কলকাতা পুরসভার অফিসেই ভাড়া নেওয়া এই দোকানে ছিল অহমিয়া ভাষার সাইনবোর্ড। ছবি: অমিত রায়
বিজেপিশাসিত রাজ্যে বাংলা ভাষায় কথা বললে বাংলাদেশি বলে হেনস্থা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে তৃণমূল। সেই আবহেই কলকাতা পুরসভা ফের শহরের দোকান ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে বাংলায় লেখা সাইনবোর্ড বাধ্যতামূলক করতে কঠোর অবস্থান নিতে চলেছে। সম্প্রতি ধর্মতলায় একটি দোকানে অহমিয়ায় লেখা সাইনবোর্ড দেখে এ নিয়ে তৎপর হয়েছে পুরসভা।
কলকাতার এস এন ব্যানার্জি রোডের ‘নিজাম বিল্ডিং’-এ পুরসভারই একটি অফিসের নীচে একাধিক দোকান ভাড়া দেওয়া হয়েছে। সেখানে একটি নতুন জুতোর শোরুম খোলা হয়েছে। সাইনবোর্ডে সেই দোকানটির নাম ইংরেজির পাশাপাশি অহমিয়া ভাষায় লেখা ছিল। বিষয়টি কলকাতা পুরসভার আধিকারিকদের নজরে আসতেই তৎক্ষণাৎ পদক্ষেপ করে লাইসেন্স বিভাগ। দোকানমালিককে চিঠি দিয়ে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, বাংলায় সাইনবোর্ড বাধ্যতামূলক এবং অহমিয়া ভাষা রাখা যাবে না। যেহেতু খোদ কলকাতা পুরসভার অফিসের বিল্ডিংয়েই ওই দোকানটি রয়েছে, তাই বিষয়টি নিয়ে আর কালবিলম্ব করতে চায়নি পুরসভা। তড়িঘড়ি নির্দেশ পাঠানো হয় ওই দোকানটির মালিকপক্ষের কাছে। সেই নির্দেশ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দোকান কর্তৃপক্ষ সাইনবোর্ড বদলে ফেলেন। বর্তমানে সেখানে লাল হরফে বাংলায় লেখা রয়েছে দোকানের নাম, সঙ্গে ইংরেজি ভাষাও রাখা হয়েছে।
বাংলা ও বাঙালির অস্মিতা (গরিমা) রক্ষায় আন্দোলন শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই আবহে পুরসভায় বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়ানোর পক্ষেই মত দিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তাই এই বিষয়টি নজর আসতেই কড়া পদক্ষেপের পাশাপাশি শহরের সব ক্ষেত্রেই বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়াতে চাইছেন পুরসভা কর্তৃপক্ষ। তবে এমন পদক্ষেপের নেপথ্যে ভাষা এবং সংস্কৃতির প্রতি একটি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বার্তা রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। রাজনৈতিক মহলের একাংশ আবার পুরসভার এই সিদ্ধান্তকে শাসকদল তৃণমূলের ভোট রাজনীতির সঙ্গে মিলিয়ে দেখছেন। কারণ, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি বিরুদ্ধে লড়াই করতে তৃণমূল হাতিয়ার করতে চায় বাংলা ভাষা এবং বাঙালি অস্মিতাকে। তাই প্রতি শনি এবং রবিবার তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের ভাষা আন্দোলনের নাম দিয়ে মিছিল করে বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কর্মসূচি করতে বলেছেন মমতা। এই আবহে কলকাতা শহরের দোকানপাটের নাম বাংলায় লিখতে জোর দিচ্ছে পুরসভা। এমনটাই মত রাজনীতির কারবারিদের একাংশের।
উল্লেখ্য, গত বছর কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদীর সরকার বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দেওয়ার পর থেকেই এই বিষয়ে তৎপর হয় কলকাতা পুরসভা। সেই সময় মেয়র ফিরহাদ হাকিম নির্দেশ দেন, কলকাতার সমস্ত দোকানে বাংলায় সাইনবোর্ড থাকা বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি বহু পুরনো পথের নির্দেশিকা এবং সাইনবোর্ডও বদলে ফেলা হয় বাংলায়। কয়েক মাস পর সেই কাজে গতি শ্লথ হয়ে গেলেও, ফের একবার এই কাজে গতি এনে বাংলা ভাষার প্রতি সম্মান জ্ঞাপন করতে চায় তৃণমূল। পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, ভবিষ্যতেও এই বিষয়ে নিয়ম ভাঙলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। শুধু সরকারি নয়, বেসরকারি অফিস, হোর্ডিং, শোরুম— সর্বত্রই এই নিয়ম মানতে হবে।