গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
বর্ষার মরসুম পড়তে না পড়তেই খাদ্যরসিক বাঙালির রসনাতৃপ্তির জন্য চাহিদা বাড়ছে ইলিশের। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে এ বার আর বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশ বাংলায় আসছে না। তাই রাজ্যে ইলিশের জোগান বাড়াতে নির্ভর করতে হচ্ছে ভিন্রাজ্যের উপর। এ বার বাংলায় ইলিশের পর্যাপ্ত জোগান ধরে রাখতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যকে নির্ভর করতে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাটের উপর। সেখানকার নর্মদা নদীতেও পাওয়া যায় জলের রুপোলি শস্য। সেখানে থেকেই রাজ্যে ইলিশ আমদানি করা হচ্ছে বলেই জানিয়েছে মৎস্য দফতরের একটি সূত্র। সেই সঙ্গে ইলিশ আসছে মায়ানমার থেকেও।
২০২৪ সালের ৫ অগস্ট বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। ওই দিনই ঢাকা থেকে পালিয়ে দিল্লি পৌঁছন তিনি। তার পর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসকে বাংলাদেশ সরকারের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করা হয়েছে। সেই থেকে ধারাবাহিক ভাবে দু’দেশের মধ্যে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে দু’দেশের বাণিজ্যিক ক্ষেত্রেও। সেই আবহে এ বার কলকাতা তথা বাংলার কোনও প্রান্তে পদ্মার ইলিশ আসেনি। তাই বিকল্প হিসাবে রাজ্য সরকারের মৎস্য দফতর মায়ানমার থেকে ইলিশ মাছ আমদানির প্রচেষ্টা শুরু করে। পাশাপাশি, ভারতের আর কোনও রাজ্য থেকে ইলিশ এনে রাজ্যের মানুষের চাহিদা মেটানো যায়, সেই চেষ্টাও শুরু হয়। মায়ানমার থেকে ইলিশ আনার কাজ শুরু হয় বর্ষার শুরুতেই। দেশের মধ্যে গুজরাতের নর্মদায় বেশ ভাল মানের ইলিশ পাওয়া যায় বলেই জানতে পারেন মৎস্য দফতরের আধিকারিকেরা। তাই মোদীর রাজ্য থেকেও ইলিশ কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন বাজারগুলিতে এনে জোগান স্বাভাবিক করার চেষ্টা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গায় যে ইলিশ একেবারেই পাওয়া যায় না, তা নয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ডায়মন্ডহারবার এবং কুলপির গঙ্গা থেকে ভাল ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। এ ছাড়াও উলুবেড়িয়া এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সীমান্তে বয়ে চলা রূপনারায়ণ নদীতেও ইলিশ পাওয়া যায়। বাংলার মাছের বাজারে এই ইলিশ আবার ‘কোলাঘাটের ইলিশ’ নামেই খ্যাত। তবে পশ্চিমবঙ্গের ভাগীরথীতে যে ইলিশ পাওয়া যায়, তার ওজন খুবই কম বলেই জানাচ্ছেন মৎস্য দফতরের এক আধিকারিক। তাই কলকাতায় বড় মাপের ইলিশের জোগান দিতেই মায়ানমার এবং গুজরাত থেকে মাছ আনা হচ্ছে। এ বছর সবচেয়ে বেশি ইলিশ আনা হয়েছে মায়ানমার থেকে। তারপরেই আনা হচ্ছে নর্মদার ইলিশ। দু’টি ক্ষেত্রেই ইলিশের ওজন এক কেজি থেকে শুরু হচ্ছে। তাই বাজারে এই ইলিশ বিকোচ্ছে চড়া দামে। দাম বেশি হলেও, বড় মাপের ইলিশ কিনতে কাপর্ণ্য করছেন না ক্রেতারা। এমনটাই জানিয়েছেন মানিকতলা বাজারের এক মৎস্য ব্যবসায়ী।
আর ইলিশের জোগান প্রসঙ্গে মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা সব সময় চেষ্টা করি, যাতে রাজ্যের সব মানুষ ইলিশ মাছের স্বাদ পান, তা-ও আবার ন্যায্য দামে। তাই আমাদের রাজ্যের যেখানে যেখানে ইলিশ মাছ পাওয়া যায়, সেখানে তো বিশেষ নজরদারি করে ইলিশ বাজারে আনার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। তেমনই দেশের বাইরে কিংবা ভিন্রাজ্য থেকেও আমরা ইলিশ এনে বাঙালিকে ইলিশ মাছের স্বাদ দেওয়ার চেষ্টা করছি।’’ মৎস্য দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, প্রায় প্রতি দিনই বাংলার চাহিদা মেটাতে মায়ানমার এবং গুজরাত থেকে ইলিশ আসছে।