আতঙ্কিত: ভাগাড়-কাণ্ডের পরে খাবারের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে প্রিয় চিকেন রোলও। নিজস্ব চিত্র
পুরকর্তারা মুখে বলছেন, কলকাতা শহরের ভাগাড় থেকে মাংস সংগ্রহের কোনও ঘটনা এখনও সামনে আসেনি। অর্থাৎ, এ শহরের মরা পশু এখনও খাবারের প্লেটে পৌঁছয়নি। অথচ, সেই পুরসভারই খাবারের প্যাকেট থেকে হঠাৎ করে উধাও চিকেন, মাটনের নানা পদ। আসলে পুরকর্তারা বাইরে যা-ই বলুন, ভাগাড়ের মাংসের ভয় যে তাঁদের মনেও ঢুকেছে, মাংসের পদ বাতিল হওয়ার তার প্রমাণ। পুরসভার এক আধিকারিক জানান, সবাই এখন নিরামিষটাই পছন্দ করছেন। মাংসের পদ শুনলেই প্যাকেট সরিয়ে রাখছেন অনেকে।
শুক্রবার ছিল পুরসভার মেয়র পরিষদের বৈঠক। সেখানে মেয়র ও মেয়র পারিষদেরা ছাড়াও পুর কমিশনার, স্পেশাল কমিশনার থেকে বিভিন্ন দফতরের ডিজি এবং পদস্থ ইঞ্জিনিয়ারেরা হাজির থাকেন। সাপ্তাহিক ওই বৈঠকে কেক, মিষ্টির পাশাপাশি চিকেন স্যান্ডউইচ বা চিকেন পকোড়া জাতীয় কিছু রাখা হতে। এ বার সেই বৈঠকে চিকেন, মাটনের ‘নো এন্ট্রি’।
তার বদলে ছিল কী?
এক মেয়র পারিষদ জানান, ভেজিটেবল স্যান্ডউইচ, মিষ্টি আর লস্যি। তাতে অনেকেই স্বচ্ছন্দ বোধ করেছেন। এখন চিকেন শুনে আঁতকে উঠছেন পুরবোর্ডের কর্তারাও।
মাংসের পদ নিয়ে আতঙ্কে ভুগছেন পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরাও। প্রতি শুক্রবার ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া-সহ শহরের জনস্বাস্থ্য নিয়ে পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের ঘরে একটি বৈঠক হয়। পুরসভার প্রতিটি বরোর স্বাস্থ্য আধিকারিক-সহ চিকিৎসকেরা হাজির হন সেখানে। বৈঠক শেষে চিকেন রোল খাওয়াটা প্রায় দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কেউ এক জন তা কিনে আনতেন। এ বার বৈঠক শেষে হঠাৎ এক জনের হাতে রোলের প্যাকেট দেখে মুখ চাওয়াচাওয়ি শুরু হয় চিকিৎসকদের মধ্যে। খিদেও পেয়েছে। কিন্তু ভাগাড়ের মাংসের বাজারে চিকেন রোল খেতেও ভয়। যিনি কিনে এনেছেন, তিনি রোল বিতরণ শুরু করতেই এক ডাক্তার বলে ফেললেন, ‘‘না, চিকেন রোল খাব না।’’ তা শুনে আরও কয়েক জন সায় দিয়ে বলতে থাকেন, তাঁরাও খাবেন না। সকলের ভয়ের কারণ বুঝে রোল যিনি বিলি করতে যাচ্ছিলেন, তিনি বলে ফেলেন, ‘‘আরে, ভয়ের কোনও কারণ নেই। চিকেন নয়, এটা এগ রোল।’’ শুনে সবাই আশ্বস্ত হন।