোগাতে গিয়েই দেনার দায়ে জর্জরিত হয়েছিলেন দম্পতি। বাড়িও বিক্রি সেই জন্য তাঁরা ভাড়ার ফ্ল্যাটে চলে এসেছিলেন বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জেনেছে, ওই দম্পতি প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন ছেলের পড়াশোনার জন্য। ছেলে প্রথমে নিজেকে পাইলট বলে দাবি করলেও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে জানিয়েছেন, তাঁর কোনও উপার্জন নেই। পুলিশ জানিয়েছে, ওই যুবকের কথায় অসঙ্গতি রয়েছে। পুরো ঘটনাটি জানার জন্য তাঁকে ফের জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন বলে জানিয়েছে পুলিশ। তদন্তকারীরা বলছেন, ওই মহিলার মৃত্যুর কারণ কী, ছেলের সঙ্গে কথা বলেই সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।