Doctors

অর্ধেকের বেশি আসন খালি, বিশেষজ্ঞ গড়তে বাধা কি বন্ড

ফলে অদূর ভবিষ্যতে দেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের আকাল হতে পারে বলে আশঙ্কা।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৪৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রয়োজন যেমন বাড়ছে, তেমনই কমছে চিকিৎসকদের মধ্যে বিশেষজ্ঞ হওয়ার তাগিদ। অন্তত এ ক্ষেত্রে চাহিদা এবং যোগানের তত্ত্ব আর খাটছে না। গত কয়েক বছর ধরে এই প্রবণতা গোটা দেশের সঙ্গে এ রাজ্যে চোখে পড়ছে, যা এ বছরেও অব্যাহত।

Advertisement

২০২০-’২১ সালে ডক্টর ইন মেডিসিন (ডিএম), মাস্টার অব সার্জারি অর্থাৎ পোস্ট ডক্টরাল (এমসিএইচ), ডিপ্লোম্যাট অফ ন্যাশনাল বোর্ড (ডিএনবি) কোর্সে রাজ্যে কয়েকশো আসনে কোনও চিকিৎসক ভর্তিই হননি! ফলে অদূর ভবিষ্যতে দেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের আকাল হতে পারে বলে আশঙ্কা। কারণ, সুপার স্পেশ্যালিটি এবং মাল্টি স্পেশ্যালিটি ইউনিট বা হাসপাতাল খুললেও তা চালানোর মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকই পাওয়া যাবে না!

কার্ডিয়োলজি, নিউরো সার্জারি, কার্ডিয়োথোরাসিক সার্জারি, পেডিয়াট্রিক মেডিসিন, পেডিয়াট্রিক সার্জারি, প্লাস্টিক সার্জারি, নেফ্রোলজি, নিউরোলজি, ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন, কার্ডিয়াক অ্যানাস্থেশিয়া, গ্যাসট্রোএন্টেরোলজির মতো বিভিন্ন বিষয়ে ডিএম, এমসিএইচ এবং ডিএনবি পড়ানো হয়। চিকিৎসা ক্ষেত্রে স্নাতকোত্তর (এমডি, এমএস) পাশের পরে এই কোর্সগুলি করা যায়।

Advertisement

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চাহিদা থাকায় গত কয়েক বছরে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে এই সব কোর্সে আসন সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু স্নাতকোত্তরের পর চিকিৎসকদের মধ্যে এই কোর্স করার উৎসাহ কমে গিয়েছে।

তাই চলতি বছর একাধিক কাউন্সেলিং পর্ব শেষে সর্বভারতীয় স্তরে ডিএম এবং এমসিএইচ-এ ৩০০টি আসন ও ডিএনবি কোর্সে ৩৭৬টি আসন খালি থেকে যাওয়ায় ‘মপ আপ
রাউন্ড’ হয়েছে।

কী এই ‘মপ আপ রাউন্ড’? কাউন্সেলিংয়ের মূল পর্ব শেষে পরে থাকা আসন নিয়ে এই রাউন্ড হয়। যেখানে কোথায় এবং কোন বিষয়ে কত আসন পড়ে আছে তা জানিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে নির্ধারিত দিন ও সময়ে আগ্রহী প্রার্থীদের পৌঁছতে বলা হয়। নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছে যাওয়া প্রার্থীদের মধ্যে থেকে সর্বাধিক নম্বরের ভিত্তিতে সেই নির্বাচন হয়। এ ভাবেও আগ্রহী চিকিৎসক মেলেনি বলে দাবি। সর্বভারতীয় স্তরে ডিএনবি-তে শেষ পর্যন্ত ৩২১টি আসন খালিই থেকে গিয়েছে এবং ডিএম, এমসিএইচ-এও ৩০০টির মতো আসন খালি। এ রাজ্যে ডিএম ও এমসিএইচ মিলিয়ে আসন ১৯৭ (ডিএম ১১৪, এমসিএইচ ৮৩)। এর ৬০ শতাংশ আসন এখনও খালি বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।

রাজ্যের স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘নতুন প্রজন্ম থেকে বিশেষজ্ঞ না পেলে চিকিৎসা পরিষেবার পুরো ব্যবস্থাই ভেঙে পড়বে। বিশেষ করে কার্ডিয়োথোরাসিক সার্জারি, পেডিয়াট্রিক সার্জারির মতো বিষয়ে চিকিৎসকের আকাল খুব বেশি। সুপার স্পেশ্যালিটি কোর্স পড়ার ক্ষেত্রে এই অনাগ্রহের কারণ আমরাও খোঁজার চেষ্টা করছি।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘রাজ্যে সুপার স্পেশ্যালিটি কোর্সের ক্ষেত্রেও ৩০ লক্ষ টাকার বন্ড চালু রয়েছে। পাশ করার পরে তিন বছর সরকারি জায়গায় বাধ্যতামূলক পরিষেবা দিতে হবে, না হলে ওই টাকা সরকারকে দিতে হবে। হতে পারে এ জন্য অনেকেই আগ্রহ হারাচ্ছেন। তাই কিছু বিষয়ের উপর থেকে বন্ড তোলা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।’’

বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পার্থ প্রধানের মতে, ‘‘এক জন এমডি চিকিৎসক অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে যখন কাজ করছেন, তখন তিনি প্রাইভেট প্র্যাক্টিসও করতে পারছেন। যেই তিনি ডিএম পাশ করলেন তখন তাঁকে কোনও একটি হাসপাতালে আরএমও
হিসেবে নিয়োগ করা হচ্ছে। কারণ, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসরের পদ খুবই কম। এটা তাঁর সম্মানে লাগছে। পাশাপাশি আরএমও হওয়ায় সরকারি নিয়মে প্র্যাক্টিসও করতে পারছেন না তিনি। তা হলে কষ্ট করে কেউ ডিএম
করবেন কেন?’’

প্রাক্তন স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা তথা বর্তমানে করোনা চিকিৎসা সংক্রান্ত কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রদীপ মিত্রের কথায়, ‘‘ডিএম, এমসিএইচ বা ডিএনবি যখন এক জন চিকিৎসক পাশ করছেন তত দিনে তিনি অনেকটাই সিনিয়র হয়ে গিয়েছেন। সেই অবস্থায় তিন বছর বন্ডে আটকে তাঁরা সময় নষ্ট করতে চাইছেন না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্যে চিকিৎসকদের মান কিছু ক্ষেত্রে কমে গিয়েছে। ফলে সুপার স্পেশ্যালিটি কোর্সে আসন খালি থাকছে। এ রাজ্যে বন্ড-ব্যবস্থার জন্য ভিন্ রাজ্যের চিকিৎসকেরাও আসতে চাইছেন না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন