দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাইকটি। (ইনসেটে) সৌরদীপ সিংহ।— নিজস্ব চিত্র।
আগে পিছে চারটি বাইক। চালক বা আরোহী— কেউই মাথায় হেলমেট পরে নেই। রবিবারের সকাল। রাস্তা ফাঁকা। বিপুল গতিতে প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের দিক থেকে লেক গার্ডেন্স ফ্লাই ওভারের দিকে এগিয়ে গেল বাইকগুলো। তারপরই একটা আওয়াজ, আর্তনাদ।
রবিবার সকাল ছ’টা ২০ মিনিট নাগাদ লেক গার্ডেন্স ফ্লাই ওভারের আশ পাশটা প্রায় ফাঁকা। পথ চলতি মানুষ প্রথম দেখেন একটি বাইক ফ্লাইওভারে ওঠার মুখে পুলিশ কিয়স্কের সামনে বাঁকের মুখে ছিটকে পড়েছে। রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন বাইকের তরুণ চালক এবং তাঁর সঙ্গী।
স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে পুলিশের প্যাট্রোল ভ্যান এসে পৌঁছয়। পুলিশ কর্মীরাই দু’জনকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে এক জনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। অন্য জন অত্যন্ত আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন।
চারু মার্কেট থানার পুলিশ প্রাথমিক তদন্তের পর মৃত তরুণকে ভবানীপুরের বকুলবাগান লেনের সৌরদীপ সিংহ হিসাবে চিহ্নিত করেন। খবর দেওয়া হয় সৌরদীপের বাড়িতে।
এখানেই ঘটে দুর্ঘটনাটি।— নিজস্ব চিত্র।
পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে জানিয়েছেন, সৌরদীপ হোটেল ম্যানেজমেন্টের পড়ুয়া। শনিবার রাতে বাড়ি থেকে বেরোয়। একমাত্র সন্তান সৌরদীপের বাবা বেশ কয়েক বছর ধরে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। মা অপর্ণা পারিবারিক যা সম্পত্তি ছিল তাই দিয়েই সংসার চালান। তিনিই বলেন, “সৌরদীপ বাড়িতে বলেছিল, একটি অনলাইন কোর্সের জন্য বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছে।” অপর্ণাই জানিয়েছেন যে, শনিবার রাতে সৌরদীপ হেলমেট নিয়ে বেরোয়নি। হেলমেটের কথা জিজ্ঞাসা করায় বলেছিলেন, বাড়িতে যে হেলমেট রয়েছে সেটা নাকি ভাল নয়। নতুন হেলমেট কেনার কথা বলেছিলেন সৌরদীপ। তার দাম সাত হাজার টাকা। বাইক অন্ত প্রাণ ছিলেন তিনি। কিছুদিন আগেই পুরনো বাইক বিক্রি করে নতুন এই বাইকটি কেনেন।
তাঁর সঙ্গী মনোজিৎ নন্দনও বাড়িতে বলে বেড়িয়েছিলেন যে, তিনি বন্ধুর বাড়িতে খেলা দেখতে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: সবচেয়ে নোংরা রাজ্যগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ, বলছে কেন্দ্রের রিপোর্ট
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের দাবি, গোটা রাতই এই দুই তরুণ দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন। রাতে দক্ষিণ কলকাতার একটি ধাবায় খাওয়া দাওয়া করেন। ওদের সঙ্গে আরও কয়েক জন বন্ধু ছিলেন।
স্থানীয়দের দাবি, যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে তার পাঁচশো মিটার আগে মোট চারটি বাইকে সাত-আট জন যুবক রেসের কথা বলছিলেন। তাঁদের দাবি রেস করতে গিয়েই বিপত্তি। আর সেই সময় ফ্লাই ওভারে ওঠার মুখে বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডিভাইডারে ধাক্কা মারে সৌরদীপের বাইক।
আরও পড়ুন: মাধ্যমিকে ভাল ফল করায় স্মার্টফোন, ছাত্রীর আত্মহত্যার কারণ হল সেটাই
আরও পড়ুন: বিপদ জেনেও পেটের দায়ে নিরুপায় ওঁরা
তদন্তকারীরাও রেসের সম্ভবনা ওড়াতে পারছেন না। এর আগেও একই ভাবে মা এবং এজেসি বোস রোড ফ্লাই ওভারে বাইক রেস এবং দুর্ঘটনা ঘটেছে। তার জেরেই মা উড়ালপুলে রাতে বাইক চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তদন্তকারীরা নিশ্চিত, ওই চারটি বাইক এক সঙ্গেই ছিল। কিন্তু দুর্ঘটনার পর সৌরদীপকে রেখেই পালায় বাকিরা। তদন্তকারীরা ঘটনাস্থলের আশে পাশের বিভিন্ন রাস্তায় সিসি ক্যমেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখছেন।