অনেক মায়ের আদর পাচ্ছে পরিত্যক্ত শিশু

গত মঙ্গলবার বিকেলে দমদমের আমবাগান-পদ্মপুকুর এলাকার বাসিন্দারা সদ্যোজাত ওই কন্যাকে উদ্ধার করেন। একটি নির্মীয়মাণ বাড়ির একতলায় বালির গাদায় পড়েছিল সে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৮ ১৬:০৮
Share:

মঙ্গলবার উদ্ধারের পরে (বাঁ দিকে)। আর জি করে চিকিৎসাধীন সেই শিশুকন্যা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

এক জন নয়, কয়েক জন মায়ের যত্নে এখন দমদমের পরিত্যক্ত শিশুকন্যা।

Advertisement

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে মুখে মুখে পৌঁছে গিয়েছিল খবরটা। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গর্ভাবস্থায় অপুষ্টির কারণে মাত্র ১ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজন নিয়ে জন্মেছে সে। জন্মের পরেই নাড়ি পর্যন্ত না কেটে, বালির গাদায় ফেলে যাওয়া হয়েছে তাকে। ফুটফুটে ওই শিশুর এমন পরিস্থিতির কথা শুনে বুক কেঁপে উঠেছিল হাসপাতালে ভর্তি বহু সদ্যোজাতের মায়েরই। নিজেদের সন্তানের পাশাপাশি ওই শিশুটিকেও বুকের দুধ দান করে তাঁরাই এখন পুষ্টি জোগাচ্ছেন।

গত মঙ্গলবার বিকেলে দমদমের আমবাগান-পদ্মপুকুর এলাকার বাসিন্দারা সদ্যোজাত ওই কন্যাকে উদ্ধার করেন। একটি নির্মীয়মাণ বাড়ির একতলায় বালির গাদায় পড়েছিল সে। স্থানীয় বাসিন্দাদের বিবরণ অনুযায়ী, বালির গাদার ফাঁক দিয়ে ওই শিশুর হাতের আঙুল এবং পায়ের গোড়ালির অংশ বেরিয়ে ছিল। তাকে ঘিরেছিল কয়েকটি কুকুর। সেই দৃশ্য চোখে পড়তেই আঁতকে ওঠেন পথচারী এক মহিলা। একই সময়ে সেখানে জড়ো হয়ে যান স্থানীয় আরও অনেকে। তাঁরাই সকলে মিলে ওই শিশুকে বালির গাদা থেকে তুলে স্নান করিয়ে নাড়ি কাটার ব্যবস্থা করেন। এর পরে ভাইস চেয়ারম্যান বরুণ নট্টের তৎপরতায় ওই সদ্যোজাতকে দমদম পুর হাসপাতালে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আর জি করের সিক নিউ বর্ন কেয়ার ইউনিটে শিশুটিকে স্থানান্তরিত করা হয়।

Advertisement

চিকিৎসকেরা যে ওই শিশুকে পরীক্ষা করে জানিয়েছেন, গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায়নি সে— সেই কথা মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালে। অনাথ ওই শিশুর কথা শুনে চিন্তিত হয়ে পড়েন অনেকেই। জন্মের পরে প্রতিটি শিশুকেই মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো জরুরি। এই কারণেই প্রসূতি বিভাগে চিকিৎসাধীন মায়েদের কাছে আর্জি জানানো হয়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, অনেক মহিলাই স্বেচ্ছায় নিজেদের বুকের দুধ দান করেন। সেই দুধ সংগ্রহ করে তা নলের সাহায্যে সদ্যোজাতকে দেওয়া হয়।

ওই শিশুর কথা জেনে বুধবারই উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবারও স্বাস্থ্যভবন থেকে তার খোঁজ নেওয়া হয়। দমদম পুর হাসাপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, শিশুর ডান পায়ের গোড়ালির পিছনে আঁচড়ের দাগ ছিল। আর জি কর সূত্রের খবর, সেটি কুকুরের আঁচড়। যার প্রেক্ষিতে সদ্যোজাতকে জলাতঙ্কের প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, জন্ডিসেও আক্রান্ত হয়েছে সদ্যোজাত। তারও চিকিৎসা চলছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, সদ্যোজাতের বেশ কিছু পরীক্ষা করানো হয়েছে। সেগুলির রিপোর্টের অপেক্ষায় চিকিৎসকেরা। আপাতত সদ্যোজাতকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। আর জি করের অধ্যক্ষ শুদ্ধোদন বটব্যাল বলেন, ‘‘শিশুটি আপাতত স্থিতিশীল হলেও বিপদ পুরোপুরি কাটেনি। সব রকম ভাবে চেষ্টা করছি। দেখা যাক কী হয়!’’

ভরদুপুরে জনবসতি এলাকার মধ্যে ও ভাবে কে সদ্যোজাতকে ফেলে গেল, তার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। এ দিন ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এক কর্তা জানান, ইতিমধ্যে পুলিশ কুকুর নিয়ে ওই এলাকায় তল্লাশি চালানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন