Biman Basu

KMC Election 2021: ভোট দিয়ে যায় চেনা! বুথের পথে খেলাচ্ছলে একাশির বিমান ‘অচেনা’ একুশে

ভোট-উৎসবের সেরা ফ্রেমটা তৈরি করে দিলেন বিমান বসু। ৮১ বছরের বৃদ্ধই তিলোত্তমার ভোট পরবকে সাজিয়ে দিলেন অন্য রঙে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ ২১:০৫
Share:

বিমান বসু।

খেলা হবে। গত বিধানসভা নির্বাচন থেকেই এই স্লোগান রাজনৈতিক হয়ে উঠেছে বাংলায়। একে অপরের বিরুদ্ধে রণংদেহী হয়ে রাজনৈতিক নেতারা ‘খেলা হবে’ বলে হুঙ্কার দিয়েছেন। কিন্তু কাউকেই কখনও খেলার মুডে দেখা যায়নি। রবিবার পুরভোটের কলকাতায় ‘খেলা হবে’ স্লোগান নয়, দেখা গেল খেলার মুড।

ও দিকের দলে চার জন। বয়স আট থেকে দশের মধ্যে। এ দিকে এক জন। তাঁর বয়স ৮১। কচিকাঁচাদের দলে আবার দু’জনের ‘জার্সি’হলুদ আর দু’জনের লাল। আর এ দিকের প্রবীণের মাথার চুল থেকে পরনের কাপড় সবটাই দুধ সাদা। তিনি লালপতাকার বাহক, কমরেড। তিনি মার্কসবাদি কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য। তিনি বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান। বিমান বসু। তবে রাস্তায় তাঁর ঘুষি পাকানো ছবি দেখলে বয়স বোঝা দায়। খুদে দলের খুদেতমটির অনুকরণে তিনিও ঘুষি পাকিয়ে যেন মুষ্টিযুদ্ধে আহ্বান জানাচ্ছেন। যেন বলছেন, ‘এসো, বক্সিং খেলা হবে।’

Advertisement

পদে মানে তিনি যতই উপরতলার লোক হোন না কেন সিপিএম নেতা বিমান বসুকে রাশভারী বলা যাবে না। বরাবরই হাস্যমুখ তিনি। তবে কখনও কখনও রুদ্ররূপেও দেখা দিয়েছেন। তবে সংবাদমাধ্যমের সামনে বরাবর হাসি মুখেই দেখা দিয়েছেন বেশি। কিন্তু রাস্তায় এমন ছেলেমানুষি অতীতে কখনও দেখা গিয়েছে কি! মনে করা যাচ্ছে না।

কেন মনে করা যাচ্ছে না তারও রাজনৈতিক জবাব রয়েছে। আসলে গত বিধানসভা নির্বাচনে শূন্যে পৌঁছে যাওয়া সিপিএম এই পুরভোটে অনেকটাই ব্রাত্য। ২০১৫ সালেও ১৫টা ওয়ার্ডে জয় পাওয়া বামফ্রন্ট এ বার খাতা খুলতে পারবে কি না তা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের কর্তারাও। তাই এটা কেউ বলতেই পারেন যে, পরিবর্তিত পরিস্থিতি এমন হালকা মেজাজে থাকার সুযোগ করে দিয়েছে বিমানকে। চাপহীন ভোট বলেই না এমন নির্ভার বিমান!

Advertisement

কলকাতার ভোটে সকাল থেকেই তারকাদের দেখা গিয়েছে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও ভোট দিতে গিয়েছেন নিজের নিজের ওয়ার্ডে। কেউ হাসি মুখে হাতের আঙুল কালির দাগ দেখিয়ে গণতন্ত্র রক্ষার গর্বের হাসি হেসেছেন। কেউ বিরোধী পক্ষের বিরুদ্ধে ঝাঁঝালো আক্রমণ শানিয়েছেন।

তবে তার মধ্যেই কিছু কিছু ছবি কলকাতার পুরভোটকে উৎসবের ফ্রেমে জায়গা করে দিয়েছে। ৮২ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী কলকাতার বিদায়ী মেয়র ফিরহাদ হাকিম। রবিবার তাঁকে দেখা যায় সপরিবারে ভোট দিতে এসেছেন। ঠিক ঠাকুর দেখতে বেরনোর মতোই স্ত্রী, কন্যাদের নিয়ে বেরিয়েছিলেন কলকাতার প্রথম নাগরিক।

ভোট দিয়েছেন রাজ্যের প্রথম নাগরিকও। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় ভোট দেওয়ার পরে বাঁ হাতের তর্জনী উঁচিয়ে কালি লাগানো ছবিও তুলেছেন। তবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে নিরাপত্তাকর্মীদের নিয়ে ঢুকতে না পারার জন্য খানিক উষ্মাও প্রকাশ করেছেন। আবার বিজেপি সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায় ভোট দিয়ে বেরিয়ে নিজের দলের বিরুদ্ধেই নানা অভিযোগ তুলেছেন।

হাসিমুখে ভোট দিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে দাঁড়াতে দেখা যায় অভিনেতা সাংসদ দেবকে। ঘাটালের সাংসদ দেব এখন ব্যস্ত আগামী শুক্রবার তাঁর নতুন ছবি ‘টনিক’-এর মুক্তি নিয়ে। তার পরের দিন আবার জন্মদিন। তার আগে ব্যস্ত দেব নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে ভোলেননি। এই ভোটে প্রার্থী হয়েছেন প্রাক্তন সিএবি কর্তা বিশ্বরূপ দে। তিনি ভোট নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও রবিবার ক্যামেরার সামনে ধরা দিয়েছেন ক্রিকেট প্রশাসক অভিষেক ডালমিয়া।

রাজ্যের দুই তারকা ভোটারের ভোট ছিল মিত্র ইন্সটিটিউশনে। দুপুরের দিকে ভোট দিতে আসেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোট দিয়ে বেরিয়ে তিনি রাজনৈতিক বার্তা দেন। আর বিকেলের দিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই একই বুথে ভোট দিয়ে বেরিয়ে দাবি করেন, উৎসবের মুডেই ভোট হয়েছে কলকাতায়।

কিন্তু এটা মানতেই হবে যে, সেরা ফ্রেমটা তৈরি করে দিলেন বিমান বসু। ৮১ বছরের বৃদ্ধই তিলোত্তমার ভোট পর্বকে সাজিয়ে দিলেন অন্য রঙে।

যে রঙের আর এক নাম ‘ছেলেমানুষি’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন