আরও এক পুর নির্বাচনের প্রতীক্ষায় কলকাতা। এ শহর নিয়ে কী ভাবছেন ওঁরা?
Rashid Khan

KMC Election 2021: সরকার আর আমরা মিলেই শহরকে সুন্দর করতে পারি

সালটা ১৯৭৮। এ শহরে আমার আসা সে বছরই। উস্তাদ নিসার হুসেন খান সাহেব পারিবারিক সম্পর্কে আমার দাদু।

Advertisement

রাশিদ খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:৩৮
Share:

সঙ্গীতশিল্পী রাশিদ খান। ফাইল চিত্র।

আমার জন্ম উত্তরপ্রদেশের বদায়ূঁ জেলায়। সে রাজ্যের গঙ্গা-তীরবর্তী ঐতিহাসিক বদায়ূঁ এক সময়ে সুলতানি সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল। সেখান থেকে সোজা এসে পড়লাম গঙ্গাতীরের আর এক রাজধানী শহর, কলকাতায়। বয়স তখন দশ। আজ চার দশকেরও বেশি কলকাতায় আছি। অনেক কিছু দেখেছি। আরও অনেক দেখছি। সবটাকেই আপন করে নিতে পেরেছি। কারণ, এ শহর আমাকে কাছে টেনেছে, পরিচিতি দিয়েছে, সম্মান পেতে শিখিয়েছে। তাই আজ ঘর বললে এ শহরের কথাই মনে হয়।

Advertisement

সালটা ১৯৭৮। এ শহরে আমার আসা সে বছরই। উস্তাদ নিসার হুসেন খান সাহেব পারিবারিক সম্পর্কে আমার দাদু। তাঁর সঙ্গে শরীরটা চলে এল বটে, কিন্তু মন পড়ে থাকত বদায়ূঁতে। তিন বছর বয়সে মাকে হারিয়েছি। নিজের ছোট একটা ভাই ছিল, সে-ও শৈশবে মারা যায়। বাবাকে তাই ছেড়ে থাকতে খুব কষ্ট হত। কাঁদতাম। আইটিসি সঙ্গীত রিসার্চ অ্যাকাডেমিতে দাদুর যোগদানের সূত্রে আমরা নিউ আলিপুরে সংস্থার কোয়ার্টার্সে থাকতে শুরু করি। সঙ্গে শুরু হল আমারও সঙ্গীতের পাঠ।

অবশ্য বদায়ূঁতে থাকাকালীনই উস্তাদ নিসার হুসেন খানের কাছে আমার সঙ্গীত-শিক্ষার হাতেখড়ি। অসম্ভব কড়া শিক্ষক ছিলেন দাদু। ভোর চারটে থেকে শুরু হত স্বর সাধনা। এমনও হয়েছে, একটি নোট অভ্যাস করতেই কেটে গিয়েছে গোটা দিন! মাঝেমধ্যেই কড়া বাঁধন ছিঁড়ে পালিয়ে যেতাম। এক-দু’মাস হাওয়া। বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতাম এ দিকে, ও দিকে। পরে ফের দাদুর কাছে গিয়ে পায়ে পড়ে ক্ষমা চেয়ে নিতাম।

Advertisement

তখনও দেখতাম, আজও দেখি শহরটাকে। বাইরে ও ভিতরে অনেকটা বদলেছে। বেড়েছে জনসংখ্যা, গাড়ি। বাড়ছে উঁচু উঁচু ইমারত। কমছে গাছপালা। গতির সঙ্গে পাল্লা দিতে উড়ালপুলে সেজে উঠছে শহর। দেখতে ভালই লাগে। কিন্তু গাছ কমে যাওয়াটা তো বড় ক্ষতি। আমরা সেটা কেন বুঝতে চাইছি না? গাছ কমে যাওয়ারই অন্যতম পরিণাম আবহাওয়ার খামখেয়ালি পরিবর্তন। এই বিষয়টি নিয়ে সরকারের পাশাপাশি আমাদের মতো নাগরিকদেরও ভাবতে হবে।

আবর্জনার ব্যবস্থাপনায় আধুনিক কিছু যন্ত্র এসেছে বটে, তবুও শহর যতটা পরিষ্কার থাকা উচিত, ততটা থাকছে কোথায়? সরকার শহরটাকে যথেষ্টই সাজাচ্ছে। কিন্তু প্রশাসনের সব স্তরে শহরের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে ততটা সক্রিয়তা হয়তো নেই। যেমন আমরাও নিজেদের কর্তব্য নিয়ে ভাবি না। শুধুই আঙুল তুলি সরকারের দিকে। নাগরিক হিসাবে আমাদেরও দায়িত্ব যথেষ্ট।

আমি থাকি নাকতলায়। এখানে জল জমে ঠিকই, তবে রাস্তাঘাট পরিষ্কার। পুর প্রতিনিধি কাজ করেন। কিন্তু শহরের সব জায়গায় সেই ছবি তো দেখি না। তার মানে নিশ্চয়ই সেখানে মানুষ ও পুর প্রতিনিধি, কেউই তেমন সক্রিয় নন। রাস্তা মেরামতি, নিকাশির উন্নতি, আবর্জনা সাফাই ও সবুজায়নের মতো বিষয়ে পুর প্রশাসনকে আরও যত্নবান হতে হবে। আমাদেরও সমান সজাগ থাকতে হবে।

তবেই আমার কলকাতা বাহ্যিক দিক থেকে আরও সুন্দর হয়ে উঠবে।

(লেখক সঙ্গীতশিল্পী)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন