দিলচাঁদ সিংহ। — নিজস্ব চিত্র।
ছন্দেই চলছে দিলচাঁদ সিংহের হৃদপিণ্ড। সোমবার সফল ভাবে হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের পর ক্রমেই সুস্থ হয়ে উঠছেন ঝাড়খণ্ডের ওই স্কুলশিক্ষক। হাসপাতাল সূত্রে খবর, তিনি এখন ভেন্টিলেশন ছাড়াই স্বাভাবিক ভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নিচ্ছেন। জলও খাচ্ছেন। এমনকি, কথাও বলছেন। যদিও ৯৬ ঘণ্টা না কাটলে, তাঁকে সম্পূর্ণ বিপম্মুক্ত বলা যাবে না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। আপাতত তিনি ফর্টিস হাসপাতালেই মেডিক্যাল বোর্ডের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।
হাসপাতাল সুপার আরাফত ফয়জল জানিয়েছেন, বেঙ্গালুরুতে ‘ব্রেন ডেথ’ হওয়া যুবক বরুণ ডিকে-র হৃদযন্ত্র সফল ভাবে দিলচাঁদের শরীরে প্রতিস্থাপনের পর এখনও পর্যন্ত কোনও সমস্যা হয়নি। দিলচাঁদ এখন নতুন হৃৎপিণ্ড নিয়ে অনেকটাই স্বাভাবিক। তাকে ভেন্টিলেশনমুক্ত করা হয়েছে। চিকিৎসকদের চিন্তা ছিল, অস্ত্রোপচারের পর কতটা সাড়া দেবেন দিলচাঁদ? আপাতত সেই আশঙ্কা কেটেছে বলে চিকিৎসকদের দাবি।
দক্ষিণ ভারতে সফল ভাবে হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের বহু নজির রয়েছে। পূর্বভারতে তেমন নজির এর আগে ছিল না। বরুণ এবং দিলচাঁদের সূত্রেই পূর্বভারতের কলকাতায় নতুন করে ইতিহাস তৈরি হল। গত রবিবার বেঙ্গালুরুতে পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন বরুণ ডিকে। তাকে ‘স্পর্শ’ হাসপাতালে। গত ১৯ মে তাঁর ‘ব্রেন ডেথ’ হয়। পরিবার বরুণের অঙ্গদানের ইচ্ছাপ্রকাশ করে। তার পরেই ওই হাসপাতাল যোগাযোগ করে চেন্নাইয়ের ‘মালহার ফর্টিস’ হাসপাতালের সঙ্গে। ওই হাসপাতালে তখন কোনও গ্রহিতা ছিলেন না। তারাই কলকাতা ফর্টিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারে, এখানে ঝাড়খণ্ডের দিলচাঁদ সিংহ ভর্তি রয়েছেন। তাঁর হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন। এর পরেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় বরুণের হৃদপিণ্ড আনার ব্যবস্থা করা হয়। কলকাতা ফর্টিস রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর ও প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
আরও পড়ুন: শহরে প্রথম হৃৎপিণ্ড বদল, শল্য চিকিত্সায় মাইলফলক ছুঁল পূর্ব ভারত
আরও পড়ুন: ভাড়াটে খুনিকে ৬০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন শম্পার স্বামী!
যোগাযোগ করা হয় জাতীয় অঙ্গ প্রতিস্থাপন সংগঠন (এনওটিও)-এর সঙ্গে। সবুজ সঙ্কেত পেয়েই চার্টার্ড বিমানে কলকাতায় নিয়ে আসা হয় বরুণের হৃদযন্ত্র। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে মাত্র ১৮ মিনিটে পৌঁছয় হৃদপিণ্ড পৌঁছে যায় হাসপাতালে। চিকিৎসক তাপস রায়চৌধুরী এবং কে এম বন্দনার নেতৃত্বে ৩০ জনের একটি দল দিলচাঁদের অপারেশন করেন। হাসপাতাল সূত্রে খবর, আপাতত দিলচাঁদকে পর্যবেক্ষণেই রাখছেন চিকিৎসকেরা। এই ধরনের অপারেশনের পর পর্যবেক্ষণ সময়টিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।