বেন স্টোকসদের নিশানা অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যমের। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
চার মাস পরেই শুরু অ্যাশেজ় সিরিজ়। এ বার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে গিয়ে খেলতে হবে ইংল্যান্ডকে। চার মাস আগে থেকেই ইংল্যান্ডকে নিশানা করা শুরু করে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম। ম্যাঞ্চেস্টারে রবীন্দ্র জাডেজা ও ওয়াশিংটন সুন্দরের শতরানের আগে বেন স্টোকসের ম্যাচ ড্র করার প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক বাড়ছে। তাতে ঘি ঢেলেছে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম। স্টোকসদের তুলোধনা করছে তারা।
ম্যাঞ্চেস্টারে পঞ্চম দিন শেষ এক ঘণ্টায় ১৫ ওভারের খেলা বাকি ছিল। তখনও ক্রিজ়ে জাডেজা ও ওয়াশিংটন। ভারতের লিড তখন ৭৫ রান। স্টোকস বুঝে গিয়েছিলেন, ভারতের বাকি ছয় উইকেট ফেলে আর এই ম্যাচ জেতা সম্ভব নয়। তাই তিনি ড্রয়ের প্রস্তাব দিতে যান। কিন্তু তাঁর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন ভারতের দুই ব্যাটার। কারণ, তত ক্ষণে তাঁরা শতরানের কাছে পৌঁছে গিয়েছেন। পরের তিন ওভারের মধ্যে দু’জন শতরান করেন। স্টোকস জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে ব্যক্তিগত মাইলফলক দলের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, ভারতের দুই ব্যাটারের শতরানের আগে খেলা বন্ধ করতে চেয়ে ক্রিকেটের গায়ে কালি লাগিয়েছেন স্টোকস।
‘দ্য অস্ট্রেলিয়ান’-এর শিরোনাম ‘ভণ্ড ইংল্যান্ড মনে করে শতরান ক্রিকেটের পরিপন্থী।’ ম্যাঞ্চেস্টার টেস্টের পর স্টোকসকে সমর্থন করেছেন ইংল্যান্ডের প্রাক্তন ক্রিকেটার জোনাথন ট্রট। তাঁর মতে, ভারত ব্যক্তিগত মাইলফলকের কথা ভেবেছে। এতে ক্রিকেটের উপর কালি লেগেছে। ট্রটের এই মন্তব্য নিয়েই খোঁচা মেরেছে ‘দ্য অস্ট্রেলিয়ান।’ তারা লিখেছে, অ্যাশেজ়ের আগে ইংল্যান্ড ভয় পাচ্ছে। ভারতের দুই ব্যাটার তাদের মুখের উপর ‘না’ বলার সাহস দেখিয়েছে। তাতে ইংল্যান্ড আরও ভয় পেয়ে গিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় আসার আগে ইংল্যান্ড চাপে থাকবে।
‘দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’ তাদের প্রতিবেদনের শিরোনামে লিখেছে, ‘ঘ্যানঘ্যানে ইংল্যান্ড, আমাদের ক্ষমা করো, তোমাদের ঔদ্ধত্যই একমাত্র লজ্জার বিষয়।’ সেখানে ড্যানিয়েল ব্রেটিগ লিখেছেন, যখন খেলা ইংল্যান্ডের পক্ষে থাকে তখন তারা খুব আনন্দে থাকে। কিন্তু যখনই খেলা তাদের বিপক্ষে চলে যায়, তখনই তারা বাচ্চাদের মতো করে। আবার কখনও ঔদ্ধত্য দেখায়। অ্যাশেজ়ে কিন্তু এ সব করে ইংল্যান্ড পার পাবে না।
‘ডেইলি টেলিগ্রাফ’-এর শিরোনাম ‘টেস্টের একটা ক্লাসিক ম্যাচে কালি লাগিয়ে দিল ইংল্যান্ড।’ পিটার জেনকিন্স লিখেছেন, ইংল্যান্ডের অহঙ্কার ও অক্রিকেটীয় মানসিকতা একটা ক্লাসিক টেস্ট ম্যাচে কালি লাগিয়ে দিল। এতে অ্যাশেজ়ের আগে উত্তেজনা আরও বেড়ে গেল। নিজেদের ঘরের মাঠেই যদি ইংল্যান্ডের এই অবস্থা হয় তা হলে অস্ট্রেলিয়ায় এসে ওরা কী করবে? এখানে ওদের হাল আরও খারাপ হবে।
পিছিয়ে নেই ‘হেরাল্ড সান’-ও। তাদের প্রতিবেদনের শিরোনাম ‘নির্লজ্জ! ক্রিকেটবিশ্ব ইংল্যান্ডের নিন্দা করছে।’ সেখানে লেখা হয়েছে, ভারতের বিরুদ্ধে চতুর্থ টেস্টে স্টোকস যে অক্রিকেটীয় মানসিকতা দেখিয়েছে তাতে ওঁকে নির্লজ্জ ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। ইংল্যান্ড ক্রিকেটের সম্মানহানি করেছে। স্টোকস ইচ্ছা করে দুই ব্যাটারের শতরান আটকাতে চেয়েছিল। এর থেকে লজ্জার আর কিছু হয় না।
ক্রিকেটে যেমন ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ, তেমনই অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড অ্যাশেজ়। ১৮৮৬ সাল থেকে শুরু হয়েছে এই প্রতিযোগিতা। এখনও পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া ৩৪ বার এই সিরিজ় জিতেছে। ইংল্যান্ড জিতেছে ৩২ বার। এই সিরিজ়ে টেস্ট জয়ের নিরিখেও এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া। তারা ১৪০ টেস্ট জিতেছে। ইংল্যান্ড জিতেছে ১০৮ টেস্ট। এ বারের অ্যাশেজ়ের উপর অনেকটাই নির্ভর করছে এই দুই দলের মধ্যে কারা পরের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলবে। সেই সিরিজ়ের চার মাস আগে থেকেই ইংল্যান্ডকে চাপে রাখা শুরু করে দিল অস্ট্রেলিয়া। তাদের সুবিধা করে দিল ভারতের লড়াই।