Shila Chowdhury

টাকা না ‘ঘনিষ্ঠতা’, কসবায় মহিলা খুনের মোটিভ নিয়ে এখনও ধন্দ

পুলিশ সূত্রে খবর, শীলার মত এক জন কেন্দ্রীয় সরকারি আধিকারিক কেন সাফাইকর্মীর কাছ থেকে টাকা ধার করবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। আর সেখান থেকেই উঠে আসছে আরও কিছু তথ্য।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৮ ২২:১২
Share:

শীলার বাড়িতে তদন্তকারী অফিসারেরা, (ইনসেটে শীলা চৌধুরী)। —নিজস্ব চিত্র।

শনিবার বিকেলে কসবার টেগোর পার্কের ঘরে শীলা চৌধুরীর নিথর দেহ যেখানে পড়ে ছিল, তার পাশেই টেবিলে ছিল একটা গ্লাস। তলানিতে পড়ে ছিল খানিকটা ফলের রস। আর সেই গ্লাসের সূ্ত্র ধরেই শেষ পর্যন্ত পুলিশের জালে ধরা পড়ল ন্যাটমোর সায়েন্টিফিক অফিসার শীলার খুনিরা। খুনিদের এক জনের বয়স আঠারো, অন্য জনের পনেরো।

Advertisement

গত কাল, ঘটনার দিন শীলার দেহ উদ্ধার হওয়ার পর, ফ্ল্যাটের সাফাইকর্মী শম্ভু দাবি করেছিল, দুপুর ১২টা নাগাদ সে এক বার গিয়েছিল শীলার ফ্ল্যাটে। তখন সেখানে নাকি উপস্থিত ছিলেন অন্য এক মহিলা, যাকে শম্ভু চেনে না। তখনই পুলিশের জেরার মুখে সে বলে, শীলা তাকে বিকেলে ‘সস’ নিয়ে যেতে বলেছিলেন। তাই সে বিকেলে ফ্ল্যাটের দিকে যাচ্ছিল, তখনই দেখা হয় শীলার বন্ধু তাপস পালের সঙ্গে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অবিশ্বাস করার কোনও কারণ ছিল না। জেরায় প্রথমে শম্ভু বলেছিল, তাকে ফলের রস খেতে দিয়েছিলেন শীলা। কিন্তু পরে ঘরে তল্লাশি চালাতে গিয়ে ঘরের একটা পরিত্যক্ত কোণে সেই ফলের রস পড়ে থাকতে দেখেন তদন্তকারীরা। সেখান থেকেই তদন্তকারীদের সন্দেহ হয়, কেন তুচ্ছ একটা বিষয়ে মিথ্যে কথা বলল শম্ভু।

তার পরই শুরু হয় শম্ভুকে টানা জেরা। আর সেই জেরার মুখেই শেষ পর্যন্ত আঠারো বছরের শম্ভু কয়াল স্বীকার করে, সেই শনিবার দুপুরে খুন করেছিল শীলাকে। আর তার সঙ্গী ছিল তার বন্ধু, যার মা শীলার বাড়িতে আগে পরিচারিকার কাজ করতেন। এক মাস আগে কাজ ছেড়ে দেন সেই পরিচারিকা।

Advertisement

পারিবারিক অ্যালবাম থেকে। (একেবারে ডান দিকে শীলা চৌধুরী)। —নিজস্ব চিত্র।

কিন্তু কেন খুন?

কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান প্রবীণ ত্রিপাঠী জানিয়েছেন,“ শম্ভু ওই এলাকাতেই থাকে। পড়াশোনার পাশাপাশি সে ওই আবাসনের একাধিক ফ্ল্যাটে সাফাইয়ের কাজ করত। সেই সূ্ত্রেই শীলার সঙ্গে আলাপ। জেরায় শম্ভু দাবি করেছে, শীলা নাকি তার কাছ থেকে ২৭ হাজার টাকা ধার নিয়েছিল। বার বার চাওয়ার পরও সেই টাকা ফেরত দিচ্ছিলেন না শীলা। শনিবারও সেই টাকা চাইতে গিয়েছিল শম্ভু। তখনই শুরু হয় বচসা। আর সেই বচসার জেরেই খুন করে সে।”

আরও পড়ুন: কসবায় মহিলা খুনে, গ্রেফতার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ও তার নাবালক বন্ধু

পুলিশ সূত্রে খবর, শীলার মত এক জন কেন্দ্রীয় সরকারি আধিকারিক কেন সাফাইকর্মীর কাছ থেকে টাকা ধার করবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। আর সেখান থেকেই উঠে আসছে আরও কিছু তথ্য। সূত্রের খবর, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী শম্ভুর সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠ’ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল শীলার। আর সেই ঘনিষ্ঠতা থেকেই টাকা-পয়সার লেনদেন এবং সম্পর্কের টানাপড়েন। সেই টানাপড়েনও এই খুনের পিছনে কারণ হিসেবে কাজ করেছে বলে ধারণা তদন্তকারীদের।

আরও পড়ুন: কসবার ফ্ল্যাটে মহিলা অফিসার খুন, আততায়ী কি ঘনিষ্ঠ কেউ?

ধৃত: শম্ভু কয়াল। —নিজস্ব চিত্র।

জেরাতে পুলিশের কাছে শম্ভু স্বীকার করেছে, ঠিক কী ভাবে খুন করেছে শীলাকে। এক তদন্তকারী বলেন,“বচসার জেরে শম্ভু ঝাঁপিয়ে পড়ে শীলার ওপর। তার পর শীলার মাথা ঠুকতে থাকে এলোপাথাড়ি। তাতেই সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন প্রৌঢ়া। তত ক্ষণে শীলার মাথা ফেটে রক্ত বেরোতে শুরু করেছে। তা দেখে সম্বিৎ ফেরে শম্ভুর। আর তার পরই বালিশ দিয়ে শ্বাসরোধ করে শীলার মৃত্যু নিশ্চিত করে শম্ভু। খুনের পর গ্যাস সিলিন্ডার খুলে গোটা ঘটনাটিকে দুর্ঘটনার চেহারা দেওয়ার পরিকল্পনাও করেছিল সে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাহসে কুলোয়নি। পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে বিছানা আলমারি লন্ডভন্ড করে মাত্র ৭ হাজার টাকা নিয়ে চম্পট দেয় সে।

এই গোটা অপরাধে আগাগোড়া সামিল ছিল শম্ভুর নাবালক বন্ধু। সোমবার দু’জনকেই আদালতে তোলা হবে। পুলিশ সূত্রে খবর, শম্ভুকে ফের জেরার জন্য নিজেদের হেফাজতে চাইবে কসবা থানার পুলিশ। কারণ খুনের সঠিক মোটিভ নিয়ে এখনও ধন্দে গোয়েন্দারা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন