Animal Market

পশু-হাটের আড়ালে শহরে চলছে ‘খাটাল’

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:৩০
Share:

দুর্বিষহ: (বাঁ দিকে) ‘এগুলিকে কি খাটাল বলা যায়?’ প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় কাউন্সিলর। ডান দিকে) পশু-বর্জ্যে ভরা এলাকা। ছবি: রণজিৎ নন্দী

রাস্তার এক ধারে পরপর বাঁধা পাঁচটি মোষ। দু’টি আবার ফুটপাতের উপরে। কিছু দূর এগোলেই খড়ের গাদা, গোবরের স্তূপে ফুটপাতটাই উধাও! ওই তল্লাট দিয়ে হেঁটে যেতে নাকে কাপড় চাপা দিতে হয়। রাতে তো কথাই নেই, দিনেও সেখানে মশা ছেঁকে ধরে। কম যায় না মাছির দৌরাত্ম্যও। খাস কলকাতার চিৎপুর লকগেট উড়ালপুলের দু’পাশের এই খাটাল আসলে কিন্তু খাটাল নয়। এমনই দাবি স্থানীয় কিছু বাসিন্দা তথা ‘খাটালে’র মেজ-ছোট কর্তাদের। আর বড় কর্তার দাবি, ‘‘খাটাল হলে খাটাল। এখানে খাটাল চলবেই। দেখি কে আটকায়।’’ একে খাটাল বলতে রাজি নন স্থানীয় পুর প্রতিনিধিও। ফলে ফুলে ফেঁপে বাড়ছে সেই বিতর্কিত ব্যবসা।

Advertisement

বি টি রোড ধরে কলকাতা পুরসভার ছ’নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত ওই এলাকায় পৌঁছে শুক্রবার দেখা গেল, পরপর মোষ বাঁধা। যত্রতত্র পড়ে তাদের মল-মূত্র। স্থানীয় এক চায়ের দোকানদার বললেন, ‘‘এমন জায়গা এখানে অনেক আছে।’’ তাঁরই দেখানো রাস্তা ধরে দেখা গেল, পাঁচিলে ঘেরা ফাঁকা জমি। সেখানে পরপর দাঁড় করানো লরিতে বাঁধা মোষের দল। পাশেই সিমেন্টে বাঁধানো অংশে ছাউনি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ‘খাটাল’। গবাদি পশুর খাবার এবং বর্জ্য পাশাপাশি পড়ে থেকে সে এক চরম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

শহরের ভিতরে খাটাল? প্রশ্ন শুনেই মোবাইল হাতে ব্যস্ত এক যুবক বললেন, ‘‘এটা খাটাল নয়। এমনিই মোষ রাখা হয়।’’ খাটালের মতোই তো মোষ রেখে ব্যবসা চলে। তবু খাটাল নয়? যুবকের উত্তর, ‘‘সেবক যাদবের নাম শুনেছেন? এখানকার দাদা। এটা ওর জায়গা। যা বলার ওকে বলবেন।’’

Advertisement

অনেক খোঁজ করে দেখা মিলল সেবকের। তাঁর দাবি, প্রতি শুক্র থেকে মঙ্গলবার চিৎপুরের ওই এলাকায় পশুর হাট বসে। লরি ভর্তি করে গরু-মোষ আসে সেখানে। যেগুলি বিক্রি হয় না, তা-ই রেখে দিতে এই জায়গা তৈরি হয়েছে। জায়গা? খাটাল নয়? পাল্টা কয়েকটি প্রশ্নের পরে রীতিমতো অগ্নিশর্মা সেই ব্যক্তি বললেন, ‘‘খাটাল হলে খাটাল। এখানে খাটাল চলবেই। দেখি কে আটকায়।’’ একই রকম জবাব সেলিম রাজপুত নামে অন্য ব্যক্তির। তিনি জানান, তাঁর নিজের ওই রকম চারটি জায়গা রয়েছে। বিক্রি না হওয়া বহু পশুই দীর্ঘদিন ধরে সেখানে থাকে। তাই ওদের থাকার পাকাপাকি জায়গা করে দিতেই হয়। এর পরেই তিনি বলেন, ‘‘খাটাল বললে বলুন, এই পশুহাট অনেক পুরনো। আগে খাটাল তুলে দেওয়ায় সমস্যায় পড়েছিলাম। আর মানব না।’’

রমরমিয়ে চলা বিতর্কিত এই খাটাল ব্যবসা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘খাটালের কারণে মশা-মাছির দাপটের কথা পুর-প্রতিনিধি বা পুলিশকে বারবার জানিয়েও লাভ হয়নি।’’ পুর আইন অনুযায়ী, শহরে খাটাল নিষিদ্ধ হলেও এখানে ছোট-বড় ২০টিরও বেশি খাটাল রয়েছে। রাজ্যের নানা প্রান্ত বা ভিন্ রাজ্য থেকে লরিতে করে মোষ-গরু সেখানে এনে রাখা হয়। বড় পাত্রে করে সেখান থেকে দুধ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রির জন্যে নিয়ে যান গোয়ালারা।

এলাকার কাউন্সিলর সুমন সিংহও পুরনো হাটের তত্ত্বই তুলে ধরলেন। তাঁর কথায়, ‘‘এগুলিকে কি খাটাল বলা যায়? বিক্রি না হলে কিছু দিন মোষ-গরু রেখে দিতে হয় ওদের। কী আর বলব, অনেক পুরনো হাট তো!’’ কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) দেবব্রত মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘ব্যাপারটা অবশ্যই দেখব। কিন্তু এত দিন কেউ তো অভিযোগ করেননি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন