অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ
দু’মাস পরেও ২০০ লকারে থাকা বিপুল পরিমাণ গয়না এবং নগদের দাবিদার পেল না আয়কর দফতর। বাজেয়াপ্ত করা হল পাঁচ কোটি টাকার বেশি নগদ এবং সাড়ে ১৩ কোটি টাকার গয়না।
বৃহস্পতিবার আয়কর দফতরের মুখ্য অধিকর্তা (তদন্ত) আশিস বর্মা বলেন, “কালো টাকার হদিশ করতে গিয়ে গোপন সূত্রে খবর পাই, শেক্সপিয়র সরণি থানা এলাকার বরদান মার্কেটের বেসমন্টে মার্কেট কর্তৃপক্ষের একটি ভল্ট রয়েছে। সেই ভল্টে অনেক লকার রয়েছে। এর পরই আমরা সেই ভল্টে হানা দিই।”
আয়কর দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয় তল্লাশি। টানা প্রায় দু’মাস ধরে চলে। বরদান মার্কেট কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন ওই ভল্টের নাম শ্রী বরদান মার্কেট সেফ ডিপোসিট ভল্ট। আশিস বর্মার কথায়, ‘‘ওই ভল্টে ৬৪৯টি লকারের হদিশ পাওয়া যায়। প্রথমে লকারগুলো সিল করে দিয়ে লকারের মালিকদের আয়কর দফতরে ডাকা হয়। সেই অনুযায়ী প্রায় সাড়ে চারশো লকারের মালিক আয়কর দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে উপযুক্ত নথি দেখিয়ে তাঁদের লকার ফেরত পান।’’ তাঁর দাবি, ‘‘বার বার নোটিস পাঠানো সত্ত্বেও হদিশ পাওয়া যায়নি ২০০টি লকারের মালিকের।’’ আয়কর দফতর সূত্রে খবর, যে নাম এবং ঠিকানা দিয়ে ওই লকারগুলো ভাড়া নেওয়া হয়েছিল সেগুলো ভুয়ো।
আরও পড়ুন- কর্নাটকে মন্ত্রী-সহ প্রভাবশালীদের বাড়িতে আয়কর হানা, মমতার পথ ধরার হুমকি কুমারস্বামীর
আরও পড়ুন- রাহুল গাঁধীর হস্তক্ষেপে কংগ্রেসে লক্ষ্মণ শেঠ, প্রার্থী হচ্ছেন সেই তমলুকেই
মালিকের হদিশ না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ওই লকারগুলি ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয় আয়কর দফতর। আর সেই লকার ভাঙতেই বেরিয়ে পড়ে কোটি কোটি টাকার সোনা, প্ল্যাটিনাম, হিরে বসানো গয়না। সঙ্গে নগদ টাকা। পুরোটাই বাজেয়াপ্ত করেছে আয়কর দফতর। আয়কর দফতরের দাবি, ওই লকারগুলো মূলত শহরের বিভিন্ন ব্যবসায়ীর। তবে এর মধ্যে কোনও রাজনৈতিক নেতার লকার আছে কি না প্রশ্ন করা হলে আশিষ বর্মা বলেন, “লকারগুলো থেকে বাজেয়াপ্ত সম্পত্তির সঙ্গে সরাসরি কোনও রাজনৈতিক নেতার যোগাযোগ পাওয়া যায়নি।”
বেসমেন্টের এই ভল্ট থেকেই উদ্ধার বিপুল সোনা এবং নগদ টাকা।— নিজস্ব চিত্র
তবে আয়কর দফতরের সন্দেহ, শহরে আরও এরকম প্রাইভেট বা ব্যক্তিগত মালিকানার লকার রয়েছে। সেগুলোর হদিশ পাওয়ার চেষ্টা করছেতারা। আয়কর দফতরের দাবি, ১৯৮৫ সাল থেকে চলছে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ওই ভল্ট।
আশিস বর্মা আরও জানিয়েছেন, নির্বাচনের দিন ঘোষণার পর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট ২১ কোটি ১১ লাখ টাকার হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ১০ কোটি টাকা নগদে। বাকিটা সোনার বাট এবং গয়না। এর মধ্যে আয়কর দফতর ছাড়া পুলিশ এবং অন্যান্য দফতরের বাজেয়াপ্ত টাকাও রয়েছে। আয়কর দফতরের দাবি, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে মোট বাজেয়াপ্ত সম্পত্তির পরিমান ছিল প্রায় ৮ কোটি টাকা। এ বার নির্বাচন শেষ হওয়ার প্রায় ৫০ দিন আগেই বাজেয়াপ্ত করা হিসাব বহির্ভূত টাকা-সোনার পরিমাণ আগের নির্বাচনের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি হয়ে গিয়েছে।
নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহার রুখতে রাজ্যে পাঁচটি স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে।এ রাজ্যেআয়কর দফতরের নোডাল অফিসার দেবাশিস মজুমদারের নেতৃত্বে ওই বিশেষ বাহিনী কাজ করবে। এ দিন দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘টাকা-সোনা-গয়নার বেশির ভাগটাই বাজেয়াপ্ত হয়েছে কলকাতা থেকে। শিলিগুড়ি এবং বালুরঘাটেও বেশ কিছু নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।’’
বড়বাজারে কলকাতা পুলিশের বাজেয়াপ্ত করে ৩৫ লাখ টাকা।— নিজস্ব চিত্র
অন্য দিকে এ দিন কলকাতা পুলিশ ফের নগদ ৩৫ লাখ টাকা-সহ প্রমোদকুমার শর্মা নামে ওড়িশার তালচেরের এক বাসিন্দাকে গ্রেফতার করেছে। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে বড়বাজার থানা এলাকার গণেশ মার্কেট থেকে। তিনি ওই টাকার উৎস সম্পর্কে কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি বলেই পুলিশের দাবি। বিষয়টি আয়কর দফতরকে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কলকাতার গোয়েন্দা প্রধান প্রবীন ত্রিপাঠী।