বাসে উপচে পড়া ভিড়। রবিবার রাতে। ছবি: সুদীপ ঘোষ।
কে বলবে সেটা রবিবার রাত ১২টার ধর্মতলা চত্বর!
গিজগিজ করছে লোক। রয়েছে অসংখ্য ট্যাক্সি ও অ্যাপ-ক্যাবও। মাঝেমধ্যে একটি-দু’টি করে বাসও আসছে। সেগুলিতে অবশ্য তিল ধারণেরও জায়গা নেই। সব মিলিয়ে যেন এক হট্টমেলার আসর!
রবিবার রাতে আইপিএল ম্যাচ শেষ হওয়ার পরে এটাই ছিল ছবি। ট্যাক্সি বা ক্যাবের অভাব না থাকলেও সুযোগ বুঝে আকাশছোঁয়া ভাড়া হেঁকেছে তারা। ওই রাতে নির্ধারিত সময়ের পরেও মেট্রো চলেছে। সেই মেট্রো যাঁরা ধরতে পেরেছেন, তাঁরা তুলনায় ভাগ্যবান। কিন্তু যাঁদের সাধারণ ট্যাক্সি, ক্যাব বা বাসে চেপে ফিরতে হয়েছে, তাঁদের যারপরনাই ভুগতে হয়েছে।
রাত সওয়া ১২টা নাগাদ ধর্মতলা মোড় থেকে করুণাময়ী যাওয়ার ট্যাক্সি খুঁজছিলেন দুই যুবক। অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে শাট্ল যেতেই সুবিধা হবে বলে মনে করেছিলেন তাঁরা। সামনে দাঁড়ানো একটি শাট্ল ট্যাক্সিকে জিজ্ঞাসা করতে জবাব এল, মাথা-পিছু ১৫০ টাকা লাগবে! দুই যুবক দাম নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে করতেই সেই ট্যাক্সি ভরে গেল। ধর্মতলা থেকে বারাসতের হেলা বটতলা যাওয়ার ট্যাক্সি খুঁজছিলেন একদল তরুণ-তরুণী। চালক ভাড়া হাঁকলেন, এক হাজার টাকা! যাঁরা অ্যাপ-ক্যাব খুঁজছিলেন, ভাড়া দেখে তাঁদেরও চক্ষু চড়কগাছ। ধর্মতলা থেকে শিয়ালদহ স্টেশন যেতে একটি ক্যাব সংস্থা চেয়েছে ২৩০ টাকা! নিউ ব্যারাকপুর যেতে ৮৮০ টাকা!
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
পরিবহণ দফতরের কর্তাদের অবশ্য দাবি, সাধারণ ট্যাক্সি নিয়ে অভিযোগ এলে পুলিশ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়। এ বিষয়ে অ্যাপ-ক্যাব সংস্থাগুলির দাবি, রাতের দিকে চাহিদা বাড়লে ভাড়ায় ‘সার্জ প্রাইস’ যুক্ত হয়। দিনের তুলনায় রাতের দিকে তাই ভাড়ার হার বাড়ে। ভিড় যে হবে, তা জানত পুলিশও। তাই ভিড় সামাল দিতে মোতায়েন ছিলেন বহু পুলিশকর্মী। ওই রাতে আতান্তরে পড়া অনেকের দিকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাঁরা।
রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ দুই তরুণী ট্যাক্সির জন্য ছোটাছুটি করছিলেন। এক সাব ইনস্পেক্টর নিজে একটি ট্যাক্সি থামিয়ে তুলে দেন তাঁদের। এ-ও বলে দেন, রাস্তায় চালক কোনও রকম বেগড়বাই করলেই যেন সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে খবর দেন তাঁরা। ভিড়ের মধ্যে ক্যাব খুঁজে পেতেও কালঘাম ছুটেছে অনেকের। তেমনই এক যুবক মোবাইলে ক্যাবচালককে টিপু সুলতান মসজিদের সামনে আসতে বলেছিলেন। ক্যাব যখন এল, তখন ভিড় ঠেলে তিনি রাস্তা পেরোতে পারছিলেন না। কোনওক্রমে পৌঁছলেন ক্যাবের কাছে।
অনেক ট্যাক্সিই কিন্তু যথেচ্ছ নিয়ম ভেঙেছে। চার জনের বদলে ঠেসেঠুসে ছ’-সাত করে যাত্রী নিয়েছে। বহু মোটরবাইকেও তিন-চার জন করে সওয়ারি নজরে এসেছে। পুলিশের একাংশের ব্যাখ্যা, রাতবিরেতে টাক্সিকে একটু ছাড় না দিলে ঘরমুখো জনতাই আরও নাকাল হত। তবে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে মোটরবাইক মালিকদের জরিমানার চিঠি পাঠানো হবে।
গাঁটের কড়ি খরচ করে যাঁরা ট্যাক্সি বা ক্যাবে চাপতে পারেননি, তাঁদের যন্ত্রণা ছিল বেশি। কারণ, বাস ছিল কম। যে ক’টি চলেছে, তাতে ছিল বাদুড়ঝোলা ভিড়। পরিবহণ দফতরের আধিকারিকদের অবশ্য দাবি, ইডেনে রাতে ম্যাচ থাকলে অতিরিক্ত সরকারি বাস চালানো হয়। নৈশকালীন বাস ছাড়াও বেহালা, ডানলপ, ঠাকুরপুকুর-সহ একাধিক রুটে অতিরিক্ত বাস দেওয়া হয়েছে বলে দাবি তাঁদের।
মানুষের ভোগান্তি নিয়ে পুলিশকর্তাদের একাংশের ব্যাখ্যা, রাতে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় এক সঙ্গে কয়েক হাজার লোক জমা হলে কিছুটা সমস্যা হবেই। তবে সবাইকেই দ্রুত বাড়ি পাঠানো গিয়েছে বলে দাবি তাঁদের।
তবে কিছু দর্শক আছেন, যাঁদের ‘খেলা’ শেষ হয়েও হয় না। রাত একটায় ধর্মতলা মোড়ের একটি মিষ্টির দোকানের সামনে নিজস্বী তোলায় মগ্ন ছিলেন কয়েক জন যুবক-যুবতী।
বাড়ি যাবেন না?
উত্তর এল, ‘‘আরও রাত হোক। এ মজা তো রোজ রোজ পাব না!’’