সফর: শহরের রাস্তায় সাইকেলে সওয়ার বিদেশিরা। বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটে। ছবি: সুমন বল্লভ
সপ্তাহে ঠিক ক’টি সাইকেল চলে এ শহরে? তা জানেন ক’জনে!
সেই তথ্য সংগ্রহ করতেই শহরের একটি সাইকেল ক্লাবের উদ্যোগে গত ২ মে থেকে শুরু হয়েছে সাইকেলসুমারি। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় এই কাজ চলবে টানা এক মাস। উদ্দেশ্য, পরিবেশ বাঁচাতে সাইকেল-সচেতনতার প্রচারের আগে বাস্তব পরিস্থিতি বুঝে নেওয়া।
উদ্যোক্তাদের দাবি, গত দু’বছরে সদস্য সংখ্যা চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। কিন্তু তাঁদের বক্তব্য, কলকাতা এবং বৃহত্তর শহরের রাস্তাগুলিতে সাইকেল চালানোর পরিকাঠামো এখনও ঠিকমতো গড়ে ওঠেনি। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ট্র্যাফিক গার্ড এবং পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ওই ক্লাবের সদস্যেরা। তারই পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে এই সাইকেলসুমারির ভাবনা।
প্রসঙ্গত, বিশ্ব জুড়ে সাইকেল নিয়ে কার্যত বিপ্লব শুরু হয়েছে। ইউরোপ, দক্ষিণ এশিয়া এবং লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন শহরে সাইকেলের জন্য আলাদা ‘বে’ বা রাস্তা তৈরি হয়েছে। ইউরোপের বেশ কিছু শহরে সপ্তাহান্তে বিশেষ বিশেষ অঞ্চলে গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ হয়েছে সাইকেলকে উৎসাহ দিতে। কেবলমাত্র সাইকেল নিয়েই সেখানে পৌঁছনো সম্ভব। সম্প্রতি জার্মানির বন শহরে আয়োজিত একটি পরিবেশ আলোচনাতেও সাইকেলের ব্যবহার বাড়ানোর উপর জোর দেওয়া হয়েছে। গত ১২ এপ্রিল রাষ্ট্রপুঞ্জ ৩ জুন দিনটিকে ‘বিশ্ব সাইকেল দিবস’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পরিবেশবিদদের বক্তব্য, বিশ্ব জুড়ে শুরু হওয়া সেই সাইকেল-বিপ্লবে শহর কলকাতাকেও সামিল করতে এমন সুমারি খুবই প্রয়োজনীয়।
উদ্যোক্তাদের দাবি, সোম থেকে শুক্রবার পর্যন্ত শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিতে সমীক্ষা চালানো হবে। যাদবপুর থেকে শ্যামবাজার, সল্টলেক থেকে গড়িয়া— সর্বত্র সকাল ৬টা ৪৫ মিনিট থেকে ৭টা ১৫ মিনিট, ৯টা ৪৫ মিনিট থেকে ১০টা ১৫ মিনিট, দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিট থেকে ১টা ১৫ মিনিট, বিকেল ৪টে ৪৫ মিনিট থেকে ৫টা ১৫ মিনিট এবং সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিট থেকে ৮টা ১৫ মিনিট— নির্দিষ্ট এই সময়গুলিতে ভিডিয়োগ্রাফি করবেন সংস্থার সদস্যেরা। তারই ভিত্তিতে শহরের রাস্তায় গড়ে কত সাইকেল চলছে, তা নির্ণয় করা হবে। পরিসংখ্যান হাতে নিয়ে প্রশাসন এবং পুলিশ আধিকারিকদের কাছে রিপোর্ট পেশ করা হবে।
‘কলকাতা সাইকেল সমাজ’ নামে ওই ক্লাবের সদস্য শমীক সরকারের বক্তব্য, তাঁরা দেখতে চান, শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিতে কাজের দিনে কত সংখ্যক সাইকেল চলে। তারই ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিতে সাইকেল আরোহীদের নিরাপত্তার বিষয়ে নানা দাবি উত্থাপন করা হবে প্রশাসনের কাছে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, এ শহরের ৬২টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় এখনও সাইকেল চালানোর অনুমতি নেই। তবে শমীকের দাবি, আগে বিভিন্ন রাস্তায় সাইকেল আরোহীদের যতটা পুলিশি সমস্যার মুখোমুখি হতে হত, ইদানীং তা খানিকটা হলেও কমেছে। যদিও পুলিশের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।
দীর্ঘদিন ধরে ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করছেন আইআইটি খড়্গপুরের অধ্যাপক ভার্গব মৈত্র। শহরে সাইকেলসুমারি শুরু হয়েছে শুনে তিনি বলেন, ‘‘এটি অত্যন্ত জরুরি উদ্যোগ। পরিবেশবান্ধব যান হিসেবে সাইকেলের গুরুত্ব সারা পৃথিবী জুড়েই বেড়েছে।’’ কলকাতায় সাইকেলের সংখ্যা সত্যিই জানা নেই। সেটা জানা গেলে সেই মোতাবেক পরিকাঠামোর উন্নতির কথা ভাবাই যায়।’’ যদিও তাঁর মন্তব্য, ‘‘পরিকাঠামো তৈরি না করে সাইকেলকে ‘প্রোমোট’ করতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। বাড়তে পারে দুর্ঘটনার সংখ্যা।’’
ভার্গববাবুর মতে, পরিসংখ্যান পাওয়া গেলে এক দিকে যেমন পরিকাঠামোর দিকে নজর দেওয়া যাবে, অন্য দিকে মানুষের মধ্যে সাইকেলের মতো দূষণহীন যান বিষয়ে সচেতনতাও গড়ে তোলা যাবে।