Jam

নিত্যসঙ্গী যানজট, ফুটপাতহীন পথে চলছে ভোগান্তি

কোনও এক-দু’দিন নয়, যে কোনও সময়ে যানজট পরিস্থিতি হতে পারে উত্তর দমদম পুর এলাকার প্রাণকেন্দ্র মধুসূদন ব্যানার্জি রোড বা এম বি রোডে।

Advertisement

কাজল গুপ্ত ও আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:৫৮
Share:

অপ্রশস্ত: এম বি রোডের এক পাশে দাঁড়িয়ে লরি, ফলে তৈরি হচ্ছে জানজট। নিজস্ব চিত্র।

রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে দু’টি মালবাহী গাড়ি। আর তার জেরেই মুহূর্তে যানজট। কোনও এক-দু’দিন নয়, যে কোনও সময়ে এই পরিস্থিতি হতে পারে উত্তর দমদম পুর এলাকার প্রাণকেন্দ্র মধুসূদন ব্যানার্জি রোড বা এম বি রোডে। স্থানীয় বাসিন্দা তমাল হাজরা বলছেন, ‘‘জনসংখ্যার তুলনায় এখানে রাস্তা কম। তাই এম বি রোডই ভরসা, ফলে সেখানে গাড়ির চাপও বেশি। যানজটও সে কারণে নিত্যসঙ্গী এই পথে।’’

Advertisement

বি টি রোড এবং যশোর রোডের সংযোগকারী এই রাস্তাটি নিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে বিস্তর। যশোর রোডের বিরাটি থেকে বেলঘরিয়া হয়ে এই রাস্তা মিশেছে বি টি রোডে। উত্তর দমদম ও বেলঘরিয়া পুরসভার যান চলাচলের অন্যতম মূল রাস্তাও হল এটি। অথচ এমন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় ফুটপাতের অস্তিত্ব নেই। রাস্তার দু’পাশ জুড়ে শুধু রয়েছে একাধিক বাজার, নির্মাণ সামগ্রীর স্তূপ, খোলা নর্দমা। তাই হাঁটাচলা করতে রাস্তাই সম্বল। বেলঘরিয়ার বাসিন্দা মিতা বসু বলেন, ‘‘গত বছর টানা বৃষ্টিতে এম বি রোড ভেঙেচুরে গিয়েছিল। তার জন্য দীর্ঘদিন ভুগতে হয়েছে আমাদের। যদিও পূর্ত দফতর সেই রাস্তা মেরামত করেছে।’’

তবে সংস্কার হলেও অবস্থা এমনই যে, গোটাকতক মোটরবাইক দাঁড়িয়ে গেলেই যানজট তৈরি হয়। পুলিশ-প্রশাসনের তরফে রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিতে ট্র্যাফিক কর্মী এবং সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করায় কিছুটা সুরাহা মিললেও যানজটের সমস্যা রয়েই গিয়েছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। এছাড়া এই পুর এলাকার উপর দিয়েই গিয়েছে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে। তার সঙ্গে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের সংযুক্তিকরণের কাজ চলছে। ফলে সেই রাস্তার অবস্থাও তথৈবচ।

Advertisement

উত্তর দমদম পুরসভা দীর্ঘদিন বামেদের দখলে ছিল। ২০১৫ সালে তৃণমূলের হাতে আসে এই পুরসভা। কিন্তু ক্ষমতার বদল ঘটলেও এলাকার রাস্তার মানোন্নয়ন হয়নি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। তাই আরও একটি পুরভোটের মুখে দাঁড়িয়ে প্রচারে এলাকার রাস্তার হাল, ফুটপাত দখলের মতো সমস্যা নিয়েই শাসক ও বিরোধীদের মধ্যে চাপানউতোর চলছে। বামেদের অভিযোগ, পুর এলাকার বিভিন্ন রাস্তার অবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই খারাপ। তৃণমূলের পাল্টা দাবি, ৪৬ বছর ধরে এই পুরসভা বামেদের হাতে থাকলেও নগরোন্নয়নের কোনও সুসংহত পরিকল্পনা তখন করা হয়নি। তারই ফল ভুগতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। পুরসভার প্রাক্তন মুখ্য প্রশাসক তথা তৃণমূল প্রার্থী বিধান বিশ্বাস বলেন, ‘‘এত বছর ক্ষমতায় থেকেও বামেরা রাস্তাঘাটের আধুনিকীকরণ, পথচারীদের হাঁটাচলার মতো সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। গত বছর লাগাতার বৃষ্টিতে একাধিক রাস্তার হাল খারাপ হয়েছিল। সেই সব রাস্তা মেরামত করা হয়েছে।’’ তবে তিনি জানান, পথচারীদের জন্য নর্দমা সংস্কার করে ফুটপাত তৈরি এবং রেলিং দেওয়ার মতো কাজে হাত দিয়েছিল বিদায়ী পুর বোর্ড। আগামী দিনে সেই পরিকল্পনা পুরোপুরি কার্যকর করা হবে বলেই পুরভোটের প্রচারে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন দলীয় প্রার্থীরা।

পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা সিপিএম প্রার্থী সুনীল চক্রবর্তীর অবশ্য পাল্টা দাবি, বাম আমলে রাস্তার পাশে থাকা একটি বাজার সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেই পরিকাঠামো তৈরি হলেও নানা বাধায় বাজার সরানো সম্ভব হয়নি। বর্তমানে পথের পাশে সাবেক সেই নালা ভেঙে ফের নালা তৈরি করছে, যাকে উন্নয়ন বলছে তৃণমূল। বাসিন্দারা সবই দেখছেন।’’ বিধানের অবশ্য দাবি, বাম আমলে শুরু হলেও তৃণমূলের আমলেই বিরাটির কাছে বিকল্প বাজারের পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। বিজেপি নেতা অরিজিৎ বক্সী আবার বলছেন,
‘‘বেলঘরিয়া থেকে বিরাটি পর্যন্ত এম বি রোডের অবস্থা শোচনীয়। সাধারণ মানুষ নিত্যদিন দুর্ভোগের শিকার। তাতে অবশ্য শাসকদলের কিছুই যায় আসে না। বাজারের সংখ্যা বাড়ছে, দখলদারি বাড়ছে, কিন্তু কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ করা হয়নি।’’ যদিও এই অভিযোগ উড়িয়ে পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান, তৃণমূল প্রার্থী সুবোধ চক্রবর্তীর দাবি, মাত্র পাঁচ বছরে এলাকার রাস্তা উন্নয়নে যথেষ্ট জোর দিয়েছিল পুর বোর্ড। বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে সংলগ্ন সার্ভিস রোড তারই উদাহরণ।

আসন্ন পুরভোটের আগে প্রচারে জোরকদমে চলছে শাসক-বিরোধী দলের এই চাপানউতোর। তবে দিন দিন যে ভাবে জনসংখ্যা বাড়ছে, তাতে ভবিষ্যতের স্বার্থে আগামী পুর বোর্ডের কাছে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আশা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন